ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

আশিতম জন্মোৎসবে সংবর্ধিত অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ

প্রকাশিত: ১১:১৮, ২০ মার্চ ২০১৯

আশিতম জন্মোৎসবে সংবর্ধিত অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গবেষণার ভুবনে বিস্তীর্ণ তার পরিধি। বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান থেকে হাজার বছরের বাংলা সংস্কৃতি নিয়ে রয়েছে তার শ্রমসাধ্য কাজ। লিখেছেন মাইকেল মধুসূদন থেকে কাজী নজরুলের অনন্য জীবনীগ্রন্থ। ইতিহাস, সাহিত্য, ভাষাতত্ত্ব, অভিধানসহ নানা বিষয়ে রয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা গ্রন্থ। এভাবেই বিচিত্র বিষয়ে ধাবিত হয়েছে অধ্যাপক গোলাম মুরশিদের গবেষক ও লেখক সত্তা। আগামী ৮ এপ্রিল আশিতম জন্মর্দিনে পদার্পণ করবেন এই বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। সেই আগাম জন্মদিনটি উদ্যাপিত হলো মঙ্গলবার। এদিন বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে গোলাম মুরশিদের ৮০তম জন্মোৎসব ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত ‘গোলাম মুরশিদ সংবর্ধনা গ্রন্থ’ এবং তার লেখা ‘শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয় ফুলেল শুভেচ্ছা। যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ চর্চা পাঠচক্র ও প্রকাশনা সংস্থা কথাপ্রকাশ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই গোলাম মুরশিদকে নিবেদিত রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন লাইসা আহমদ লিসা। শ্রুতিমধুর কণ্ঠে গেয়ে শোনান ‘সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে’ ও ‘তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা’। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী, একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। অনুভূতি ব্যক্ত করেন গোলাম মুরশিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন অধ্যাপক স্বরোচিষ সরকার। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কথাপ্রকাশের প্রকাশক জসিমউদ্দিন। অনুভূতি প্রকাশে গোলাম মুরশিদ বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে আমি লেখালেখি করেছি। আর যা কিছু লিখেছি সবটাই সাধারণের উপযুক্ত করে। এ কারণেই হয়তো সাধারণ পাঠকরা আমাকে ভালবাসেন ও সমাদর করেন। তাই প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির বিষয়ে আমার কোন আক্ষেপ নেই। যে স্বীকৃতিতে মনটা ভরে যায় সেই সাধারণ মানুষের স্বীকৃতি পেয়েছি। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। বিধাতা আমাকে কম প্রতিভা দিয়েছেন। এ কারণেই অনেক পরিশ্রমের ও ঘষামাজার মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করেছি। সামনেই আশি বছরে পদার্পণ করছি বলে আমার কাজ থেমে থাকবে না। আমার অনেক কাজ বাকি রয়েছে। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত কাজ করে যেতে চাই। কাজের মাধ্যমেই জীবনকে উপভোগ করতে চাই। আগামীতে রবীন্দ্রনাথের নারী এবং বাংলা গান ও বঙ্গীয় স্থাপত্যকীর্তি নিয়ে লিখতে চাই। উপন্যাস লিখতে চাই, আত্মজীবনী লিখতে চাই। নিজের সম্পর্কে অন্য অতিথিদের প্রশংসার জবাবে বিনয়ী এই গবেষক বলেন, আমার অনুকূলে তারা যা বললেন সেটাকে অপপ্রচার মনে হচ্ছে। আমি অতি সাধারণ এক মানুষ। নিজেকে এই অসাধারণ আয়োজনের অনুপযুক্ত বলে মনে হচ্ছে। আনিসুজ্জামান বলেন, গোলাম মুরশিদের সঙ্গে আমার ছয় দশকের পরিচয়। এই সময়ের মধ্যে তার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তবে তার গবেষণাসত্তার কোন পরিবর্তন হয়নি। গবেষণার ক্ষেত্রে নিষ্ঠা ও অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে তিনি দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ রেখেছেন। নজরুল, মাইকেল মধুসূদন থেকে শুরু করে বাঙালী নারীর ইতিহাস নিয়ে তিনি চমৎকার গবেষণা করেছেন। গবেষণার ক্ষেত্রে তিনি নতুন পথ দেখিয়েছেন। তিনি একজন বিরল প্রজাতির গবেষক। বন্ধু গোলাম মুরশিদের সঙ্গে নানা সময়ের স্মৃতিচারণ করে হাসান আজিজুল হক বলেন, তিনি একজন প্রথম শ্রেণীর ও প্রধান গবেষক এবং অনন্য জীবনী লেখক। তার বই শুধু সুখপাঠ্য নয়, একই সঙ্গে শিক্ষণীয়। বাংলা ভাষা, ব্যাকরণ, জীবনীসহ বিবিধ বিষয়ে তিনি লিখেছেন এবং তার গদ্যভাষা অনবদ্য। সেখানে বাহুল্য থাকে না। যা কিছু লেখেন নির্মোহ এবং স্বচ্ছতা নিয়ে লেখেন। তাই তার লেখা জীবনীগ্রন্থে শুধু প্রশংসা বাক্য নয়, প্রকৃত জীবনকে খুঁজে পাওয়া যায়। মানুষ হিসেবে তিনি কথা কম বলেন, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন না। কিন্তু তার মতো কোমল হৃদয়ের মানুষ খুবই কম আছেন। হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, তার লেখার মাধ্যমে মধুসূদন ও নজরুলকে ভিন্নভাবে জানার সুযোগ হয়েছে। নজরুলকে নতুনভাবে অনুভব করেছি তার লেখায়। শামসুজ্জামান খান বলেন, গোলাম মুরশিদ এমন একজন গবেষক যাকে নিয়ে গর্ব করা যায়। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান’ প্রকাশের সময়কার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, বাংলা একাডেমির গবেষণায় তিনি আধুনিকতার ছাপ রেখেছেন।
×