ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সমুদ্রপৃষ্ঠের ভিন্নধর্মী প্রাণী

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ২৯ মার্চ ২০১৯

সমুদ্রপৃষ্ঠের ভিন্নধর্মী প্রাণী

সাগর-মহাসাগর বা সমুদ্র তলদেশগুলো যেন প্রকৃতির এক রহস্য। সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় ৯৯ ভাগ তথ্য এখনও আমাদের অজানাই রয়ে গেছে। সেখানে বসবাসরত অসংখ্য ভিন্নধর্মী ও রহস্যময় প্রাণিকুলও আমাদের কাছে অপরিচিত। সমুদ্রপৃষ্ঠের এমনই কিছু ভিন্নধর্মী অজানা প্রাণীদের নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন। লিখেছেন- মুনতাসির সিয়াম ব্ল্যাক স্যালোয়ার সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় ৭০০-২৭৪৫ মিটার গভীরে ব্ল্যাক স্যালোয়ারের বসবাস। এদের দৈর্ঘ্য ৯.৮ ইঞ্চির মতো। তবে এরা নিজেদের ভরের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি ভরবিশিষ্ট এবং নিজেদের দেহের আকৃতির তুলনায় কয়েকগুণ বেশি বড় বা লম্বা প্রাণীকে চাইলেই গিলে খেতে সক্ষম। ২০০৭ সালের দিকে কেইমেন দ্বীপের উপকূলে খোঁজ পাওয়া ৭.৫ ইঞ্চি আকৃতির এক ব্ল্যাক স্যালোয়ারের পেট থেকে একটি Snake Mackerel মাছ পাওয়া যায়, যার দৈর্ঘ্য ছিল ৩৪ ইঞ্চির মতো। অর্থাৎ নিজের দেহের চাইতেও প্রায় সাড়ে ৪ গুণ লম্বা প্রাণীকে গিলে ফেলেছিল স্যালোয়ারটি। মূলত এদের চোয়ালের গঠনই এমন ধরনের যে মুখে ঢুকে পড়া সরু কোন প্রাণীকে সহজেই আটকে ফেলতে পারে এবং তা স্যালোয়ারের দাঁতগুলোর ধাক্কা খেয়ে ভেতরের দিকে চলে যায়। জায়ান্ট স্কুইড জায়ান্ট স্কুইডকে এক কথায় জলজ্যান্ত কিংবদন্তি হিসেবে ধরা হয়। আবিষ্কারের পর থেকে প্রায় দেড়শ’ বছর যাবত মানুষ অসংখ্য বার এদের ছবি ধারণ করার চেষ্টা চালালেও গভীর সমুদ্রে deep sea gigantism-এর নিয়ম অনুসারে বৃহৎ আকারের এই প্রাণীর ছবি ধারণ করা সম্ভব হয়নি। ২০০৪ সালের দিকে জাপানের একটি গবেষণা দল সর্বপ্রথম এদের জীবিত অবস্থায় ছবি ধারণ করতে সক্ষম হয় এবং সেটিই ছিল জায়ান্ট স্কুইডের ধারণ করা প্রথম ছবি। পরবর্তীতে ২০১২ সালে জাপানের Chichijima তে এদের ভিডিও ধারণ করা হয়। আটটি বাহু এবং দুটি বিশালাকৃতির টেন্টাকল শুঁড়ের জায়ান্ট স্কুইডের এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য যথাক্রমে পুরুষ প্রজাতির ৩৩ ফুট এবং স্ত্রী প্রজাতির ৪৩ ফুট। এদের চোয়াল অত্যন্ত শক্তিশালী। যা হাড়গোড়কে এক নিমিষেই গুড়িয়ে দিতে সক্ষম। শারীরিক গঠন এবং শক্তি ক্ষমতার জন্য এদেরকে দানব স্কুইড নামেও অভিহিত করা হয়। ভ্যাম্পায়ার স্কুইড আকৃতিতে ভ্যাম্পায়ার স্কুইড মাত্র ফুট খানেকের মতো হয়ে থাকে। তবে অন্যান্য স্কুইডের তুলনায় এরা দেখতে বেশ ভিন্নধর্মী। হাঁসের লিপ্তপাদের অনুরূপ এদের বাহুগুলোও লিপ্ত বা পাতলা চামড়া দ্বারা জোড়া লাগানো। যার ফলে এরা যখন বাহু প্রসারিত করে তখন ভ্যাম্পায়ারের মতো একটা গঠন কাঠামো তৈরি হয়। যা দেখতে বেশ চমকপ্রদ। সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় ৬০০-৯০০ মিটার গভীরে