ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রমজানে চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর অবস্থানে থাকবে সরকার ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ২৮ মার্চ ২০১৯

রমজানে চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর অবস্থানে থাকবে সরকার ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রমজানে পণ্য সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রয়েছে। তাই রমজানের সময় কোন পণ্যের দাম বাড়ার কোন সুযোগ নেই। এছাড়া অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হবে। তিনি বলেন, রমজানে বেশি ব্যবহার হয় ৬টি পণ্যের মজুদ ও আমদানি পরিস্থিতি ভাল। এছাড়া চালেরও কোন সঙ্কট নেই। বুধবার রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের স্থানীয় উৎপাদন, আমদানি, মজুত অবস্থা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা বৈঠকে শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, পবিত্র রমজান মাসে ব্যবসায়ীদের সততার সঙ্গে ন্যায্য মূল্য পণ্য বিক্রয় নিশ্চিত করতে হবে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রয়েছে। আসন্ন রমজান মাসে কোন পণ্যের বৃদ্ধি পাবে না এবং সরবরাহে ঘাটতি থাকবে না। চাহিদার তুলনার অনেক বেশি পণ্য মজুত রয়েছে। গত বছরের তুলনায় বর্তমানে অনেক পণ্যের মূল্য কম রয়েছে। টিপু মুনশি বলেন, সরবরাহ চেইনে কোন সমস্যা নেই। এ কারণে আসন্ন রমজান মাসে কোন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গত কোন কারণ নেই। পণ্য পরিবহনে যাতে কোন ধরনের চাঁদাবাজি না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয়া হবে না। প্রতিটি জেলার প্রশাসন এ বিষয়ে উপযুক্ত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে দায়িত্বশীল আচরণ করে ব্যবসায়ীদের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, পণ্যের উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকরা পণ্য বিক্রয়ের সময় রসিদ সরবরাহ করবে। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা সে মোতাবেক যৌক্তিক মূল্যে পণ্য বিক্রয় করবেন। কৃত্রিম উপায়ে কোন ধরনের পণ্যের সঙ্কট সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অনেক পণ্যের মূল্য গত বছরের তুলনায় কম আছে। আমদানি ও পরিবহন ক্ষেত্রে এসকল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চলাচল নিশ্চিত করা হবে। কোথাও কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। দেশে উৎপাদিত পণ্য উৎপাদনে যাতে কোন ধরনের সমস্যা না হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। অনুষ্ঠানে বাণিজ্য সচিব মোঃ মফিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান জ্যোতিময় দত্ত, এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট মোঃ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম লস্কর, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, এনবিআর, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতিনিধিরা এবং বিভিন্ন বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভায় ৭টি পণ্য নিয়ে আলোচনা ॥ দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত বৈঠকে রমজানের অতি প্রয়োজনীয় ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, ছোলা, মসুর ডাল, খেজুর ও চালের মজুদ ও আমদানি এবং এলসি খোলার সর্বশেষ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা হয় প্রতিটি পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। ফলে রোজার সময় এসব পণ্য দাম বাড়ার কোন কারণ দেখা যাচ্ছে না। দাম যাতে না বাড়ে এ সময় ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চাওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আসন্ন রমজান উপলক্ষে ৮ লাখ টন পেঁয়াজের এলসি খোলা হয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ৭ লাখ ৮২ হাজার টন। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রমজানে এ পণ্যের চাহিদা হল ৫ লাখ টন। ফলে চাহিদা অনুযায়ী আমদানি বেশি হয়েছে। বর্তমান বাজারে দেশী পেঁয়াজ ২২-২৮ এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজ ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রমজানে প্রায় ৮০ হাজার টন ছোলার চাহিদা থাকলেও গত ৯ মার্চ পর্যন্ত আমদানি করা হয় ৮৯ হাজার ৩৯০ টন এবং এলসি খোলা হয়েছে ৮৪ হাজার ৭৪৮ টনের। এ তথ্য অনুযায়ী চাহিদার চেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে। বর্তমান বাজারে এক কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৯০ টাকায়। এদিকে পর্যাপ্ত মশুর ডাল আমদানি করা হয়েছে রমজান উপলক্ষে। এর মধ্যে রমজানের চাহিদা হচ্ছে ৮০ হাজার টন। এ সময় আমদানি করা হয় ১ লাখ ৮৭ হাজার টন এবং এলসি খোলা হয়েছে ১ লাখ ৯৬ হাজার টন ডালের। আসন্ন রমজানকে সামনে খেজুর আমদানির পরিমাণ এখন পর্যন্ত কম আছে। রমজানে খেজুরের চাহিদা হচ্ছে ১৮ হাজার টন। এ পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ১২ হাজার ২৯৯ টন। রমজানে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য হচ্ছে ভোজ্যতেল। এ পর্যন্ত এ পণ্যটি আমদানি করা হয়েছে ১৪ লাখ ৬৯ টন এবং এলসি খোলা হয়েছে ১৭ লাখ ৬৬ হাজার টন। এ পণ্যের রমজানে চাহিদা হচ্ছে ৩ লাখ টন। এছাড়া রোজার চাহিদাকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা চিনিও পর্যন্ত আমদানি করেছে। রোজায় চিনির চাহিদা হচ্ছে ৩ লাখ টন। এ পর্যন্ত আমদানি করা হয়েছে ১০ লাখ ৭০ হাজার টন। পাশাপাশি এলসি খোলা হয়েছে ১৪ লাখ ৪৭ হাজার টন। রোজার চাহিদার কয়েকগুণ বেশি চিনি আমদানি হয়েছে।
×