ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আরিফ হোসাইন হিয়া

পিতা মাতার গুরুত্ব

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ২১ মার্চ ২০১৯

পিতা মাতার গুরুত্ব

কালের নিয়মে আমরা সবাই একদিন বৃদ্ধ হব, যৌবনের সোনালি দিন পেরিয়ে বার্ধক্যের শীতল রাত সবার জীবনেই কম-বেশি আসবে, এই সত্যটা আমরা অনেকেই উপলব্ধি করতে পারি না। যৌবনের আনন্দ, ব্যস্ততা আমাদের এতই মাতিয়ে রাখে যে বার্ধক্যকে এক অসম্ভব পরিণতি মনে হয়। তার চেয়েও বড় ব্যাপার হলো, যৌবনে বা পরিণত বয়সে মানুষের দায়িত্ব থাকে অনেক বেশি। অনেক সময় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বা অপরাধবোধ থাকা সত্ত্বেও জীবনের অন্যান্য প্রয়োজন মিটিয়ে বৃদ্ধ বাবা, মায়ের সেবা যত্ন করার সৌভাগ্য সবার হয় না। বিভিন্ন ধর্মে মানুষকে বার বার করে মনে করিয়ে দিয়েছে বৃদ্ধ মা-বাবার দেখাশোনা করতে। মানবতার ধর্ম মনে করিয়ে দিয়েছে তাদের জন্যই আমরা জীবন পেয়েছি আর আজ আমরা আমাদের এই দায়িত্বের টানাপোড়েনে প্রায়ই সমালোচনা শুনি বৃদ্ধাশ্রমগুলো কত খারাপ এবং একমাত্র নিষ্ঠুর সন্তানরাই পারে বাবা, মাকে সেখানে রেখে আসতে। আজ আমি সেই আলোচনায় যাব না। তবে, বাবা, মায়ের দায়িত্ব নিয়ে যে সন্তানরা অনেক সময় বুঝে বা না বুঝে, তাদের অনেক মানসিক এবং শারীরিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায় । সত্যিই বিবেকের কাছে আজ আমরা পরাজিত আর বড়ই অকৃতজ্ঞ। সন্তানের প্রতি মায়ের ভালবাসার একটি গল্প বলছি কোন এক অসহায় মা তার সন্তানকে নিয়ে শহরে থাকতেন। ছেলের জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখে আসছে একটা চোখ না থাকাতে মাকে কুৎসিত দেখায়। মা একদিন স্কুলের পাশ দিয়ে কোথাও যাওয়ার সময় ছেলেকে দেখতে গেলেন। এই কুৎসিত দেখানোর কারণে সহপাঠীরা হাসাহাসি করবে এই লজ্জার ভয়ে ছেলে সেদিন দেখা করেনি। মা কিছু না বলে ফিরে এলেন। ছেলে এক সময় বড় হয়ে চাকরি পেল। বিয়ে করে মায়ের আর কোন খোঁজখবর না রেখে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিল। কয়েক বছর পর ছেলে তার স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রদের পুনর্মিলনীতে দাওয়াত পেয়ে এলো। এই ফাঁকে মাকে দেখতে গেলে জানতে পারে যে ভাড়া বাসায় মা থাকতেন সেখানে এখন অন্য কেউ থাকে। পাশের বাড়ির মায়ের বয়সী এক মহিলা তাকে একটা চিঠি দিয়ে বললেন, তোমার মা মারা যাওয়ার আগে তোমাকে এটা দিতে বলে গেছেন। চিঠিতে লেখা ছিল- বাবা! আমি জানি আমার একটা চোখ না থাকাতে কুৎসিত দেখানোর কারণে অন্যদের মতো তুমিও আমাকে পছন্দ করতে না। আমার চোখ না থাকার কারণটা জানতে পারলে তুমি নিশ্চয়ই আমাকে আর ঘৃণা করতে না। তুমি ছোট থাকা অবস্থায় তোমার আব্বু, আমি আর তুমিসহ একদিন এক গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হই। সেদিন তোমার আব্বু মারা যান, আমি গুরুতর আহত হই আর তোমার একটি চোখ চিরতরে নষ্ট হয়ে যায়। অপারেশন করিয়ে আমি আমার একটি চোখ তোমাকে দিয়ে দিই। এই ঘটনা আর কেউ জানে না এবং আমি কাউকে বলিনি। মায়ের ভালবাসার ইতিহাসে এমন হাজারো নজির রয়েছে। আমি মনে করি এসব অন্যায়ের অবসান দরকার। পিতা-মাতার দায়ভার সন্তানকেই নিতে বাধ্য করতে হবে। অন্যথায় কঠোর শাস্তির বিধান করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা কোনদিন কোন পিতা-মাতার করুণ পরিণতি দেখতে চাই না। সকল সন্তান তার পিতা-মাতার প্রতি আন্তরিক হোক- এই কামনা করি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×