ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খুনখারাবিসহ বেআইনী কর্মকাণ্ডে সহায়ক

চার লাখ রোহিঙ্গার হাতে বাংলাদেশী সিম

প্রকাশিত: ১১:১৪, ২০ মার্চ ২০১৯

চার লাখ রোহিঙ্গার হাতে বাংলাদেশী সিম

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ রোহিঙ্গা শিবিরে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ না হওয়ায় নানা অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিপূর্বে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলে সরকারী ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে কয়েকটি এনজিও। মোবাইল ফোনে বেআইনী কর্মকাণ্ড ঘটছে মর্মে নিশ্চিত হয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যেন মোবাইল নেটওয়ার্ক সুবিধা না পায়, সেজন্য অপারেটরগুলোকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোকে এ বিষয়ে নির্দেশনা সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় মোবাইলের নেটওয়ার্ক চালু থাকায় রোহিঙ্গারা আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপের (জঙ্গী) সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। নেট কানেকশনের মাধ্যমে অনলাইন যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করেছে রোহিঙ্গারা। দেশে-বিদেশে থাকা আত্মীয় স্বজনদের খবরাখবর নিতেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছেনা তাদের। মোবাইলফোনে কথা বলে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ আনছে বিদেশ থেকে। ভয়ঙ্কর ডাকাত সর্দার রোহিঙ্গা জঙ্গী আবদুল হাকিম, মৌলবি শফিক, আবদুর রহিম, আয়াছুর রহমান, হাফেজ হাসিমসহ প্রথম সারির রোহিঙ্গা জঙ্গীদের সঙ্গে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা যোগাযোগ করছে ফোনে। এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করলে সাধারণ রোহিঙ্গাদের আন্দোলনমুখী করে তোলার প্ররোচনা দিচ্ছে কয়েকটি এনজিও। কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা হারুনুর রশিদ বলেন, শুনেছি বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিবে। এরকম হলে আমরা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব। ক্যাম্পে আগুন লাগলে, দুর্ঘটনা ঘটলে, কাউকে হাসপাতালে নিতে হলে বা কোন প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নিতে হলে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারবনা। এখন নেটওয়ার্ক আছে বলেই সব করতে পারছি। বালুখালী ক্যাম্পের রাজিয়া বেগম বলেন, আমার এক ছেলে মালয়েশিয়া ও মেয়ের জামাই সৌদি আরব আছে। তারা সেখানে কাজকর্ম করে হুন্ডিতে টাকা পাঠায়। কাজ থেকে ফ্রি হলে ভিডিও কল দিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলে। মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ হলে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা পেতে কষ্ট হবে। থাইংখালী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা আবদুল জলিল বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এখনও রোহিঙ্গা আছে, বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে নেটওয়ার্ক থাকার কারণে আমরা মিয়ানমারে তাদের খবরাখবর নিতে পারি। কখন কি হচ্ছে জানতে পারি। কিন্তু নেটওয়ার্ক না পেলে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। জানা গেছে, ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর তা-বের চিত্র মোবাইলে সংরক্ষণ করে রেখেছে রোহিঙ্গারা। সেগুলো এখন নতুন কা- বলে চালিয়ে দিয়ে ক্যাম্পে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে প্রত্যাবাসনবিরোধী রোহিঙ্গারা। উখিয়া টেকনাফের ৩০টি ক্যাম্পে নেটওয়ার্ক থাকায় রোহিঙ্গারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বিভিন্ন তথ্য পাচার করছে। বিভিন্ন স্থানে ঘাপটি মেরে থাকা রোহিঙ্গা জঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্যাম্পে ভুয়া খবর ও গুজব ছড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা। ৩০টি ক্যাম্পে অন্তত ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশী সিম ব্যবহার করছে । জনপ্রতিনিধিরা বলেন, আগে বাংলাদেশের জাতীয় সনদ না থাকলে মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সিম ক্রয় করা মুশকিল ছিল। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম বিক্রয় করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু বর্তমানে হাটে বাজারে পথেঘাটে বিভিন্ন কোম্পানির সিম বিক্রেতারা মোবাইল সিম বিক্রি করছে মাত্র ২৫ থেকে ৫০ টাকায়। এতে রোহিঙ্গারা অহরহ সিম কিনে অপব্যবহার করছে। এটি ভবিষ্যত নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ বলে জানান তারা। ইতিপূর্বে দেয়া বিটিআরসির চিঠিতে জানানো হয়, বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন সিম বিক্রি ও ব্যবহারের তথ্য পেয়েছে। চিঠিতে অপারেটরগুলোকে মোবাইল নেটওয়ার্ক যেন মিয়ানমার পর্যন্ত না পাওয়া যায় এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মোবাইল নেটওয়ার্ক সুবিধা বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু অপারেটরগুলো সরকারের ওই নির্দেশ এ পর্যন্ত উপেক্ষা করে চলেছে।
×