ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ইউরেনিয়াম

প্রকাশিত: ০৮:২৮, ২৩ মার্চ ২০১৯

 ইউরেনিয়াম

বাঙালীর জীবনে ইংরেজী শব্দ ‘ইউরেনিয়াম’ অপ্রচলিত হলেও তা এখন প্রচলিত শব্দ হিসেবে উঠে এসেছে। বিশেষ করে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে। পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন এই কেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হতে যাচ্ছে ‘ইউরেনিয়াম।’ আর তা এদেশে উৎপাদিত কোন জ্বালানি নয়। নির্মাতা দেশ রাশিয়া থেকে আমদানি করতে হবে। এ জন্য দুই দেশের মধ্যে প্রাথমিক চুক্তিও হয়েছে। শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ২০২৩ সালে এই কেন্দ্র হতে জাতীয় গ্রিডে দুই হাজার চার শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত যুক্ত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিবিড় তত্ত্বাবধানে ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ প্রকল্পের আওতাধীন এই কেন্দ্রের ২৭ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গত বছর ৩০ নবেম্বর এই কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের চুল্লির জন্য কংক্রিটের মূল স্থাপনা নির্মাণের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পরমাণু থেকে বিদ্যুত উৎপাদনের দেশসমূহের ক্লাবে প্রবেশ করে পারমাণবিক বিশ্ব কাতারে আরও একধাপ অগ্রসর হচ্ছে। এই কেন্দ্র নির্মাণে নিরাপত্তার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সব ‘সেফটির’ মানদ- ও ‘গাইডলাইন’ এবং বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন ও বিধিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হচ্ছে। এ ছাড়াও রুশ ফেডারেশন, আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক স্থানীয় ও নিজস্ব জনবলের মাধ্যমে কারিগরি মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে এর কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। ১৯৬১ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ১৯৬৪ সালে কেন্দ্রের জন্য যে সব যন্ত্রপাতি জাহাজাযোগে পাঠানো হয়, পাকিস্তানী সামরিক জান্তা শাসক তাদের সুবিধার জন্য তা চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবর্তে করাচী বন্দরে নিয়ে যায়। আর বাঙালীর স্বপ্নভঙ্গ ঘটে। শেখ হাসিনা ২০১০ সালের ২১ মে কেন্দ্র বাস্তবায়নে দৃঢ় পদক্ষেপ নেন। তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে দেখা করে এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা চান। দু’দেশের মধ্যে একটি ‘ফ্রেমওয়ার্ক’ চুক্তিও সই হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর দুই হাজার চার শ’ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ এক হাজার কোটি টাকা। মূল পর্বের কাজ বাস্তবায়নে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে রাশিয়া চার শতাংশ হারে সুদে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৯০ শতাংশ, ঋণ দিচ্ছে। উৎপাদনে গেলে ৩০ বছরে রাশিয়াকে এই অর্থ ফেরত দিতে হবে। এই কেন্দ্র হতে এক ইউনিট বিদ্যুত মিলবে সাড়ে তিন টাকায়। বর্তমানে কেন্দ্র নির্মাণে রুশ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশী কর্মী মিলে এক হাজারের বেশি লোক দিনরাত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। মালামাল পরিবহনে ২২ কিলোমিটার পৃথক রেললাইনও হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের কৃতিত্ব শেখ হাসিনার নিজস্ব। তিনি জাতিকে যেমন স্বপ্ন দেখান, তেমনি স্বপ্ন পূরণও করেন।
×