ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ রাশেদুল হক

স্মিথ-ওয়ার্নারের ভাবনা জুড়ে বিশ্বকাপ

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ২৭ মার্চ ২০১৯

স্মিথ-ওয়ার্নারের ভাবনা জুড়ে বিশ্বকাপ

চলতি সপ্তাহে শুরু হয়েছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের (আইপিএল) ১২তম আসর। যেখানে অংশ নিচ্ছেন স্টিভেন স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে কেপটাউন টেস্টে বহুল আলোচিত সেই বল টেম্পারিংয়ের কারণে পাওয়া এক বছরের নিষেধাজ্ঞা (আন্তর্জাতিক) শেষ হচ্ছে এ মাসেই। স্মিথ-ওয়ার্নার বাংলাদেশে বিপিএল দিয়ে মাঠে ফিরলেও ইনজুরির কারণে টুর্নামেন্ট শেষ করতে পারেননি। আইপিএলকেই তাই বিশ্বকাপের প্রস্তুতির মঞ্চ হিসেবে দেখছেন দুই আলোচিত অস্ট্রেলিয়ান। মূল লড়াইয়ের আগে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে ৪৩ বলে ৬৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলা ওয়ার্নারের মূল মঞ্চেও শুরুটা হয়েছে দারুণ। ইডেনে কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাছে দল হারলেও নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৫৩ বলে ৮৫ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস উপহার দিয়েছেন ন্যাটা ওপেনার। তবে তার ভাবনাজুড়ে কেবলই বিশ্বকাপ। ওয়ার্নার বলেন, ‘সামনে বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের মঞ্চে ওঠার আগে নিজেকে ঝালিয়ে নেয়ার এটাই সবচেয়ে ভাল মঞ্চ। নিজের ও দলের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিতে প্রস্তুত আমি।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘নিশ্চয়ই বিশ্বকাপের শিরোপা ধরে রাখতে অস্ট্রেলিয়ার মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে। বিপিএলের ইনজুরির পর আমি এখন পুরোপুরি ফিট। তবে বিশ্বকাপের আগে সেটিকে শতভাগ ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে হবে। থাকতে হবে ধারাবাহিক ফর্মেও। এ জন্য আইপিএল হতে পারে সেরা সুযোগ। আমি এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাই। স্বপ্নের বিশ্বকাপের আগে এটি আমার প্রস্তুতির উপযুক্ত মঞ্চ।’ উল্লেখ্য ২০১৬ সালে ওয়ার্নারের নেতৃত্বেই আইপিএলের শিরোপা জিতেছিল হায়দারাবাদ। ফাইনালে ৮টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩৮ বলে ৬৯ রান করেছিলেন ড্যাশিং ওপেনার। নিষেধাজ্ঞার কারণে সাবেক অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের মতো তিনিও আইপিএলের গত আসরে খেলতে পারেননি। এক বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আগামী ২৮ মার্চ। আমিরাতে পাকিস্তানের সঙ্গে পাঁচ ওয়ানডের চতুর্থ ও শেষ ম্যাচ যথাক্রমে ২৯ ও ৩১ মার্চ। গুঞ্জন ছিল বিশ্বকাপ সামনে রেখে এই সিরিজ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে যাচ্ছেন দুই অস্ট্রেলিয়ান তারকা। কিন্তু প্রথমে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) নির্বাচক ম-লীর চেয়ারম্যান ট্রেভর হন্স জানিয়েছিলেন, এখনো শতভাগ ফিট নন, তাই আইপিএল দিয়ে মাঠে ফিরবেন তারা। এরপরই ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি হাঁকান ওয়ার্নার। নেটে ব্যাটিং প্র্যাকটিসের ভিডিও আপলোড করেন স্মিথ। পরবর্তীতে নিজের অবস্থান থেকে সরে এসে হন্স ইঙ্গিত দেন স্মিথ-ওয়ার্নারকে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ দুই ওয়ানডেতে মাঠে দেখাও যেতে পারে। তবে সেটি বোধহয় সত্যি নয়। কারণ অস্ট্রেলিয়া থেকে আইপিএল খেলতে ভারতে উড়ে আসার আগে আমিরাতে জাতীয় দলের ড্রেসিং রুমে সতীর্থদের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন তারা। অনেক দিন পর জাতীয় দলের ড্রেসিং রুমে দলের সদস্য ও কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারের কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন। ওয়ার্নার বলেন, ‘অবশ্যই মাঝে একটা বছর চলে গেছে, অনেক পরিবর্তনও এসেছে দলে। এখন সেটার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই আমাদের সামনের দিকে এগোতে হবে।’ কনুইয়ের চোট কাটিয়ে গত সপ্তাহে ক্লাব ক্রিকেট দিয়ে মাঠে ফিরেই সেঞ্চুরি করেন ওয়ার্নার। স্মিথ খেলবেন রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে। এরই মধ্যে তিনিও ফ্র্যাঞ্চাইজিটির অনুশীলনে যোগ দিয়েছেন। নিজের ফিটনেস, ফর্ম, দলের লক্ষ্যের পাশাপাশি স্মিথও জানিয়েছেন আইপিএলই হবে তার বিশ্বকাপ প্রস্তুতির সেরা মঞ্চ। উল্লেখ্য আইপিএল শেষ হবে ১৯ মে আর ৩০ মে ইংল্যান্ডে শুরু ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ১ জুন ব্রিস্টলে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ‘ডিফেন্ডিং’ চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। শিরোপা ধরে রাখতে স্মিথ-ওয়ার্নারই যে অসিদের তুরুপের তাস, সেটি বোধহয় না বললেও চলে। উল্লেখ্য, গত বছর মার্চের শেষ সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে কেপটাউন টেস্টে বল টেম্পারিংয়ের ঘটনায় অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারকে এক বছরের জন্য সকল ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পরও দু’জন আর কখনোই অধিনায়ক হতে পারবেন না বলেও জানিয়েছিল সিএ। আর ঘৃণিত পরিকল্পনা যিনি মাঠে বাস্তবায়ন করে ঝড় তোলেন, সেই ক্যামেরন ব্যানক্রফটকে ৯ মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়। ওদিকে সিএÑর এই ঘোষণার পর পরই বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘরোয়া ফ্রাঞ্চাইজি টি২০ টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) থেকেও স্মিথ ও ওয়ার্নারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যে কারণে গত বছর আইপিএলে খেলতে পারেননি সময়ের অন্যতম সেরা দুই তারকা। টেস্টের তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে পকেট থেকে শিরীষ কাগজ বের করে বল ঘষামাজা করেন ব্যানক্রফট। সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে খোদ অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী চরম হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাৎক্ষণিক শাস্তি হিসেবে স্মিথকে এক ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল)। পরে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) বিশেষ দদন্ত কমিটি কতৃক দোষী প্রমাণিত হন স্মিথ, ওয়ার্নার ও ব্যানক্রফট। টেম্পারিং বিতর্কের সূত্রপাত কেপ টাউন টেস্টের তৃতীয় দিনে টিভি ফুটেজ থেকে। ক্যামেরায় ধরা পড়ে, পকেট থেকে হলুদ এক টুকরো কাপড়ের মতো কিছু বের করে বলে ঘষতে চেয়েছিলেন ব্যানক্রফট। পরে সেটি লুকিয়ে রাখেন ট্রাউজারের ভেতর। দিনের খেলা শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে টেম্পারিংয়ের চেষ্টার কথা স্বীকার করেন স্মিথ ও ব্যানক্রফট। স্মিথের দাবি, দলের লিডারশিপ গ্রুপ থেকেই টেম্পারিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে কোচ ড্যারেন লেহম্যান এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সিএÑর তদন্তেও নির্দোষ লেহম্যান কিছুদিন দায়িত্ব চালিয়ে গেলেও বিবেকের তাড়নায় পরে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ান। ওদিকে সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব ছাড়ার দিন রাতেই নাকি মদ-পার্টিতে মেতে উঠেছিলেন ওয়ার্নার! এখন ঝড়-ঝঞ্জা কাটিয়ে বিশ্বকাপে তারা কেমন করেন, সেটিই দেখার অপেক্ষা।
×