ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আইন তৈরির আহ্বান ॥ জঙ্গী অর্থায়ন বন্ধে

প্রকাশিত: ০৯:২০, ৩০ মার্চ ২০১৯

 আইন তৈরির আহ্বান ॥ জঙ্গী অর্থায়ন বন্ধে

সন্ত্রাসীদের হাতে যাতে অর্থ না পৌঁছে এ জন্য ব্যবস্থা নিতে সদস্য দেশগুলোর প্রতি কড়া বার্তা দিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। শুধু তাই নয়, দেশগুলোকে আইন করে অর্থ ও সন্ত্রাস বন্ধ করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের এই প্রস্তাবকে সন্ত্রাস ঠেকাতে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে ভাবা হচ্ছে। খবর এনডিটিভি অনলাইনের। ফ্রান্সের তৈরি করা ওই প্রস্তাব বৃহস্পতিবার সর্বসম্মতভাবে পাস করেছে নিরাপত্তা পরিষদ। প্রস্তাবে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদের মতো গুরুতর অপরাধ যাতে আর সংঘটিত না হয়, এ জন্য আইন আরও কঠোর করতে হবে। আর জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের যারা অর্থের যোগান দেয় তাদের জরুরী ভিত্তিতে খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি এই খাতে কোন ব্যক্তি আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে কিনা, তা জানতে আলাদা প্রতিষ্ঠান গঠনের কথাও বলা হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, সন্ত্রাস রুখতে এই ধরনের প্রস্তাব প্রথমবারের মতো নেয়া হলো। জাতিসংঘের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী প্রধান ভ্লাদিমির ভরোনকোভ বলেন, অত্যন্ত কঠিন সময়ে এই প্রস্তাব পাস হলো। কারণ, সন্ত্রসী গ্রুপগুলো এখন প্রতিনিয়ত বৈধ ও অবৈধ উপায়ে অর্থ সহায়তা পাচ্ছে। তাই সন্ত্রাস রুখতে একটি সুর্নিদিষ্ট ফলাফলের জন্য আমাদের সমন্বিত ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, ২৪৬২ নামক এই প্রস্তাব সন্ত্রাসীদের অর্থের যোগান বন্ধে কাজ করবে। ভ্লাদিমির ভরোনকোভ সন্ত্রাসীদের অর্থের যোগান বন্ধে তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেন। এর মধ্যে দেশসমূহের মধ্যে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বিষয়ক গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান। দেশগুলোর সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে একযোগে কাজ করা ও সন্ত্রাসবিরোধী সচেতনতা তৈরির ওপর জোর দেন তিনি। এছাড়া জঙ্গীবাদ যে সমাজ ও দেশের জন্য সমস্যা তা মানুষের মধ্যে পৌঁছে দিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন ভ্লাদিমির ভরোনকোভ। নিরাপত্তা পরিষদের ফিন্যান্সিয়াল এ্যাকশন টাস্কফোর্সের প্রধান মারশাল বিলিংসলিয়া ও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অর্থনীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মারকি বুকু বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। মারশাল বিলিংসলিয়া নিরাপত্তা পরিষদের এই উদ্যোগ গ্রহণের জন্য পরিষদকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, জঙ্গীরা অনেক সময় অপহরণ এবং অন্যান্যভাবে অর্থের যোগান সংগ্রহ করে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ দেশ সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত অর্থের যোগান বন্ধের জন্য কার্যকরভাবে কোন কাজ করে না। সন্ত্রাসীরা অনেক সময় অবকাঠামো তৈরির ব্যবসা, মাদক চোরাচালান এমনকি গাড়ি ব্যবসার আড়ালে অর্থের যোগান পেয়ে থাকে। কেনিয়ার নাইরোবি থেকে বৃহস্পতিবার ভিডিও লিংকের সাহায্যে নিরাপত্তা পরিষদে বক্তব্য রাখেন মারকি বুকু। তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের বিস্তার রোধে নিরাপত্তা পরিষদের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কারণ, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নিরাপত্তা পরিষদ এই উদ্যোগ নিল। এই উদ্যোগ সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ভূমিকা রাখবে। নিরাপত্তা পরিষদের এই উদ্যোগকে অত্যন্ত সময়োপযোগী আখ্যা দিয়ে মারকি বুকু আরও বলেন, বর্তমান সময়ে মানি লন্ডারিং ঠেকানো অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। তাছাড়া সমাজ থেকে দারিদ্র্যতা ও অসমতা দূর করতে হবে। ভারত বরাবর বলে আসছে ইসলামাবাদ জঙ্গীদের নানাভাবে সহায়তা করে। পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার করে ভারতে সন্ত্রাস চালায় বিভিন্ন সংগঠন। তাই নিরাপত্তা পরিষদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে নয়াদিল্লী। জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সৈয়দ আকবর উদ্দিন বলেন, জাতিসংঘ মনে করে সন্ত্রাস দমনে ভারতের সদিচ্ছা আছে। তাই জাতিসংঘ সবদিক থেকে বিবেচনা করেই এই প্রস্তাব পাস করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, যে সমস্ত দেশ সন্ত্রাস বৃদ্ধির জন্য ক্ষমা চায় তারা ঘুরপথে এখনও সন্ত্রাসবাদীদের সাহায্য করছে। জঙ্গী সংগঠন জইশ-ই- মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজাহারকে গ্লোবাল টেররিস্ট ঘোষণা করতে চায় আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্স। জাতিসংঘও তাই চেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত চীনের ভেটোয় তা করা যায়নি। চীনের এই পদক্ষেপের দু’সপ্তাহের মধ্যে নতুন কৌশল নেয় ট্রাম্প প্রশাসন। ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে অপর একটি প্রস্তাব পাস করায় ওয়াশিংটন। সে প্রস্তাব অনুযায়ী কোথাও যাওয়ার ক্ষেত্রে মাসুদকে সমস্যায় পড়তে হবে। বাজেয়াফত হবে তার সম্পত্তি। এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে ব্রিটেন থেকে শুরু করে ফ্রান্সের মতো দেশ। ফ্রান্স অবশ্য আগেই নিজের দেশে মাসুদের সম্পত্তি বাজেয়াফত করার কাজ শুরু করে।
×