ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বোয়িং কি টিকে থাকবে?

প্রকাশিত: ০৮:২৬, ২৩ মার্চ ২০১৯

 বোয়িং কি টিকে থাকবে?

পাঁচ মাসের মধ্যে ভয়াবহ দুটি বিমান দুর্ঘটনার পর ব্যাপক চাপে রয়েছে বোয়িং কোম্পানি। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগছে, বোয়িং কি টিকে থাকবে। কোম্পানিটির সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বিমান বিশ্বব্যাপী এয়ারলাইন্সগুলো না উড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে বোয়িংয়ের ভবিষ্যত। দুটি দুর্ঘটনায় বিমানের ৩৪৬ আরোহী নিহত হন। ইথিওপীয় এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৩০২ বিমানটি উড্ডয়নের মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে অস্বাভাবিক গতিতে চলতে থাকে। এরই মধ্যে বিমানটি কয়েকশ’ ফুট ওপরে উঠে যায়। বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ বিমানটির পাইলট ইয়ার্ড গেটাসে বুঝতে পারেন যে, কোন একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। রেডিওর মাধ্যমে তিনি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের কাছে আদ্দিস আবাবায় ফেরত আসতে বার্তা পাঠান। তাকে ফেরত আসার অনুমতি দেয়া হয় এবং তিনি ফিরে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু এক মিনিট পরেই ফ্লাইট ৩০২ রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। বিমানটি উড্ডয়নের মাত্র ছয় মিনিটের মধ্যে এয়ারপোর্টের ৩০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে বিধ্বস্ত হলে এর ১৫৭ আরোহীর সবাই নিহত হন। বিমানটি কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবি যাচ্ছিল। গত পাঁচ মাসের মধ্যে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ বিমানের দ্বিতীয় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এর আগে গতবছরের অক্টোবরে ইন্দোনেশিয়ায় লায়ন এয়ারের বোয়িং ৭৩৭ দুর্ঘটনায় ১৮৯ আরোহী নিহত হন। এ দুটি দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে বিমানটির নতুন ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম- ম্যানুয়েভারিং ক্যারেক্টারিসটিকস অগমেন্টেশন সিস্টেমকে (এমসিএএস) সন্দেহ করা হচ্ছে। এর ফলে বিমানটি যখন ওপরের দিকে উঠতে যায়, তখন এর অগ্রভাগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিচের চলে যায়। সম্প্রতি বোয়িং জানায়, মার্কিন কেন্দ্রীয় বিমান চলাচল প্রশাসন (এফএএ) বোয়িং ৭৩৭ বিমানের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারির পর তারা তাদের বোয়িং সিরিজের ৩৭১টি বিমানের কার্যক্রম স্থগিত করে। এর আগে বহু দেশ বোয়িং বিমান না উড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বোয়িং বিমানের ফ্লাইট সিস্টেমের সফটওয়্যার আপডেট না করা পর্যন্ত সেগুলো উড্ডয়ন থেকে বিরত থাকবে। আর এসব করা হতে পারে এ মাসের মধ্যেই। আর বোয়িং যেহেতু তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পণ্যটির সমস্যা উদঘাটন করেছে, সেহেতু বিশ্বব্যাপী এর প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ গত ৫০ বছর ধরে বোয়িং ৭৩৭ বিমান তালিকায় সব সময় সর্বাগ্রে ছিল। এই ৭৩৭ বোয়িং বিমান কোম্পানির সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বিমানও। বোয়িংয়ের নতুন সংস্করণ ‘ম্যাক্স’ আগের মডেলগুলোর চেয়ে জ্বালানি সাশ্রয়ীও। আর এই বিমানটির জন্য ৬০ হাজার কোটি ডলারের অর্ডার ছিল। একজন এ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বোয়িংয়ের কাছে এই বিমানটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটির পাঁচ হাজার অর্ডার ছিল।’ শিকাগোর এই বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির আগামী কয়েক মাস খুব কঠিন সময় যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ আইনগত বিষয় ও অর্ডার বাতিলের হুমকি ক্রমেই বাড়ছে। বিমান দুর্ঘটনার পর দিন শেয়ার মার্কেট খোলার পর আগের সপ্তাহ থেকে এর ভ্যালু আড়াই হাজার কোটি ডলার কমে যায়। বোয়িং কোম্পানিটিকে তাদের অর্ডার রক্ষা করতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। কারণ কয়েকটি বড় ক্রেতা দুর্ঘটনার পর থেকে অর্ডার বাতিলের হুমকি দিচ্ছে। গতমাসে ভিয়েটজেট তাদের অর্ডার দ্বিগুণ করেছিল। তারা জানায়, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা গেলে তারা তাদের পরিকল্পনা নিয়ে ফের সিদ্ধান্ত নেবেন। এছাড়া রাশিয়ার উটেয়ার, কেনিয়া এয়ারওয়েজ ও লায়ন এয়ারও তাদের অর্ডার পুনর্বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছে। একটি সূত্র জানায়, ‘বাণিজ্যিক বাস্তবতা হচ্ছে, অর্ডার বাতিল না করতে বোয়িং ক্রেতাদের সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দেবে। বোয়িং কোম্পানির শেয়ার ও ম্যাক্স ৭৩৭ বিমানের যাত্রীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কী পদক্ষেপ নেয় সেটা দেখা যেতে পারে। এটা কঠিন একটা বিষয়। তবে বড় বাস্তবতা হচ্ছে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ-পশ্চিম ম্যাক্সের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। এদিকে সুনাম ও বাণিজ্যিক সঙ্কট সত্ত্বেও অনেক বিশেষজ্ঞ ধারণা করছেন যে, বোয়িং এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবে। কারণ ৭৩৭ ম্যাক্স যে ধরনের সমস্যার মুখোমুখি এ রকম টেকনিক্যাল সমস্যা তারা আগেও মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। এর আগে ২০১৩ সালে ব্যাটারি ক্যাচিংয়ে আগুন লাগার কারণে এফএএ বোয়িং কোম্পানির ৭৮৭ ড্রিমলাইনার না উড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরে তারা সমস্যাটি শনাক্ত করতে সমর্থ হন। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, আদ্দিস আবাবা ও লায়ন এয়ার ফ্লাইট ৬১০ দুর্ঘটনার মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে মিল রয়েছে এর ফলে বিশ্বব্যাপী নীতি নির্ধারকরা বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান না উড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। বোয়িংয়ের দুর্দশার শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। তখন বোয়িংয়ের সবচেয়ে বড় ইউরোপীয় প্রতিদ্বন্দ্বী এয়ারবাস নতুন দিয়ে ‘এ-৩২০নিও’ পুনরায় চালুর ঘোষণা দিয়েছিল।-গার্ডিয়ান
×