স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ নগরীর সদর রোডসহ জনগুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম ৪০টি সড়কের ওপর ১৫০টি এবং সিটি কর্পোরেশনের বর্ধিত দুটি ওয়ার্ডের সড়কের ওপর ৩০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি শনাক্ত করেছে সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুত বিভাগ। জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের ওপর এ বৈদ্যুতিক খুঁটির কারণে যানবাহন চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তাছাড়া সড়কের একইস্থানে একাধিক খুঁটি থাকায় যানবাহন চলাচলেও ঝুঁকি বাড়ছে। বিষয়টি নিয়ে যানবাহন মালিকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করলেও বিগত দিনে তা প্রকাশ পায়নি কিন্তু সম্প্রতি একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে খুঁটি সরিয়ে নিতে উচ্চ আদালতের আদেশের কারণে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। ফলে এখন যানবাহন মালিক ও শ্রমিকদের পক্ষ থেকে দ্রুত সড়কের ওপরের বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণের জন্য জোর দাবি উঠেছে। বরিশাল শহরের একাধিক যানবাহন মালিক ও শ্রমিক জানান, সড়কের ওপর বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় যানবাহন চলাচলে ভোগান্তির পাশাপাশি চরম ঝুঁকিও রয়েছে। কারণ বর্ষা মৌসুমে ঝড়ো-হাওয়া বা বৃষ্টিপাত হলে কখনও কখনও বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে নিচে পড়ছে। এতে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। ফলে প্রতিনিয়িত আতঙ্কের মধ্যে থেকে তাদর যানবাহনে যাত্রী পরিবহন করতে হচ্ছে।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের দাবি, বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণে প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে নগরীর সদর রোডসহ জনগুরুত্বপূর্ণ ৪০টি সড়কের ওপর ওয়েস্টান পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন (ওজোপাডিকো) কোম্পানির ১৫০টি এবং সিটি কর্পোরেশনের বর্ধিত এলাকা অর্থাৎ ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সড়কের ওপর পল্লী বিদ্যুতের ৩০টি খুঁটি শনাক্ত করা হয়েছে। অতিসম্প্রতি বিসিসি’র বিদ্যুত বিভাগ অনুসন্ধান চালিয়ে এসব খুঁটি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে।
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিও) খাইরুল ইসলাম জানান, বৈদ্যুতিক খুঁটির স্থানসমূহ তুলে ধরে তা অপসারণে ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুতকে দুই দফায় চিঠি দেয়া হয়েছে কিন্তু বিদ্যুত বিভাগ খুঁটি অপসারণে কোন পদক্ষেপ রাখেনি বা চিঠিরও উত্তর দেয়নি। সবশেষে গত সপ্তাহে বিদ্যুত বিভাগের একজন সহকারী প্রকৌশলীকে তাদের অফিসে পাঠিয়ে খুঁটি অপসারণে তাগিদ দেয়া হয়েছে। তখন বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা সড়কের বৈদ্যুতিক খুঁটি সরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
বরিশাল বিদ্যুত বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের (ওজোপাডিকো-১) নির্বাহী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বলেন, সড়ক থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটি সরিয়ে নিতে আদালতের দেয়া আদেশ তারা হাতে পাননি। তবে সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুত বিভাগ তাদের চিঠি দেয়ায় বিষয়টি কেন্দ্রীয় অফিসকে অবহিত করা হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশনা পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পল্লী বিদ্যুতের বরিশাল আঞ্চলিক অফিসের ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার শঙ্কর কুমার কর বলেন, তারাও আদালতের আদেশের বিষয়ে কোন কাগজপত্র পাননি। তবে সড়কের ওপর থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটি সরিয়ে নিতে সিটি কর্পোরেশনের প্রেরিত চিঠি পেয়ে বিষয়টি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত এলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন জনস্বার্থে সড়কের বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ চেয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ সড়কের ওপর থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটি সরিয়ে নেয়ার জন্য রুল জারি করেছেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সচিব, বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
এমনকি এ আদেশ দুই মাসের মধ্যে বাস্তবায়নে বিবাদীদের সহযোগিতা করতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
