ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নারী বাসযাত্রীকে নির্জন স্থানে নামিয়ে ধর্ষণ ও মুক্তিপণ আদায় চক্রের তিন সদস্য র‌্যাবের হাতে পাকড়াও

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ২৫ মার্চ ২০১৯

 নারী বাসযাত্রীকে নির্জন স্থানে নামিয়ে ধর্ষণ ও মুক্তিপণ আদায় চক্রের তিন সদস্য র‌্যাবের হাতে পাকড়াও

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যাত্রীদের বাসে উঠিয়ে নির্জন স্থানে নামিয়ে নারী যাত্রীদের ধর্ষণ ও তা ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে মুক্তিপণ আদায় করত। অথবা অপরিচিত যাত্রীদের অপহরণ করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত। এরকমই অপহরণ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এ সময় এক অপহৃত নারী যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত অপহরণকারী হচ্ছে, মোঃ খলিল মিয়া (৩৩), বাসের সুপারভাইজার মেহেদী হাসান বাবু (২২) ও হেলপার রাকিব হোসেন (১৯)। অপহরণে ব্যবহৃত ‘আশুলিয়া ক্লাসিক’ নামক একটি বাস জব্দ করা হয়। ওই বাসের রুট পারমিটবিহীন ও এর বৈধ কাগজপত্র ছিল না। রবিবার দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেঃ কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর সিও জানান, শনিবার রাতে র‌্যাব-১ এর একটি দল রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি নির্জন জায়গায় অপহরণের চেষ্টাকালে অপহরণকারী ওই তিনজনকে আটক করা হয়। এ সময় অপহৃত নারী ভিকটিমকে উদ্ধার ও অপহরণে ব্যবহৃত ‘আশুলিয়া ক্লাসিক’ নামক একটি বাস জব্দ করা হয়। র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক সারওয়ার বিন কাশেম জানান, গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, দুই মাস আগে ওই নারী ঢাকায় আসেন। ঘটনার দিন ওই নারী বাইপাইল থেকে নবীনগর যাওয়ার উদ্দেশে বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় ‘আশুলিয়া ক্লাসিক’ নামক বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর-মহাখালী রুটের একটি বাস বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছলে তিনি বাস থামান। এ সময় হেলপার তাকে গন্তব্য জিজ্ঞাসা করলে নবীনগর যাওয়ার কথা জানান। গাড়ির হেলপার তাকে নবীনগর নামিয়ে দেয়ার কথা বলে গাড়িতে তোলেন। ঢাকায় নতুন আসায় রাস্তাঘাট চেনা না থাকায় ভিকটিম তার কথামতো বাসে উঠে পড়েন। ওই নারী তার ভাইকে ফোন দিয়ে সুপারভাইজারকে তার গন্তব্যের ঠিকানা জানিয়ে দিতে বলে। ভিকটিমের ভাই ফোনে সুপারভাইজারকে নবীনগরে নামিয়ে দিতে বললেও তারা কৌশলে ভিকটিমকে আব্দুল্লাহপুরের দিকে নিয়ে আসেন। আব্দুল্লাহপুরে বাস পৌঁছানোর পর অন্য সব যাত্রীকে নামিয়ে দেয়া হলেও ওই নারীকে জোরপূর্বক আটকানো হয়। ওই নারী চিৎকার করলে পাশেই থাকা র‌্যাব-১ এর একটি দল ওই তিনজনকে আটকসহ ভিকটিমকে উদ্ধার করে। তারা জানায়, তারা প্রত্যেকে ‘আশুলিয়া ক্লাসিক’ বাসের কর্মচারী। খলিল মিয়া বাসের চালক, মেহেদী হাসান বাবু সুপারভাইজার ও রাকিব হোসেন বাসের হেলপার। তারা ওই নারীকে ধর্ষণ ও অপহরণের উদ্দেশে কৌশলে অপহরণের পরিকল্পনা করে। গ্রেফতারকৃত চালক খলিল মিয়া এক বছর ধরে ‘আশুলিয়া ক্লাসিক’ বাস চালাচ্ছে। তার ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। বাসেরও কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। গ্রেফতারকৃত মেহেদী হাসান বাবু প্রায় ছয় বছর ধরে ‘আশুলিয়া ক্লাসিক’ গাড়ির সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত আছে। হেলপার ও চালকের সঙ্গে যোগসাজশ করে নারী ও অপরিচিত যাত্রীদের জিম্মি, অপহরণ করে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই করে আসছিল সে। গ্রেফতারকৃত রাকিব হোসেন আশুলিয়া ক্লাসিক বাসের হেলপার হিসেবে যোগদানের আগে চায়ের দোকানে কাজ করত। রাকিব মূলত কম বয়সী নারী যাত্রীদের টার্গেট করত। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তাদের মাধ্যমে আগেও অনেক নারী যাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তারা গ্রাম থেকে আসা কম বয়সী নারী যাত্রীদের বাসে তোলার পর কৌশলে অন্য যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। পরে ওই তরুণীদের বাসে করে কৌশলে নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। এরপর জোরপূর্বক ধর্ষণ এবং তার ভিডিও ও স্থিরচিত্র ধারণ করে সেগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে মুক্তিপণ আদায় করত। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হয়েছে।
×