ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

অষ্টগ্রামে বধ্যভূমি দখল করে বালু ব্যবসা !

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ৩০ মার্চ ২০১৯

 অষ্টগ্রামে বধ্যভূমি  দখল করে  বালু ব্যবসা !

নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ, ২৯ মার্চ ॥ স্বাধীনতার ৪৮ বছর অতিবাহিত হলেও জেলার হাওড় অধ্যুষিত অষ্টগ্রামের দুটি বধ্যভূমি সংরক্ষণ হয়নি, স্থাপন করা হয়নি কোন নামফলকও। উপজেলার দেওঘর পাওনেরকান্দি ও পূর্ব অষ্টগ্রামের ইকুরদিয়া নামক বধ্যভূমি দুটির পাশে আজও স্বজনহারা পরিবারের লোকজন কখনও কাঁদেন, কখনও নীরবতা পালন করেন। বর্তমান সরকারের আমলে হাওড়াঞ্চলে অনেক উন্নয়ন কর্মকা- হলেও বধ্যভূমি দুটি সংরক্ষণের উদ্যোগ না নেয়ায় মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে চরম হতাশা আর ক্ষোভ বিরাজ করছে। জানা গেছে, পাওনেরকান্দি বধ্যভূমিটি অষ্টগ্রাম থানার মূল বধ্যভূমি ছিল। পাক হানাদার, আলবদর ও রাজাকারেরা অষ্টগ্রাম থানা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার শত শত নারী-পুরুষ ধরে এনে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করত। কিন্তু বর্তমানে এ বধ্যভূমিটি স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির দখলে রয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী ও রাজাকারেরা পাওনেরকান্দি বধ্যভূমিতে ২০-২৫ জনকে গুলি আর বেয়নেটের আঘাতে হত্যা করে। এর মধ্যে কয়েকজন ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। স্বাধীনতার পর এই বধ্যভূমিতে শত শত মানুষের হাড়, কঙ্কাল এবং মাথার খুলি পড়ে থাকতে দেখেছেন এলাকাবাসী। এদিকে উপজেলার জেলে অধ্যুষিত ইকরদিয়া গ্রামে ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর শান্তি কমিটির নেতৃত্বে হানাদার বাহিনী ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা ভোরবেলায় ইকরদিয়া গ্রামের ঘুমন্ত মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে দক্ষিণপাড়ায় লুটপাট করে। তারা দুটি ধনাঢ্য বাড়িসহ সব গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে লুটপাট করে। নির্যাতন চালিয়ে ৪৯ জন নারী-পুরুষকে আটক করে একটি স্থানে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। স্থানীয় শহীদ পরিবারের সন্তান হরিমোহন দাস জানান, স্বাধীনতার এত বছর পেরিয়ে গেলেও সরকারীভাবে কোন শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ অথবা নামফলকও স্থাপন করা হয়নি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুধুমাত্র জাতীয় দিবস এলেই বধ্যভূমিতে মোমবাতি জ্বালায় প্রশাসন। এছাড়া আর কোন কিছু হয় না এবং বধ্যভূমিতে বালুর ব্যবসা খুবই লজ্জাজনক। সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী আফতাব উদ্দিন জানান, বধ্যভূমি দুটি সংরক্ষণ না হওয়ায় স্বাধীনতার প্রতিশক্তিরাই পাওনেরকান্দি বধ্যভূমিতে বালুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন জানান, পাওনেরকান্দি বধ্যভূমির জায়গাটি মালিকানাধীন। সেখানে সরকারী জায়গা না থাকায় বধ্যভূমির জন্য প্রস্তাব পাঠানো যাচ্ছে না। তবে অধিগ্রহণের মাধ্যমে উপজেলার দুটি বধ্যভূমি সরকারীভাবে ক্রয় করার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হবে। বধ্যভূমিতে বালুর ব্যবসা সম্পর্কে তিনি বলেন, বধ্যভূমিতে নদীর তীরবর্তীতে সরকারী কিছু খাস জমি রয়েছে তবে মালিকানাধীন হওয়ায় একটু সমস্যা রয়েছে।
×