ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

স্বল্প পুঁজিতে ভেড়া পালন

প্রকাশিত: ১২:১৬, ২৪ মার্চ ২০১৯

স্বল্প পুঁজিতে ভেড়া পালন

বাংলাদেশে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। জনসংখ্যার অতিরিক্ত চাপ, ক্রমাগত আবাদি জমি কমে যাওয়াসহ নানা কারণে কৃষির সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত হচ্ছে না। আবার শস্য ও অন্যান্য ফসল ফলাতে আবাদি জমির সিংহভাগই ব্যবহৃত হচ্ছে; পর্যাপ্ত চারণভূমি না থাকায় বড় আকারের প্রাণী যেমন গরু, মহিষ পালনও সমস্যাবহুল। এ রকম প্রেক্ষাপটে প্রাণিসম্পদ খাতে বিকল্প সুযোগগুলোর ওপর দৃষ্টি দেয়া অপরিহার্য। ভেড়া পালন এ রকম একটি সম্ভাবনাময় বিকল্প মাধ্যম। মাংস, উল বা দুধ উৎপাদনের জন্য বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই ভেড়া পালন বেশ জনপ্রিয়। ছোট আকারের এই প্রাণীটির অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে কোন ধরনের আবহাওয়ায় এদের উচ্চমাত্রায় খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল, পাহাড়ী অঞ্চল বা শীতল অঞ্চল সবখানে ভেড়া নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারে। এদের রোগব্যাধিও কম হয়। ভেড়ার খাদ্য ও পালন ব্যবস্থাপনা তুলনামূলকভাবে সহজ এবং খরচ কম। পারিবারিক পর্যায়ে বিশেষ করে দরিদ্রদের জন্য কম পুঁজিতে ও অল্প পরিচর্যায় ভেড়া পালন আয়ের একটি উপায় হতে পারে। পাশাপাশি এটা জাতীয়ভাবে আমিষের যোগানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ভেড়ার মাংসের পুষ্টিমান এবং স্বাদ ছাগলের মাংসের প্রায় অনুরূপ। ভেড়ার মাংসে বিরক্তিকর গন্ধও নেই। এছাড়া গরুর সঙ্গে একই খামারে বা ঘরে ছাগল পালন করা যায় না কিন্তু অতি সামান্য খরচ ও সহজ পরিচর্যায় গরুর সঙ্গে ভেড়া পালন করা যায়। যে কোন চারণ ভূমিতে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত কাঁচা ঘাস খাইয়ে অল্প খরচে বছরের শুকনা মৌসুমে প্রায় সব সময়ই ভেড়া পালন করা যায়। ভেড়া দলবদ্ধ অবস্থায় গরুর সঙ্গে অবস্থান করতে পছন্দ করে বলে ভেড়া পালনের জন্য তেমন কোন অতিরিক্ত জনবলের প্রয়োজন হয় না। ভেড়ার প্রধান খাদ্য সবুজ কচি ঘাস। এছাড়া নদীর পাড়ের আগাছা লতাপাতা খেয়ে থাকে। গরু, ছাগলের মতো খৈল, ভুসি, পালিশসহ অন্যান্য খাবার খেতে দিতে হয় না। এজন্য ভেড়ার মালিকদের খাবার নিয়ে চিন্তা এবং পরিশ্রম করতে হয় না। বছরে দুইবার স্ত্রীভেড়া দুটি থেকে চারটি বাচ্চা প্রসব করে। ছয় থেকে সাত মাসে সেই বাচ্চা আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়। একটি বড় ভেড়া পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়। এসব ভেড়া থেকে ১৪ থেকে ১৭ কেজি মাংস পাওয়া যায়। ভেড়ার মাংসে আঁশ কম ও মোলায়েম হয়। তাই খেতেও বেশ সুস্বাদু। ভেড়া বিক্রির জন্য চরের মানুষের হাটে যাওয়া লাগে না। শহর থেকে বেপারীরা এসে কিনে নিয়ে যায়। সমাজভিত্তিক ও বাণিজ্যিক খামারে দেশী ভেড়ার উন্নয়ন ও সংরক্ষণের জন্য যে প্রথম প্রকল্প নেয়া হয় তাতে মূলত পুষ্টি ও মাংসের চাহিদা পূরণের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়। ২০০৮ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রায় ২৭ লাখ ৫০ হাজার ভেড়া থেকে ২ হাজার ৭০০ টন ভেড়ার পশম পাওয়া যায়। একটি ভেড়া থেকে বছরে প্রায় ৯০০ থেকে ১ হাজার গ্রাম পশম পাওয়া যায়। দেশী ভেড়া যে ধরনের পশম উৎপাদন করে তা কার্পেট বা মোটা পশমের অন্তর্ভুক্ত। পরীক্ষামূলকভাবে ভেড়ার পশম থেকে বস্ত্র তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যা ইতোমধ্যে সফলভাবে কম্বল, চাদর ও শাল তৈরি করা হচ্ছে। এদিকে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় ভেড়ার পশম, পাট ও তুলার সংমিশ্রণ করা বিভিন্ন বস্ত্রসামগ্রী বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও বিপণনের পরিকল্পনা নিচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১৫ থেকে ১৬ লাখ টন পাট উৎপাদন হয়। আর এই পাটের মধ্যে থেকে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টন ব্যবহার হয়। বাকিটা বিদেশে রফতানি হয়। আর ভেড়া পালন করা হচ্ছে ৩৪ লাখ, যা থেকে প্রতিবছর ৩ হাজার ৪০০ টন ভেড়ার পশম উৎপাদন হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ভারত ভেড়ার পশমের বস্ত্রসামগ্রী উৎপাদন করে। আন্তর্জাতিক বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কারণ এটা একটি অভিজাত পোশাক। ইউরোপসহ বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশে ভেড়ার পশমের তৈরি বস্ত্রসামগ্রী, কম্বল ও চাদরের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।
×