ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জনগল্প ’৭১-প্রথম খণ্ড প্রকাশ ও পাঠ উন্মোচন

প্রকাশিত: ১১:০৩, ২৮ মার্চ ২০১৯

জনগল্প ’৭১-প্রথম খণ্ড প্রকাশ ও পাঠ উন্মোচন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যুদ্ধাক্রান্ত জনগোষ্ঠী একটি কালের সাক্ষী। এই যুদ্ধ এক জনযুদ্ধ। যুদ্ধকালে শহর থেকে গ্রামে পালিয়ে যাওয়া মানুষকে আশ্রয় দিয়ে রক্ষা করার চেষ্টা করেছে সাধারণ মানুষ। দেশকে রক্ষার জন্য অস্ত্র হাতে যুদ্ধে যোগ দিয়েছে তরুণ-তরুণী, যুবক, বৃদ্ধ, নবীন-কিশোর। একমাত্র সন্তানকে দেশমাতৃকার সুরক্ষায় উৎসর্গ করেছে মাতাপিতা। আহত মুক্তিযোদ্ধার শুশ্রƒষায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে নারী, এমনকি নানা রূপে সাধারণ মানুষ এই যুদ্ধে সম্পৃক্ত করেছে নিজেকে। কিন্তু সেই সংশ্লিষ্টতার বয়ান যথাযথভাবে জানানো হয়নি নতুন প্রজন্মকে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যে সাধারণ মানুষেরা যুদ্ধকালীন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, তাদের অভিজ্ঞতা অনুসন্ধান ও লিপিবদ্ধ করে ধারাবাহিক প্রকাশনার মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার প্রয়াস ‘জনগল্প ’৭১’। যুক্ত গৃহীত ধারাবাহিক এই প্রয়াসের প্রথম খ- সদ্য প্রকাশিত। চলমান এই গবেষণা ও তথ্যায়ন উদ্যোগের প্রথম খ-টি প্রকাশ ও কার্যক্রমটি বৃহত্তর জনমানুষের গোচরে আনার লক্ষ্যে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বুধবার বিকেলে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক ইমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান। যুক্ত আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন কথাশিল্পী জাহানারা নওশিন, কবি ও রাজনীতিবিদ ড. নূহ উল আলম লেনিন, বইটির সম্পাদক কবি নিশাত জাহান রানা, শাহানারা আরজু, ঝর্ণা রহমান প্রমুখ। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের সম্মেলক কণ্ঠে ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ ও ‘স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে যাচ্ছে বাঙালীরা’ গান দুটি পরিবেশনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর অতিথিরা বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন। পরে ‘জনগল্প ’৭১’ বইটি থেকে একটি গল্প পাঠ করেন ডালিয়া আহমেদ। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল প্রকৃতই একটি জনযুদ্ধ। ১৯৭১ সালে যাদেরই জ্ঞানবুদ্ধি হয়েছিল, তাদের প্রত্যেকের অভিজ্ঞতাই যেমন ব্যক্তির, তেমনি দেশের ইতিহাসের উপকরণ। নিশাত জাহান রানা উদ্যোগ নিয়েছে, ব্যক্তির মৌখিক ও লিখিত বিবরণ নিয়ে তখনকার দিনের একেকটি গল্প পাঠকের সামনে হাজির করার। এরমধ্যে আছে অত্যাচারিত নিগৃহীত হওয়ার কথা, আছে সেদিনকার আশা-নিরাশা, আনন্দ-বেদনা, ত্রাস-উদ্দীপনার কাহিনী। ইতিহাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মৌখিক ইতিহাস। কোন প্রতিষ্ঠানের অপেক্ষায় না থেকে নিশাত জাহান রানা যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে আমাদের সকলের অভিনন্দন তার প্রাপ্য। এই প্রথম খ-ে সংকলিত হলো ২৬টি কথা। এভাবে খ-ের পর খ- প্রকাশ পাবে। এই ৩৭ বছরে অনেককে আমরা হারিয়েছি। অন্যেরা হারাবার আগে যদি তাদের কথা ধরে রাখা যায়, তাহলে আমরা সেই সময়কার সুস্পষ্ট একটা ছবি এঁকে নিতে পারব। তার থেকে বুঝে নিতে পারব যে, সাধারণ মানুষ ইতিহাসের নীরব দর্শক নয়, তারাই প্রকৃত নায়ক। অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতার অজানা অধ্যায় তুলে ধরেছে ‘জনগল্প ’৭১’। যা ইতিহাসবেত্তা ও গবেষকদের জন্য যেমন, তেমনি সাধারণ মানুষের বিপুল আগ্রহের কারণ হয়ে দাঁড়াবে এর সত্যনিষ্ঠতার জন্য। বইটির সম্পাদক কবি নিশাত জাহান রানা এর পটভূমি তুলে ধরে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের যুদ্ধকালীন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অনুসন্ধান ও লিপিবদ্ধ করে চলেছি। এই ঐতিহাসিক বিষয়টি ধারাবাহিক প্রকাশনার মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য। বইটির এক গল্পসংগ্রাহক শাহানারা আরজু বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের কাছে গিয়েছি এই গল্প সংগ্রহ করতে। গ্রামে গ্রামে ঘুরেছি। অনেকে বলতে পারেন কিন্তু লিখতে পারেন না। তাদের কাছে এগুলো জানতে গিয়ে আমাদের অনেক সময় লেগেছে। কোন কোন সময়ে তারা আমাদের সময় দিয়েও কথা রাখতে পারেননি। আমরা ধৈর্য্য না হারিয়ে বার বার ছুটে গিয়েছি তাদের কাছে। অনেকের বয়স হয়েছে কথা বলার সময় ধারাবাহিকতা হারিয়ে ফেলেন। আমরা সেগুলিকে গুছিয়ে লিখে আবার তাদের কাছে গিয়ে শুনিয়েছি ঠিক আছে কিনা, তারপর লিপিবদ্ধ করেছি। বইটির আরেক সংগ্রাহক ঝর্ণা রহমান বলেন, সাধারণ মানুষতো লেখক নন। অনেক সময় তাদের কথা রেকর্ড করে অথবা শ্রুতিলিখনগুলো গুছিয়ে নিয়েছি। অনুষ্ঠানে গ্রন্থভুক্ত বিভিন্ন লেখা থেকে পাঠ করেন আবৃত্তিকার জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় ও ডালিয়া আহমেদ।
×