ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিউজিল্যান্ডে জাতীয় স্মরণসভা, নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা

প্রকাশিত: ০৯:২০, ৩০ মার্চ ২০১৯

নিউজিল্যান্ডে জাতীয় স্মরণসভা, নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে শুক্রবার এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানটি দেশব্যাপী সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। ১৫ মার্চ শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী জঙ্গীর হামলায় নিহত ৫০জনকে সম্মান জানাতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিবিসি। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন। মুসলমান নেতারা ও হামলায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরাও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। ব্রিটিশ গায়ক ক্যাট স্টিভেন্স অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন। তিনি ১৯৭০ সালে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। শহরের হ্যাগলি পার্কে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ২০ হাজারের বেশি মানুষ যোগ দেন। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে এটি সম্পন্ন হয়। আল-নূর মসজিদের কাছের ওই জনাকীর্ণ পার্কে বক্তব্য দানকালে আরডার্ন বলেন, এই ঘটনার জন্য নিউজিল্যান্ডের দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমরা এমন একটি জাতিতে পরিণত হতে পারি যাতে অন্যরা নিরাপদ বোধ করতে পারেন। আরডার্ন বর্ণনা করেছেন, কিভাবে সারাবিশ্ব বাড়তে থাকা চরমপন্থী চক্রের মধ্যে আটকা পড়েছে। ঐতিহ্যবাহী মাওরি ক্লোক পোশাক পরে আরডার্ন স্মরণসভায় যোগ দেন। সে অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। উগ্র-ডানপন্থী বন্দুকধারীর হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ফরিদ আহমেদ শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি বন্দুকধারীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। ফরিদের স্ত্রী হুসনে আরা বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। স্মরণসভায় তিনি বলেন, আমি এমন কোন মন চাই না যেটি একটি আগ্নেয়গিরির মতো উষ্ণ। আমি এমন একটি হৃদয় চাই যা প্রেম ও যত্নের দ্বারা পূর্ণ এবং ক্ষমাশীল হবে। ব্রিটিশ গায়ক ক্যাট স্টিভেন্স তার পিস ট্রেন এ্যান্ড ডোন বি শে গেয়ে শোনান। ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হবার পর ক্যাটের নাম হয় ইউসুফ ইসলাম। তিনি বলেন, যখন ভাল মানুষরা চুপ করে থাকেন তখন খারাপ কিছু বাড়তে থাকে। আমরা এই দেশে বিপরীত দিকটি দেখতে পাচ্ছি। মুসলিম কাউন্সিল অব ক্যান্টারবুরির প্রেসিডেন্ট শাগাফ খান হামলার প্রতি নিউজিল্যান্ডের প্রতিক্রিয়ার প্রশংসা করেন এবং বলেন, আমি পুরোপুরি আশাবাদী। তিনি উপস্থিত জনতার প্রতি অনুরোধ জানান, এই ঘৃণা থেকে কত ভালবাসা পাওয়া গেছে? এই অন্ধকারের মধ্যে কতটা আলো ছড়িয়ে পড়েছে? ক্রাইস্টচার্চের মেয়র লিয়েন ডালজিয়েল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে আরও দায়বদ্ধতার আহ্বান জানান। আমাদের প্রত্যেকেরই দায়বদ্ধতা রয়েছে নিজেদের সম্পর্কে কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করারÑ আমরা বর্ণবাদী বা ঘৃণা ছড়ায় এমন মতামতকে প্রশ্রয় দেয় সেসব লোককে কতটা স্বাচ্ছন্দ্য মনে করি। শহরের মুসলমান সম্প্রদায় নিহত প্রত্যেকের নাম ওই অনুষ্ঠানে পড়ে শোনায়। নিহতদের মধ্যে সারাবিশ্বের নারী, পুুরুষ ও শিশুরা ছিলেন। সবচেয়ে কম বয়সী ছিল তিন বছর বয়সের একটি শিশু। এ মাসের মাঝামাঝিতে ক্রাইস্টচার্চের আল-নূর মসজিদে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী জঙ্গী ব্রেন্ডন ট্যারেন্ট (২৮) হামলা চালিয়ে ৫০ মুসল্লিকে হত্যা করেন। ওই হামলাকারী ফেসবুকে তার সেই হামলার ঘটনাটি সরাসরি সম্প্রচার করতে থাকেন। গুলিবর্ষণের ঘটনা বিশ্বব্যাপী সরাসরি সম্প্রচার ও শেয়ার করা হচ্ছিল যতক্ষণ পর্যন্ত না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওই ফুটেজ সরিয়ে না ফেলেছে ততক্ষণ পর্যন্ত। অনেকেই ভাল জীবনের আশায় নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমায়। কিছু শরণার্থী হিসেবে সেখানে যায়। আরডার্ন হামলার ঘটনাকে জাতির সবচেয়ে অন্ধকার দিন হিসেবে অভিহিত করেছেন। অস্ট্রেলিয়ান ট্যারেন্ট নিজেকে স্বঘোষিত শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী বলে ঘোষণা করেছেন। তার বিরুদ্ধে এখন আদালতে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ করা হবে। নির্বিচারে গুলির ঘটনার পর আরডার্ন সব ধরনের সয়ংক্রিয় অস্ত্র ও এ্যাসল্ট রাইফেল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি জানিয়েছেন, ব্রিটিশ প্রিন্স উইলিয়াম আগামী মাসে নিউজিল্যান্ড সফর করবেন। সে সময় তিনি হামলায় বেঁচে যাওয়াদের সঙ্গে দেখা করবেন।
×