ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাহমুদার চোখে মঙ্গলে প্রাণ খুঁজবে নাসা

প্রকাশিত: ১২:২৯, ১৯ মার্চ ২০১৯

মাহমুদার চোখে মঙ্গলে প্রাণ খুঁজবে নাসা

সকালের সূর্য যদি দিনের ইঙ্গিত দেয় তবে বাঙালী কন্যা মাহামুদা সুলতানা যে অনেক দূর যাবেন তা বোঝা যাচ্ছিল শুরুতেই। নিজের প্রতিভার কথা জানান দিয়েছিলেন নাসার সেরা তরুণ উদ্ভাবকের পুরস্কার জয় করে। মাহামুদা সুলতানার জন্ম রাজশাহীতে। বাবা গোলাম জাকারিয়া মা মেহেরুননেসা। প্রাথমিক শিক্ষাও সেখানে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বাবার বদলির সুবাদে মাধ্যমিক শিক্ষা রংপুরে। সেখান থেকে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার লা মিরাডা হাইস্কুল থেকে স্কুল শিক্ষা সম্পন্ন। ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি এবং একই বিষয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ২০১০ সালে। সে বছরই যোগ দেন নাসা গোডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে। মাহমুদা এবার নির্মাণ করেছেন অতি ক্ষুদ্র অত্যাধুনিক এক সেন্সর। আরশোলার মতো সেন্সর বানানোর প্রয়োজনটা নাসার অনেক দিনের। ভিন গ্রহে প্রাণের খোঁজে সেই হাতিয়ারটাই নাসার হাতে তুলে দিলেন সুলতানা। সেন্সরটি আকারে আমাদের হাতের সবচেয়ে ছোট আঙ্গুলটির (কনিষ্ঠা) মতো। ৩ ইঞ্চি লম্বা, ২ ইঞ্চি চওড়া। মানে, চওড়ায় পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের চেয়ে একটু বেশি। এত ছোট সেন্সর এর আগে আর পাঠানো যায়নি মহাকাশে। গ্যাস বা বাষ্পে খুব সামান্য পরিমাণে জলের কণা, খনিজ পদার্থ বা প্রাণসৃষ্টির কোন উপাদান অথবা জৈব অণু থাকলে সেই গ্যাস বা বাষ্পের রং বা আচার-আচরণ কিছুটা বদলে যায়। সুলতানার প্রযুক্তির কৃতিত্ব, তার বানানো সেন্সরটি চট করে সেই রদবদলটা ধরে ফেলতে পারে। আর সঙ্গে সঙ্গে তাকে সিগন্যালে বদলে ফেলে তা গ্রাউন্ড স্টেশন বা পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলা উপগ্রহকে জানিয়ে দিতে পারে। তার উদ্ভাবিত এই সেন্সর হার মানায় আরশোলাকেও। আরশোলার তার শুঁড় দিয়ে আশপাশের সব কিছুকে এক মুহূর্তে বুঝে ফেলার যে আশ্চর্য ক্ষমতা রয়েছে, মাহমুদার সেন্সর তার ‘জাদু’ সম্ভবত বুঝে ফেলেছে! তাই যাকে প্রায় দেখাই যায় না, এমন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কোন বস্তুর ক্ষমতা কতটা হতে পারে, এবার তা বাংলার সুলতানার কাছ থেকে শিখছে নাসা, তার বানানো সেন্সরের মাধ্যমে। ব্রহ্মা-ে ভিন গ্রহে প্রাণ খুঁজতে সুলতানাই আপাতত বড় ভরসা নাসার। সুলতানাই তার প্রযুক্তির মাধ্যমে নাসাকে শিখিয়েছেন ছোট হতে হতে কত ছোট হওয়া যায়, আর অত ছোট হয়েও কী ভাবে তাকে বড় কাজে লাগানো যায়। যা আগামী দিনে চাঁদ ও মঙ্গলে প্রাণ বা তার উপাদানের খোঁজ-তল্লাশে মহাকাশচারীদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠতে চলেছে। সুলতানার উদ্ভাবিত প্রযুক্তির নাম- ‘থ্রিডি-প্রিন্টেড সেন্সর টেকনোলজি।’ অত্যন্ত কম চাপ ও তাপমাত্রায় কোন গ্যাস বা বাষ্প খুব সামান্য পরিমাণে থাকলেও, তার মধ্যে প্রাণের উপাদান লুকিয়ে আছে কিনা, আছে কিনা জলের কণা, এ্যামোনিয়া, মিথেন বা হাইড্রোজেনের অণু, সুলতানার প্রযুক্তির দৌলতে এ বার তারও ‘গন্ধ’ পাওয়া যাবে। আর ‘নাকে’ আসা সেই ‘গন্ধ’ সুলতানার বানানো সেন্সর বেতার (ওয়্যারলেস) এ্যান্টেনার মাধ্যমে পৃথিবী বা গ্রাউন্ড স্টেশনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলা উপগ্রহকে জানিয়ে দিতে পারবে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে। যা এর আগে কখনও সম্ভব হয়নি। সুলতানার কথায়, ‘এটা আসলে একটা প্রিন্টার। কাগজ বা নোট যেভাবে ছাপানো হয় প্রিন্টারে, ঠিক সেই পদ্ধতিতেই চলে আমাদের সেন্সর। তবে কাগজ বা নোট ছাপানোর জন্য যেমন প্রিন্টারে কালি লাগাতে হয়, আমাদের প্রিন্টারে তা লাগাতে হয় না। আমাদের থ্রিডি-প্রিন্টেড সেন্সরে কালির বদলে লাগানো হয় বিভিন্ন ধরনের ন্যানো ম্যাটেরিয়াল। বা অত্যন্ত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পদার্থ।’ সুলতানার বানানো সেন্সরের কোন একটি স্তর যদি কোন একটি জৈব অণু বা প্রাণের উপাদানের ‘গন্ধ’ পায়, তা হলে অন্য স্তরটির নাকে পৌঁছবে অন্য কোন জৈব অণু বা প্রাণের অন্য কোন উপাদানের গন্ধ। ফলে, একটি সেন্সর একই সঙ্গে ভিন গ্রহে খুব সামান্য পরিমাণ গ্যাস বা বাষ্পে প্রাণসৃষ্টির বিভিন্ন ধরনের উপাদানের খোঁজ করতে পারবে। তাছাড়া এটি হাল্কা এবং চালাতে বিদ্যুত শক্তিও লাগে সামান্য। মহাকাশে দ্রুত ছুটে চলার জন্য খুবই উপযোগী। সুলতানা বললেন, ‘এখন আরও নতুন নতুন ন্যানো ম্যাটেরিয়াল নিয়ে আর সেন্সরের ওপর তাদের স্তরের সংখ্যা বাড়িয়ে, কমিয়ে ওই সেন্সরের সেনসিটিভিটি কয়েক গুণ বাড়িয়ে তোলাটাই আমার এক ও একমাত্র লক্ষ্য।’ আশা করতে দোষ কী বাঙালী কন্যা মাহমুদার চোখে ভিন গ্রহে প্রাণ খুঁজে পাবে নাসা। পেলে সেটি হবে আমাদের সবার জন্য একটি বড় অর্জন।
×