ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারে সংঘর্ষ ॥ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভীতি সঞ্চার

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ২৪ মার্চ ২০১৯

মিয়ানমারে সংঘর্ষ ॥ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভীতি সঞ্চার

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ রাখাইন রাজ্যে অভিযান বন্ধ না করলে একাধিক সশস্ত্র গ্রুপ দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একজোট হবে বলে হুমকি দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে। দি থাং ন্যাশনাল লিবারেশান আর্মি (টিএনএলএ) নামে এক সশস্ত্র গোষ্ঠী মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে (টাটামাডো) আহ্বান জানিয়ে বলেছে, রাখাইনে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে চলমান অভিযান বন্ধ করুন। নইলে টিএনএলএ সদস্যরা আরাকান আর্মির পক্ষে অস্ত্র হাতে নিতে বাধ্য হবে। রাখাইনে চলমান ওই সংঘাতের ভিডিও মোবাইলে ব্যাপক প্রচার করা হচ্ছে উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে। প্রত্যাবাসনবিরোধী চক্রের এই কর্মকাণ্ডে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার হচ্ছে। তারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি হবে না বলে প্রকাশ্যে জানান দিচ্ছে। সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র চালনা করছে দাবি করে টিএনএলএ নেতারা বলেন, এটি যুদ্ধাপরাধ। রাখাইনে যুদ্ধাভিযানের নামে যুদ্ধাপরাধ করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার অপরাধে একজন মগ নেতাকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এই মং নামে ওই মগ নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। ওই মগ নেতা এই মং ষাটের দশকে বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চল থেকে সপরিবারে আরাকানে চলে যান। চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি থেকে রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র বৌদ্ধ বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ চলছে। সংঘর্ষে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী লোকজনসহ বেসামরিক লোকজন হতাহত হচ্ছে। সূত্র জানায়, রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধাভিযান বন্ধ করতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে আহ্বান জানিয়েছে দি থাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ)। সশস্ত্র গোষ্ঠী টিএনএলএ বলছে, রাখাইনে যুদ্ধাভিযানের নামে যুদ্ধাপরাধ করছে মিয়ানমার বাহিনী। তারা সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র চালনা করছে। যুদ্ধাপরাধ বন্ধ না করলে আরাকান আর্মির পক্ষে টিএনএলও ওই অঞ্চলে অস্ত্র হাতে নেবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে। টিএনএলএ এবং আরাকান আর্মি উভয়ের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। যদিও বিদ্রোহী দল দু’টি মিয়ানমারের পৃথক রাজ্যের। টিএনএলএ এর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থার ফোনে কিউর সেখানকার একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, যদি আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে মিয়ানমার বাহিনী অভিযান বন্ধ না করে, তবে উত্তরাঞ্চলের বিদ্রোহীরা আরাকান আর্মির পক্ষে যুদ্ধে নামবে। রাষ্ট্রের জন্য এটি ভাল ফল বয়ে আনবে না বলেও জানায় দলটির এ নেতা। এদিকে মিয়ানমারের রাখাইনে স্বায়ত্তশাসন চেয়ে যুদ্ধকারী বুড্ডিস্ট দল আরাকান আর্মিকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়ার কারণে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে মঘ নেতা এই মংকে ২০ বছরের কারাদ- দিয়েছে আদালত। এই মং আরাকান ন্যাশনাল পার্টির মুখ্য নেতা এবং তিনি অতি জাতীয়তাবাদী মগ। তিনি বাংলাদেশে একজন পশু ডাক্তার ছিলেন। ষাটের দশকে পার্বত্যাঞ্চল থেকে সপরিবারে আরাকানে চলে যান এই মং। পরে কট্টর মগ হিসেবে সেখানে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ২০১২ সালে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গায় এই নেতা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে উস্কানি দিয়েছিল বলে জানা গেছে। সম্প্রতি সিত্তুয়ের আদালত রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাকে এ সাজা দেয়। রাষ্ট্রদ্রোহের এক মামলায় নৃতাত্ত্বিক রাখাইনের এই নেতা ও এক লেখককে কারাদ- দেয় সেখানকার আদালত। সূত্র জানিয়েছে, আদালতে যখন রায় ঘোষণা করা হচ্ছিল, তখন তার সমর্থকরা আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে বেশ ক’জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
×