ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টয়লেটের ভোগান্তি দূর করতে কাজ চলছে ॥ ডিএমপি

রাজধানীতে টয়লেট ভোগান্তিতে নারী ট্রাফিক পুলিশরা

প্রকাশিত: ১০:০৩, ৩০ মার্চ ২০১৯

  রাজধানীতে টয়লেট ভোগান্তিতে নারী  ট্রাফিক পুলিশরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রোদ, বৃষ্টি, ঝড় মাথায় নিয়ে রাস্তায় প্রতি শিফটে টানা আট ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দুই শিফটে রাজধানীতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুরুষ পুলিশের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করেন নারী ট্রাফিক পুলিশরাও। তবে দায়িত্ব পালনকালে প্রায়ই টয়লেট সমস্যায় পড়েন তারা। জরুরী ভিত্তিতে এ সমস্যার উত্তরণ চান তারা। নারী ট্রাফিক পুলিশদের এ সমস্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। তারা বলছে, টয়লেট সমস্যা দূর করতে কাজ চলছে। নারী ট্রাফিক পুলিশরা বলছেন, টানা আট ঘণ্টা রাস্তায় ডিউটি করতে হয়। এ সময় কম করে তিন বার টয়লেটে যেতে হয়। কিন্তু রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে নিয়োজিত পুলিশের জন্য টয়লেটের কোন সুব্যবস্থা নেই। সরকারী অফিস, মার্কেট বা কারও বাড়িতে গিয়ে টয়লেট ব্যবহার করতে হয়। রাতের বেলায় এ সুযোগ থাকে না। কারণ, বিকেল চারটার পর সরকারী অফিস, রাত আটটার পর মার্কেটগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তখন আরও বেশি সমস্যায় পড়েন নারী ট্রাফিক পুলিশরা। আবার কেউ কেউ লজ্জার কারণে এসব টয়লেট ব্যবহার করেন না। তারা টানা আট ঘণ্টা ডিউটি শেষে বাসায় ফিরে গিয়ে টয়লেট ব্যবহার করেন। চিকিৎসকরা বলছেন, একজন সুস্থ মানুষ আট ঘণ্টায় কমপক্ষে দুই থেকে তিন বার টয়লেট ব্যবহার করেন। আর অসুস্থ হলে আরও বেশি টয়লেটে যেতে পারেন। শীতকালের তুলনায় গরমকালে এটা আরও বেশি হতে পারে। বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘সুস্থ ব্যক্তির জন্য একরকম, আর অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে আরেক রকমের বাথরুম ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে। তবে একজন সুস্থ মানুষ আট ঘণ্টায় সাধারণত দুই থেকে তিন বার বাথরুম ব্যবহার করেন।’ রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের মোড়ে কর্তব্যরত এক নারী সার্জেন্টের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, রাস্তায় দায়িত্ব পালনের সময় পাশের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ভবনের টয়লেট ব্যবহার করতে হয় তাদের। সন্ধ্যার পরে এই সরকারী অফিসটি বন্ধ থাকে। তখন টয়লেটের সমস্যায় পড়েন তারা। তিনি আরও জানান, জরুরী ভিত্তিতে এই সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার। তিনি বলেন, ‘এর আগে রমনা থানা ও রূপসী বাংলা হোটেলের মোড়ে ডিউটি করেছি। তখন রমনা থানা ও ডিবি অফিসের টয়লেট ব্যবহার করতাম। প্রায় সময়ই এসব টয়লেট ব্যবহার করতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। কারণ, টয়লেটের চাবি যার কাছে, অনেক সময় তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রথম দিকে তিন-চার মাস লজ্জায় টয়লেট ব্যবহার না করেই অনেক কষ্টে ডিউটি করেছি।’ দায়িত্ব পালনরত এক ট্রাফিক কনস্টেবল বলেন, ‘আমরা এখানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ভবনের টয়লেট ব্যবহার করি। শুক্র ও শনিবারসহ অনেক সময় ভবনটি বন্ধ থাকে। তখন আমাদের অনেক অসুবিধা হয়। কখনও সিকিউরিটি গার্ডদের সহযোগিতা নিয়ে টয়লেট ব্যবহার করতে হয়। ট্রাফিক পুলিশের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা থাকলে ভাল হতো। দায়িত্ব পালনের জন্য সুবিধা হতো।’ রাজধানীর কলেজ গেট মোড়ে কর্তব্যরত নারী সার্জেন্ট বলেন, ‘ প্রয়োজনে পাশের মার্কেটের টয়লেট ব্যবহার করি। কিন্তু অনেক সময় সমস্যায় পড়তে হয়। টয়লেট সমস্যার বিষয়টি আমাদের মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে। স্যাররা বলেছেন, তারা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন।’ ট্রাফিক পুলিশের জন্য নির্ধারিত টয়লেট থাকা খুবই দরকার। নারী ট্রাফিক পুলিশরা আরও বলেছেন, মাসের নির্ধারিত কয়েকটি দিন ঋতু চলাকালে মার্কেট কিংবা অন্য কোন অফিসের টয়লেট ব্যবহার করতে গিয়ে খুবই লজ্জায় পড়তে হয়। এসব কারণে নারী পুলিশদের জন্য অবশ্যই নির্ধারিত টয়লেট থাকা দরকার বলে মনে করেন তারা। টয়লেট সমস্যার কারণে পুরুষ সহকর্মীর মতো সব জায়গায় ডিউটি করতে পারছেন না নারী ট্রাফিক পুলিশরা। পুলিশ বুথ বা ডিউটি স্থানের আশপাশে টয়লেট ব্যবস্থা থাকলে নারী ট্রাফিক পুলিশরা রাজধানীর যে কোন জায়গায় কাজ করতে পারতেন। রাজধানীর হাতিরঝিলে কর্তব্যরত নারী সার্জেন্ট বলেন, ‘হাতিরঝিলে পুলিশের নিজস্ব একটি টয়লেট রয়েছে। এ কারণে এখানে কোন সমস্যা হয় না। তবে আমি চাই, সব জায়গাতে টয়লেটের ব্যবস্থা করা হোক। টয়লেটের সুবিধা থাকলে আমরা পুরুষ সহকর্মীর মতো সব জায়গায় ডিউটি করতে পারতাম। তখন আর নির্দিষ্ট জায়গায় দায়িত্ব পালন করতে হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের কাজ দিয়ে প্রমাণ করতে হয়- আমরাও পারি। সব জায়গায়তে কাজ করার মানসিকতা নিয়ে আমরা এ পেশায় এসেছি। নারী সার্জেন্ট দেখে অনেকেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু এসব আমরা পাত্তা দেই না। আমরা আমাদের কাজ করি।’ ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘এ সমস্যাটি আমরাও উপলব্ধি করছি। টয়লেট সমস্যা দূর করার কাজ চলছে।’ পুলিশ বাহিনীতে নারী সার্জেন্ট নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৪ সালে। সর্বশেষ সার্জেন্ট পদে নিয়োগের পরীক্ষায় অংশ নেন এক হাজার ৮৩৭ জন । এর মধ্যে নারী প্রার্থী ছিলেন ৪৬ জন। সব প্রক্রিয়া শেষে নিয়োগ পান ২৮ জন। তারা রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে ২২ জন নিয়োগ পেয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশে। অন্যদিকে, হাইওয়ে পুলিশে দুজন, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে দু’জন এবং খুলনা মেট্রোতে দুজন নারী দায়িত্ব পালন করছেন
×