ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে মশার দাপটে অতিষ্ঠ নগরজীবন

প্রকাশিত: ০৮:৪২, ২৩ মার্চ ২০১৯

 রাজশাহীতে মশার দাপটে অতিষ্ঠ নগরজীবন

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী নগরীতে বেড়েছে মশার উপদ্রব। মাত্রাতিরিক্ত মশার উপদ্রবে মানুষের নিদ্রায় এখন রফাদফা। বড় বড় ভবনের ৮ তলা ৯ তলাতেও পৌঁছেছে মশাদের দৌরাত্ম্য। স্বাভাবিকভাবে ভবনের ওপরের দিকে মশা কম থাকে, অথচ ওপরেও উঠে গেছে মশা। আর নিচের তলার অবস্থাটা তো দিনে রাতে সমান। সবখানেই নগরবাসী অতিষ্ঠ মশার উপদ্রবে। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসাতেও মশার বিচরণে জর্জরিত নগর জীবন। বাসা-বাড়ি, মেস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মশার উপদ্রবের কথা জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। নগরীর প্রত্যেকটা মেসের বর্ডারদের নিত্যদিনের সঙ্গী মশার কামড়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্লাসে মশার কামড় হজম করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। রাজশাহী কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান পলাশ জানান, মশার কামড়ে ক্লাসে বরাবরই মনোযোগ নষ্ট হয়। এমনকি মশার কামড়ে অতিষ্ঠ। বিষয়টা নিয়ে বিব্রত খোদ রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ। তবে তার একার পক্ষে মশা সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। একই অবস্থা রাজশাহী কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসিক হলগুলোতে। রাজশাহী কলেজের মুসলিম হোস্টেল, হিন্দু হোস্টেল, রাজশাহী কলেজ মহিলা হোস্টেল, রহমতুন্নেছা হোস্টেল প্রত্যেকটি হলেই মশার কামড়ে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা। আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ তারা। মশারি টানিয়ে, কয়েল জ্বালিয়ে, ফ্যান চালিয়ে কাথা মুড়ি দিয়ে মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে প্রাণান্ত চেষ্টা করেন তারা। তবে খুব একটা লাভ হয় না তাতেও। এই সমস্যা সমাধানে কলেজ প্রশাসনসহ নগর কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ আশা করছেন তারা। মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের রোগীরাও। দিনের বেলাতেও বড় বড় মশার কামড়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন রোগী ও তার আত্মীয় স্বজনেরা। রাতের বেলা জরুরী বিভাগে ঢু মারলে দেখা যায়, মশারির পাশাপাশি কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাচ্ছেন সবাই। এরপরেও রাতের বেলা মশার কামড়ে ঘুম ভেঙ্গে যায় বলে অভিযোগ করেন দুর্গাপুর উপজেলার তেবিলা গ্রামের বাসিন্দা বাবর আলী। সরকারী হাসপাতালের বাইরে বেসরকারী হাসপাতালেও একই অবস্থা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আব্দুল হাকিম তার বোনকে ভর্তি করেছেন নগরীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে। সে জানায়, মশার অত্যাচারে দিনের বেলাতেও টেকা যায় না। রাজশাহীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা মিনহাজ তৌহিদ বলেন, দিনে দিনে বেড়েই চলেছে মশার অত্যাচার। ঘরে বাইরে সবখানেই মশার অত্যাচার। এখন নগরীর একটি প্রধান সমস্যা মশা। আমাদের চাওয়া নিয়মিত মশা নিধন অভিযানের পাশাপাশি বিশেষ কোন পদক্ষেপ ও পদ্ধতি যেন রাসিক গ্রহণ করে। তবে মশার উপদ্রব কমাতে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে চালিয়েছেন ক্রাশ প্রোগ্রাম। ক্রাশ প্রোগ্রামের অধীনে সম্প্রতি পরিষ্কার করেছেন রামেক হাসপাতাল এলাকা। রাসিকের প্যানেল মেয়র-১ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, মশা নিধনে আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নেয়া হয়েছে। নগরী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে প্রতি ওয়ার্ডে ১০ জন ও কেন্দ্রীয়ভাবে ৩০ জন অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়ে ক্রাশ প্রোগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। যেসকল স্থানে মশার লার্ভা তৈরি হয়, সেসকল স্থান, ড্রেন, নর্দমা পরিষ্কার করা হচ্ছে। মশা নিধনের নিয়মিত প্রক্রিয়া হিসেবে কেরোসিন, পোড়া মবিল ও ডিজেলের মিশ্রণ স্প্রে অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও ভবিষ্যতে প্রয়োজন অনুযায়ী আরও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মোঃ মামুন বলেন, নগরীজুড়ে মশার আধিক্য একটু বেশি মনে হচ্ছে। মশার নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম চলমান রয়েছে। নগরীজুড়ে মশার লার্ভা তৈরি হয় এমন স্থানে কেরোসিন ও ডিজেলের মিশ্রণ স্প্রে করা হচ্ছে।
×