ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সারতাজ আলীম

পাখি রক্ষার শপথ নিয়ে ‘সেতুবন্ধন’

প্রকাশিত: ১২:২৯, ১৯ মার্চ ২০১৯

পাখি রক্ষার শপথ নিয়ে ‘সেতুবন্ধন’

৩২০ জন তরুণ। লক্ষ্য আর স্লোগান একটাই। ‘পাখি বাঁচাও, প্রকৃতি বাঁচাও।’ শুরুটা হয়েছিল এক তরুণের পাখির প্রতি ভাললাগা, ভালবাসা এবং কিছু করার চেষ্টা থেকে। দিন দিন বনভূমি আর গাছপালা উজাড় হওয়া এবং পাখি নিধন তীব্রভাবে নাড়া দিচ্ছিল তাকে। ভাবছিলেন, তবে কি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত বাংলা একসময় পাখি শূন্য হয়ে যাবে, বনের বদলে পাখির স্থান হবে জাদুঘরে মমি করা অবস্থায়। নীলফামারীর সৈয়দপুরের আলমগীর সিদ্ধান্ত নিলেন এভাবে চলতে দেয়া যায় না, কাউকে তো সামনে এসে দাঁড়াতেই হবে। সেই সিদ্ধান্তের ফলÑ ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু সেতুবন্ধনের। কয়েক বন্ধুকে নিয়ে প্রথমে তিনি পাখির আবাসস্থল নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেন। বিশেষভাবে বানানো কলস গাছে স্থাপন করা শুরু করে স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনটি। ঝড়-বৃষ্টিতে যেন কলসিতে পানি না জমে সে জন্য ছোট ছোট ছিদ্রও করে দেয়া হতো। খরচ বহন করতেন আলমগীর নিজেই। ছোটবেলা থেকেই পাখিপ্রেমী এই তরুণ নিজের উপার্জিত টাকার একটা অংশ রেখে দিতেন পাখির জন্য। কিছুদিন ঘুরতেই দেখা মেলে সফলতার। পাখিরা নির্ভয়ে বাসা বেঁধেছে সেই কলসে। বংশবিস্তার করছে। যাত্রা শুরু এভাবেই। আলমগীর হয়ে ওঠেন পাখিদের বন্ধু। আলমগীর উপলব্ধি করলেন পাখিদের সবচেয়ে বড় শত্রু কিছু মানুষ। এদের একটা বড় অংশই আবার পাখি শিকারকে কোন অপরাধই মনে করে না। শীত আসলেই গুলতি-বাঁটুল দিয়ে পাখি মারার উৎসব লেগে যেত শিশু-কিশোরদের মধ্যে। সেই শিশু-কিশোররাই গুলতি ফেলে এখন দায়িত্ব নিয়েছে পাখি রক্ষার। দৃশ্যপট বদলে গিয়েছে। বন্দুক তো দূরে থাক গুলতি দিয়েও পাখি শিকার করার কথা এখন কেউ ভাবে না। স্কুল-কলেজে, বাড়িতে বাড়িতে এবং এলাকাভিত্তিক চলছে সেতু-বন্ধনের ক্যাম্পেন। সভা-সমাবেশ, লিফলেটও বিতরণ করা হচ্ছে। প্রাণী সংরক্ষণ আইন নিয়েও জানানো হচ্ছে মানুষকে। পাখি সংরক্ষণে শপথ নেয়া স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেতুবন্ধনের প্রতিষ্ঠাতা আলমগীর হোসেন জানান এখন পর্যন্ত ৭০০০ কলসি তারা গাছে লাগিয়েছেন। এখন পর্যন্ত পাখির অভয়ারণ্য তৈরি করেছেন ৪টি। যে কোন পাখিকেই সমান গুরুত্ব দেন তারা। এলাকাবাসীর মধ্যে এখন এতই সচেতনতা তৈরি হয়েছে যে কিছুদিন আগেও অবজ্ঞা করা কাকের দিকেও এখন আর কেউ ঢিল ছুড়ে মারে না। বিগত কয়েক দশক করে আশঙ্কাজনকভাবে কমে আসা শামুকখোল পাখিরও দেখা মিলছে অভয়ারণ্যে। প্রজনন, ঝড়-বৃষ্টির দিনে এই ৪টি অভয়ারণ্য এখন পাখিদের আশ্রয়স্থল। সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে অভয়ারণ্য নিয়ে। অর্থ নিয়ে প্রথমে আশঙ্কা দানা বাঁধলেও পাখির প্রতি ভালবাসাই সেটার সমাধান করে দিয়েছে। সদস্যরা মাসিক ২০ টাকা চাঁদা দিয়ে সচল রেখেছে তাদের প্রাণের সংগঠনকে। যে কোন ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে যে এই উদ্যোগ পুরো উত্তরবঙ্গে ছড়িয়ে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ ছাড়াও অন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করে সেতুবন্ধন। জীববৈচিত্র্য রক্ষার এই উদ্যোগে সেতুবন্ধনকে সহায়তা করছে উপজেলা প্রশাসন। নিয়মিত তাদের কাছ থেকে পরামর্শ পাচ্ছে এই সংঘটি। অদূর ভবিষ্যতে একটি পরিচর্যা কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে বলে জানান আলমগীর। খোলা আকাশে নির্ভয়ে পাখির ডানা মেলে উড়ে যাওয়া- আলমগীরের স্বপ্ন এটাই। স্বপ্ন পূরণ হোক আলমগীরের। পাখিরা পাক নিরাপদ আশ্রয়।
×