ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সমাবর্তনে প্রাণের উচ্ছ্বাস

প্রকাশিত: ১২:১৪, ২৪ মার্চ ২০১৯

সমাবর্তনে প্রাণের উচ্ছ্বাস

দিনটি ছিল উজ্জ্বল রোদের। মাথার ওপর আগুন-গরম সূর্য। সে সবকে থোরাই কেয়ার করে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছিলেন নবীন গ্র্যাজুয়েটরা। ‘এই এই... ক্যাপটা উড়িয়ে দে... উড়িয়ে দে।’ ক্যামেরার লেন্সে চোখ রেখে বন্ধুদের নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। বন্ধুরা শুধু ক্যাপ উড়িয়েই ক্ষান্ত হলেন না, নিজেরাও শূন্যে লাফিয়ে উঠলেন খানিকটা। একে পর এক সার্টার চাপলেন...ক্লিক...ক্লিক। ‘আজ খুব আনন্দের দিন, তাই না?’ জিজ্ঞেস করি। একগাল হেসে বলেন, ‘বিয়ে করার সুযোগ জীবনে দু-তিনবারও আসতে পারে, কিন্তু সমাবর্তন জীবনে একবারই আসে, তাই আনন্দ করছি।’ বলছি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইইউবিএটি-এর ৫ম সমার্বতনের কথা। ক্যাম্পাসের গাছের ছায়ায় বসে থাকা কানিজ ও মেঘলাকে খানিকটা বিষণ্ণ দেখাচ্ছিল। ‘ব্যাপার কী?’ জানতে চাইলে কানিজ বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসটা সুন্দর, নয়নাভিরাম। এত সবুজেঘেরা প্রাকৃতিক ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে হবে। শিগগিরই ঢুকে পড়ব কর্মজীবনে। চাইলেও আর যখন তখন ক্যাম্পাসে আসতে পারব না। মনটা খারাপ লাগছে।’ তাই বলে কী ছবি তোলা বন্ধ থাকবে? মোটেও না। কানিজদের বন্ধু বিকাশ, অর্ক, মিনহাজ ও মাহাদী হৈ হৈ করতে করতে ছুটে এলেন বুশরা-আনিকাদের কাছে। সারা ক্যাম্পাস খুঁজে মরছি তোদের! আয়, আয় স্মৃতি ধরে রাখি। এরপর তো এভাবে সবাই একসঙ্গে হওয়া হবে না রে।’ কথা ঠিক। বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাম্পাসের সর্বশেষ স্মৃতি ধরে রাখা উচিত। ক্যামেরায় ক্লিক করলেন বিকাশ। হয়ে গেলে গ্রুপ ফটো। মাহাদী বললেন, ‘একটা ভিডিও হয়ে যাক। ফেসবুকে দিতে হবে না?’ বিকাশ ভিডিওর জন্য আবার ক্যামেরায় চোখ রাখেন। এসব ফটোগ্রাফি আর ভিডিওগ্রাফির ফাঁকে ফাঁকে সিরিয়াস কথাবার্তাও শোনা গেল গ্র্যাজুয়েটদের মুখে। ‘স্টুডেন্ট লাইফ তো শেষ হলো, এবার ক্যারিয়ার লাইফ।’ গ্রাউন্ডের পাশে বসে বলছিলেন ইশরাক। তার কথার সূত্র ধরে তারেক বলছিলেন, ‘দেশে চাকরির বাজার তো দেখতেই পাচ্ছিস। লাখ লাখ বেকার। আমি ভাই উদ্যোক্তা হতে চাই।’ গ্র্যাজুয়েটদের আনন্দ, উল্লাস আর সেলফি তোলার মহাযজ্ঞ চলে সন্ধ্যা অবধি। ৮ জন স্বর্ণপদক জয়ী, সহ¯্রাধিক অভিভাবক আর ছয় হাজার আটশ’ তিন জন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী। এই নিয়ে শেষ হলো উজ্জ্বল জমকালো সমাবর্তন। আয়োজনটি করেছিল দেশের অন্যতম সেরা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার এ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) ৫ম সমাবর্তনকে ঘিরে। ২১ মার্চ রাজধানীর উত্তরায় ১৪ নং সেক্টর-এর খেলার মাঠে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এ আনন্দযজ্ঞ। সমাবর্তনের এই অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তোমদের হাত ধরেই দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। তোমরা এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে জ্ঞান, মেধা ও দক্ষতা অর্জন করেছ তা দেশের কল্যাণে ব্যয় করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ‘ব্র্যান্ডিং’ করতে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেছেন, গত দশ বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। শিক্ষার গুণগতমানের উন্নয়নে