ভ্যাম্পায়ার স্কুইডের বসবাস। প্যাসিফিক ভাইপার ফিশ প্রশান্ত মহাসাগরের ২০০-৫০০০ মিটার গভীরে বসবাস প্যাসিফিক ভাইপার ফিশের। অর্থাৎ হিম অন্ধকার জগতের প্রাণী এরা। গড়ে ৮ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট প্যাসিফিক ভাইপার ফিশের দেহ সরু আকৃতির। তবে সরু আকৃতির দেহের তুলনায় এদের মাথা বেশ বড়সড়। এছাড়াও বড় বড় কাটার মতো দাঁত আর আচমকা বের হয়ে আসছে যেন এমন ধর্মী চোখ হওয়ায় প্যাসিফিক ভাইপার ফিশকে বেশ অদ্ভুত দেখায়। গবলিন হাঙ্গর গবলিন হাঙ্গরের আরেক নাম ভ্যাম্পায়ার হাঙ্গর। মুখের গঠন অনুযায়ী এদেরকে ভিনগ্রহের প্রাণী হিসেবে মনে হলেও, প্রকৃতপক্ষে সমুদ্রের প্রায় ৪২৬৫ ফিট গভীরে এদের বসবাস। ১৮৯৮ সালে আবিষ্কৃত এই হাঙ্গরের প্রজাতিটি ছিল সম্পূর্ণ নতুন একটি পরিবার Mitsukurinidae, যার দ্বিপদ নাম রাখা হয় Mitsukurina owstoni। হাঙ্গরের এই ভিন্ন দর্শনের প্রজাতিটিকে কোটি বছর যাবত টিকে থাকার সুবাদে এদের জ্যান্ত ফসিলও বলা হয়ে থাকে। পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি বছর ধরে এরা নিজেদের বংশকে অবিকল ধারায় টিকিয়ে রেখেছে। হালকা গোলাপি বর্ণের গবলিন হাঙ্গর ১০-১৩ ফুটের মতো লম্বা হয়ে থাকে। ফ্যাংটুথ ফিশ ফ্যাংটুথ ফিশের মুখ দেখতে অনেকটা ভাইপার ফিশের মতো হলেও, আকারে এরা ভাইপার ফিশের তুলনায় অর্ধেক। অর্থাৎ প্রায় ৬ ইঞ্চির মতো। এদের দাঁত শরীরের তুলনায় সমুদ্রের অন্যান্য যে কোন মাছের চাইতে বড়। যদিও এরা মানুষের কোন রকম ক্ষতি করে না। সমুদ্রের ২০০০-৫০০০ মিটার গভীরে এদের বসবাস। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এদের দুটি প্রজাতি রয়েছে। যার মধ্যে একটি A. cornuta (common fangtooth) এবং অন্যটি হচ্ছে- Anoplogaster brachycera (shorthorn fangtooth)। ফ্রিলড সার্ক আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসাগরে এদের বসবাস। সমুদ্রপৃষ্ঠের ৫০-১৫৭০ মিটার গভীরে ফ্রিলড সার্কের বিচরণ। প্রচলিত হাঙ্গরদের চাইতে এদের শরীর তুলনামূলক বেশি সর্পিল ধরনের। যার কারণে খুব সহজেই এরা এঁকেবেঁকে চলতে পারে। বাইরে বের হয়ে থাকা ক্ষুরধার দাঁতগুলো ভেতরের দিকে বেঁকে যাওয়ার কারণে একবার এদের কবলে শিকার ধরা পড়লে খুব সহজেই আঙ্গটার মতো আটকে যায় এবং এদের মুখমন্ডল দেখতে কিছুটা ভুতুড়ে ধরনের হওয়ায় ফ্রিলড সার্ককে দেখতে বেশ ভয়ঙ্কর বলেই মনে হয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত এদের সর্বোচ্চ রেকর্ডকৃত দৈর্ঘ্য ৬.৬ ফিট বলে জানা গেছে। স্বচ্ছমাথা মাছ গভীর সমুদ্রে বসবাসরত অনেকগুলো ব্যারিলিয়ি প্রজাতির মাছের মধ্যে স্বচ্ছমাথা মাছ অন্যতম। এদের মাথার দিকটা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি স্বচ্ছ। যার ফলে এদের মাথার ভেতরটা দেখা যায়। অন্যদিকে এদের চোখগুলো দেখতে বেলুনাকৃতির। সব মিলিয়ে হুট করেই দেখলে এই স্বচ্ছমাথা মাছকে রোবট মাছ বা খেলনা মাছ বলেও মনে হতে পারে। সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় ৬০০-৮০০ মিটার গভীরে এদের বসবাস।
×