ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রিয়ার উইন্ডো

প্রকাশিত: ১১:৪৮, ২৮ মার্চ ২০১৯

রিয়ার উইন্ডো

একা থাকলে আপনি কি করেন? এমন কিছু কাজ নিঃসন্দেহে করে থাকেন যার আসলে কোন ব্যাখ্যা নেই। দিনের ২৪ ঘণ্টা যখন কোন কাজই নেই মানুষ সময় কাটাতে অদ্ভুত কাজ আবিষ্কার করে নেবে এটাই স্বাভাবিক। বিখ্যাত ফটোগ্রাফার এলবি জেফরিসের হয়েছে এই দশা। পায়ে আঘাত পেয়ে সারাদিন ঘরে বসে কাটছিল তার। হুইলচেয়ারে বন্দী জেফরিস নিতান্তই একঘেয়েমি কাটাতে প্রতিবেশীদের কাজকর্ম দেখত। নব দম্পতির খুনসুটি, সামনের এ্যাপার্টমেন্টে ব্যালে ড্যান্স, প্রতিবেশীদের ঝগড়ার মাঝে হঠাৎ অদ্ভুত কিছু একটা দেখতে পেল। একটা এ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করা শয্যাগত এক নারী হঠাৎ উধাও হয়ে যান। এদিকে পাশের বাড়ির কুকুরছানা বাগানে কি যেন বার বার খুঁড়ছিল। অসুস্থ নারীর স্বামী কোথাও যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জেফরিসকে যেন খারাপ কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কয়েকটি আলাদা আলাদা ঘটনা এক সুতায় আনার পর জেফরিস ভয়ানক কিছু ধারণা করে বসেন। লোকটি খুন করেছে তার স্ত্রীকে এবং দূরে কোথাও পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। জেফরিস প্রথমে তার ব্যক্তিগত সেবিকাকে, পরে তার বান্ধবী এবং শেষমেশ এক গোয়েন্দা বন্ধুকেও সব জানায়। কিন্তু প্রথমে কেউই তার কথা পাত্তা দেয় না। সবাই ধরে নেয় বদ্ধ ঘরে থেকে জেফরিস হ্যালুসিনেশনে ভুগছে। এছাড়াও মানুষ অনেক কাজই করে থাকে যার আদতে কোন ব্যাখ্যা থাকে না, একা থাকলে এ রকম কাজ হয় আরও বেশি। একপর্যায়ে খারাপ কিছুর আঁচ পায় জেফরিসের সেবিকা এবং বান্ধবীও। অনেকটা জোর করেই জেফরিস গোয়েন্দা বন্ধুকে খোঁজ করতে পাঠান। আশপাশে তিনি এমন কোন আলামতই পান না যা থেকে প্রমাণ করা যাবে লোকটি তার স্ত্রীকে খুন করেছে। গোয়েন্দা বন্ধুটি সেই লোকটির ঘরেও ঢুকতে পারবেন না। তবে যাই হোক দেশে আইন বলে কিছু আছে। জেফরিসকে সে মনে করিয়ে দেয় সারাদিন বাইনোকুলার তাক করে নজরদারি করে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করাটা অনৈতিক। কিন্তু হাল ছেড়ে দেয়ার লোক নন জেফরিস। পরের কয়েকদিন ছোট ছোট আরও লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে। পেছনের জানালা দিয়ে জেফরিস সত্যিই অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পেয়েছিল। না এসব তার মস্তিষ্কের এলোমেলো চিন্তা মাত্র? প্রতি মিনিটে সাসপেন্সে ভরপুর এই সিনেমাটির সব থেকে অনন্য দিক এই সিনেমাটি মাত্র একটি সেটেই নির্মিত। একটা মাত্র ঘর কেন্দ্র করেই সব সাসপেন্স, থ্রিলার, রহস্য বললেও ভুল হবে না। গল্প কি সাদামাটা মনে হচ্ছে? হতেই পারে- কিন্তু এই সাদামাটা গল্পকে দুর্দান্ত সাসপেন্সে রূপ দিয়েছেন আলফ্রেড হিচকক যাকে বলা হয় দ্য মাস্টার অব সাসপেন্স। তার পরিচালনায় ১৯৫৪ সালে মুক্তি পায় ১১২ মিনিটের সিনেমাটি। আইএমডিবির সর্বকালের সেরা ২৫০ সিনেমার মধ্যে রিয়ার উইন্ডো ৫৪তম স্থান অর্জন করেছে। রেটিং ৮.৫% এবং রটেন টমেটোতে ১০০%। মাস্টারপিস বললে যেন কম বলা হয়ে যাবে এই সিনেমাকে। সাসপেন্সের জাদু দেখতে প্রস্তুত তাহলে?
×