কাজ করার এখনই উপযুক্ত সময়। আমরা চাই আমাদের শিক্ষাকে ‘ব্র্যান্ডিং’ করতে। এজন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষসহ সবাইকেই দায়িত্বশীল হতে হবে। বাংলাদেশ রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ কে সামনে রেখে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, নারীর ক্ষমতায়নসহ নানা ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো বাংলাদেশকে এশিয়ার সবচেয়ে বিকাশমান অর্থনীতির দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এই অগ্রযাত্রার পথে নবীন গ্রাজুয়েটদের স্বীয় মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে অবদান রাখার আহ্বান জানান তিনি। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.আবুল কালাম আজাদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আমার সামনে দেখতে পাচ্ছি ভবিষ্যতের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, কর্পোরেট নেতা, ফার্মাসিস্ট, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ নানা পেশার মানুষ। তোমরাই এ দেশকে বদলে দেবে। শুধু তাই নয়, আমি বিশ্বাস করি, তোমরা পরবর্তী প্রজন্মের পথ মসৃণ করার জন্য মানবিক স্বপ্ন দেখবে এবং সেই স্বপ্ন পূরণে কাজ করবে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও দৈনিক কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, আইইউবিএটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রব, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হামিদা আখতার বেগম। প্রকৌশল অনুষদের ডিন এবং সিভিল ডিপার্টমেন্টের চেয়ার অধ্যাপক ড. মো. মনিরুল ইসলাম, ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজউদ্দৌলা শাহীন, কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শহিদুল্লাহ মিয়া, আর্টস এবং সাইনসেন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবুল খায়ের নিজ নিজ অনুষদের গ্র্যাজুয়েটদের ডিগ্রী নিশ্চিত করে। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনকারী ৮ জন গ্র্যাজুয়েটকে ফাউন্ডার মিয়ান স্বর্ণপদক প্রদান করেন। সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে হতে মধ্যাহ্ন ভোজ সেরেই গ্র্যাজুয়েটরা আবার মেতে ওঠেন আনন্দে। সন্তানের আনন্দের সঙ্গে একাত্ম হোন অভিভাবকরাও। প্রিয় ছেলেমেয়েদের এই গাউন, হ্যাটের সঙ্গে লেগে আছে তাদেরও খানিকটা শ্রম-ঘাম। একজন অভিভাবক বলছিলেন, ‘আমরা চেয়েছি সন্তান যেন সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সেই চাওয়া পূরণ করেছে। আর এতবড় আয়োজন দেখে সত্যিই অভিভূত হয়েছি। দেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইইউবিএটি শুরু হয়েছিল ১৯৯১ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও আইবিএর সাবেক পরিচালক শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. এম আলিমউল্যা মিয়ান এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। আইইউবিএটির প্রত্যয় হলো, ‘যোগ্যতাসম্পন্ন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উচ্চশিক্ষার নিশ্চয়তা –প্রয়োজনে মেধাবী তবে অসচ্ছলদের অর্থায়ন।’ এই ক্যাম্পাসে ছয়টি অনুষদের অধীনে নয়টি বিষয়ে ডিগ্রী দেয়া হয়। ব্যাচেলার পর্যায়ে বিবিএ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইকোনমিকস, এগ্রিকালচার, ট্যুরিজম এ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এবং নার্সিং এবং মাস্টার্স পর্যায়ে এমবিএ বিষয়ে পড়ানো হয়। ক্যাম্পাস প্রতিবেদক
×