ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভিন্ন পেশায় বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ

প্রকাশিত: ১০:০৮, ২৯ মার্চ ২০১৯

 ভিন্ন পেশায় বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ

নারীরা সংসারে কাজ করবে, আগের সেই চিরাচরিত ধারণা এখন দ্রুত পাল্ট যাচ্ছে। সংসারবহির্ভূত অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীর অংশগ্রহণ আজ আর নজিরবিহীন নয়। এক সময় যেসব কাজ শুধু পুরুষদের জন্যই নির্ধারিত ছিল, সেসব কাজে এখন নারীরাও অংশগ্রহণ করছে। তিন দশক আগে কল্পনা করা না গেলেও এখন বিচারক, সচিব, সেনা কর্মকর্তা, প্যারাট্রুপার, বিজিবির সৈনিক, পুলিশের এসপি, ট্রাফিক সার্জেন্টসহ সব ক্ষেত্রেই নারীর পদচারণা রয়েছে। লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে প্রশংসায় পঞ্চমুখ এখন সারা বিশ্ব। সরকার নারীর আর্থিক ক্ষমতায়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং কর্মক্ষেত্রে নানাভাবে নারীর অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করছে। এসব উদ্যোগের কারণেই নারীরা চারদেয়ালের গন্ডি পেরিয়ে এখন প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক নানা কর্মক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে একসময়কার দরিদ্র পরিবারগুলোতেও আর্থিক সচ্ছলতার ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে। জনপ্রশাসন ও সরকারী চাকরিতে নারী প্রশাসন ক্যাডার ও সরকারী বিভিন্ন পদে দিন দিন বাড়ছে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে নারী বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন প্রশাসনের গতিও বেড়েছে। হয়ত দেখা যাবে, একটা পর্যায়ে চাকরির ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ সমান হবে। সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত, বর্তমানে প্রশাসনে সিনিয়র সচিব, সচিব ও ভারপ্রাপ্ত সচিব রয়েছেন ৭৮ জন। এর মধ্যে নারী কর্মকর্তা রয়েছেন ৬ জন। নারীদের হার প্রায় ৮ শতাংশ। মোট ৫২৬ জন অতিরিক্ত সচিবের মধ্যে নারী অতিরিক্ত সচিব রয়েছেন ৮১ জন, ৭৩৮ জন যুগ্ম-সচিবের মধ্যে নারী রয়েছেন ৮৭ জন এবং এক হাজার ৮৪০ জন উপসচিবের মধ্যে নারী উপসচিব রয়েছেন ৩৬১ জন। বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের এক তথ্যে দেখা গেছে, নারী বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে ২১ শতাংশ, পুলিশ ক্যাডারে ৯ শতাংশ, পররাষ্ট্র ক্যাডারে ২৫ শতাংশ, স্বাস্থ্য ক্যাডারে ১৭ শতাংশ, শিক্ষা ক্যাডারে ২৭ শতাংশ, পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারে ১৩ শতাংশ, কর ক্যাডারে ১১ দশমিক ২ শতাংশ, অডিট ক্যাডারে ২০ শতাংশ, পরিসংখ্যান ক্যাডারে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীতে নারী সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত, বাংলাদেশের সামরিক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে বর্তমানে নারীর সংখ্যা ১৭ হাজার ৩৪০ জন। সেনাবাহিনীতে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা চিকিৎসকসহ প্রায় ৯০০। বিমানবাহিনীতে নারী কর্মকর্তা ১৭৮ জন। নৌবাহিনীতে নারী কর্মকর্তা মোট ১৮৩ জন। তাঁদের মধ্যে সর্বোচ্চ কমা-ার পদে আছেন ১৩ জন। আর বিভিন্ন পদে নারী নাবিক রয়েছেন ৬০ জন। বিজিবিতে এরই মধ্যে যুক্ত হয়েছেন ৪৩৮ জন নারী, যাঁরা কাজ করছেন আইসিপি, বিজিবি হাসপাতাল ও চেকপোস্টগুলোতে। পুলিশ বাহিনীতে নারীর সংখ্যা ১৩ হাজার ১৭৭ জন। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে কর্মরত ১২৫ জন। আধাসামরিক বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ২০১৫ সাল থেকে নারী সৈনিক নিয়োগ দিয়ে আসছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষা এবং বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ আনসারের ৮১৬ সদস্যের দুটি নারী ব্যাটালিয়নও কাজ করে যাচ্ছে। এই বাহিনীতে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা ২৬ জন। এর মধ্যে পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছেন পাঁচজন। তৈরি পোশাকশিল্পে নারী বর্তমানে গার্মেন্টস শিল্পে নারী শ্রমিকের সংখ্যাও কম নয়। এখানে কাজ করতে হলে বেশি শিক্ষার প্রয়োজন হয় না। অর্ধশিক্ষিত বা অশিক্ষিত নারীরা এই সেক্টরে অনায়াসেই কাজ করার সুযোগ পান। আমাদের দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগই নারী শ্রমিক। আইসিটি বা তথ্যপ্রযুক্তিতে নারী আইসিটি বা তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও সমান তালে এগিয়ে চলেছেন। কিছু দিন আগেও এ খাতের শিক্ষা, সেবা ও ব্যবসায় যারা নিয়োজিত ছিলেন, তাদের বেশিরভাগই ছিলেন পুরুষ। কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। ধীরে ধীরে চিত্র পাল্টেছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের নারীরা এগিয়ে এসেছেন। তারা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ পেলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজের ঘরে বসে আউট সোর্সিং ও ফ্রিলানসিং করে বৈদেশিক মুদ্রাসহ বিপুল অর্থ আয় করছেন। স্বল্পশিক্ষিত নারীদের সামান্য প্রশিক্ষণ দিতে পারলে ভাল একটি সফলতা পাওয়া যাবে। এছাড়াও চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্যে নারী উদ্যোক্তা, কৃষি, এনজিও, গণমাধ্যম এবং কর্পোরেট শাখায় নারীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
×