ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশবোধের উৎসব

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ৩০ মার্চ ২০১৯

  দেশবোধের উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একটি শুরু কত সুন্দর হতে পারে। বাংলাদেশের যেদিন জন্ম হলো, সেই ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিক যাত্রা করল একটি টেলিভিশন চ্যানেল। নাম-দেশ টিভি। এমন নামকরণ থেকে একটি বোধের পরিচয় পাওয়া যায়। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাওয়া বাংলাদেশকে তুলে ধরার লক্ষ্যে কাজ করছে এই টেলিভিশন। এভাবে ১০ বছর পূর্ণ করল। পা রাখলো ১১তে। প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে উৎসবে মেতেছিল দেশটিভি পরিবার। এই পরিবারের প্রতি আলাদা প্রেম অনুভব করেন শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির লোকেরা। রাজনীতির লোকেরা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই ফুল হাতে টেলিভিশনে আসতে থাকেন তারা। বিজয়ের দিবসে চারদিকেই উৎসব অনুষ্ঠান। এরপরও দেশ টিভিতে একবার ঢুঁ না মারলেই নয়। দিনের প্রথমভাগটা ‘হেভিওয়েটদের’ জন্যই ছিল বলা যায়। বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উজ্জ্বল উপস্থিতি চোখে পড়েছে। একটি গল্প আড্ডা শেষ হচ্ছিল। শুরু হচ্ছিল অন্যটি। তারও আগে মূল আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। কর্তৃপক্ষের হয়ে অতিথিদের স্বাগত জানান আসাদুজ্জামান নূর, আরিফ হাসান, সুকান্ত গুপ্ত অলক, সাদিকুর রহমান পরাগ প্রমুখ। বিকেলে চাপ কিছুটা কমলে কার্যালয়ে গিয়ে পাওয়া যায় শুধু সাদিকুর রহমান পরাগকে। ফুল নিতে নিতে ক্লান্ত, না? জানতে চাইলে হেসে ফেলেন পরাগ। বলেন, না। না। এই ভালবাসাই তো এগিয়ে যাওয়ার সাহস যোগায়। গল্প করতে করতেই অনেকে আবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে দেশ টিভি নিয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। এভাবে চলতে থাকে। তবে দিনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আয়োজনটি ছিল কার্যালয়ের বাইরে। রাতে বনানীর একটি মিলনায়তনে লাইভ সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। একটু আলাদা ধরনের এ্যারেঞ্জমেন্ট। মঞ্চে ছিলেন সুবীর নন্দী। খ্যাতিমান শিল্পীর দুই পাশে অনুজ বাদশাহ বুলবুল ও দিনাত জাহান মুন্নী। ভূমিকা পর্বে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, স্বাধীনতা দিবস ও দেশ টিভির জন্মদিন উপলক্ষে আমরা এই বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। মূল পরিকল্পনায় ছিল বাংলা সঙ্গীতের দুই চিরসবুজ কণ্ঠ শাহনাজ রহমতুল্লাহ ও সুবীর নন্দী পাশাপাশি বসবেন। তাদের সামনে তাদের গাওয়া কালজয়ী গানগুলো গেয়ে শোনাবেন এই প্রজন্মের দুই শিল্পী। বাকি কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন নূর। বলেন, দীর্ঘদিন গানের বাইরে থাকলেও আমার অনুরোধে এ অনুষ্ঠানে থাকতে রাজি হয়েছিলেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ। কিন্তু সব যখন প্রস্তুত তখন আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে যান তিনি। এ অবস্থায় আমরা অনুষ্ঠানটি তাকে উৎসর্গ করছি। শাহনাজ রহমতউল্লা না থাকলেও মুন্নী তার গান করবেন বলে জানান তিনি। আর বাদশা বুলবুল শোনবেন সুবীর নন্দীর গান। কথা মতো শুরু হয় অনুষ্ঠান। দেশ টিভিতে লাইভ হওয়ায় সারাদেশের দর্শক দেখছিলেন। আর মঞ্চের সামনে বসেছিলেন দেশের বিরাট বিরাট সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার ও শিল্পীরা। সঙ্গীতবোদ্ধাদের সামনে বসে গাওয়ার আগে কয়েক দফা ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেয়ার আবেদন জানালেন শিল্পীরা। বিশিষ্টজনেরাও আশ্বস্ত করলেন। উৎসাহ দিলেন। তাতেই জমে উঠলো অনুষ্ঠান। শাহনাজ রহমতুল্লাহর গান করতে গিয়ে একটু পরে অশ্রুসজল হয়ে পড়ছিলেন মুন্নী। শ্রোতাও গুনগুন করে গাইছিলেন। আহা, কী গান! সুবীর নন্দীর গানগুলোও চিরকালের। সেইসব গান গাইলেন বাদশাহ বুলবুল। বুলবুলকে এভাবে অনেকে দেখেননি আগে। এদিন দেখে মুগ্ধ হয়েছেন নিশ্চয়ই। সুবীর নন্দী নিজেও তার সঙ্গে একটু আধটু গাইছিলেন। চেনা গানের সুর নিয়ে খেলছিলেন। দুই প্রজন্মের শিল্পীর এই যে মিলে মিশে একাকার হয়ে যাওয়া, দেখার মতো ছিল। গানের পাশাপাশি দর্শক সারি থেকে কথা বলেন, শেখ সাদী খান, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, খুরশীদ আলমের মতো নামী ব্যক্তিত্বরা। বাংলা গান কি করে এত উৎকর্ষ অর্জন করেছিল তাদের স্মৃতিচারণ থেকে সেটি জানা যায়। বর্তমান সময়ের চর্চা নিয়ে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেন তারা। এভাবে চলতে থাকে। শুরুর মতো শেষটাও অসাধারণ ছিল। স্বাধীনতা দিবসে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটি গাইতে গাইতে শেষ করা হয় অনুষ্ঠান এবং এই গানের গীতিকার তখন মঞ্চের সামনে। এভাব অদ্ভুত আবেগঘন হয়ে ওঠে দেশ টিভির শেষ মুহূর্তের আয়োজন। এমন আয়োজন আরও হতে পারে।
×