ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফুলছড়িতে ভুট্টার বাম্পার ফলনে চাষীদের চোখে আশার আলো

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ১৮ মার্চ ২০১৯

 ফুলছড়িতে ভুট্টার বাম্পার ফলনে চাষীদের চোখে আশার আলো

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা ॥ গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষকদের বছরের একটা সময় সংগ্রাম করতে হয় বন্যার সঙ্গে। তখন বসতভিটা ছেড়ে অনেককেই চলে যেতে হয় অন্য জায়গায়। পানি নেমে যাওয়ার পর শুরু হয় বাড়ি-ঘর মেরামত। তারপর ধীরে ধীরে চাষাবাদে নেমে পড়ে চরের চাষীরা। তাদের জমিতে উৎপাদিত হয় বিভিন্ন ফসল। এসব ফসলের মধ্যে এবার চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। জমির বহুমুখী ব্যবহারকে কাজে লাগাতে কৃষকরা এখন ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে ভুট্টার ফলন অন্য বছরের তুলনায় বেশি হওয়ার আশাবাদী কৃষকরা। স্বল্প খরচে অধিক লাভ ও অল্প পরিশ্রমের কারণে চাষীরা এই ফসল চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ভুট্টা মাড়াইয়ের কাজ শুরু হবে। ভাল বাজার দর পেলে এবার ভুট্টা চাষীদের মুখে হাসির ঝিলিক ফুটবে এমনটাই আশা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। ফুলছড়ি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্র জানায়, জেলার অন্যান্য উপজেলার চেয়ে ফুলছড়ি উপজেলায় এবার অধিক পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। এ উপজেলায় ৪ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। বিগত সময়ে ভুট্টার ভাল ফলন ও দাম আশানুরূপ পাওয়ায় চরাঞ্চলের চাষীরা অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের আলগার চর গ্রামের সাইদুর রহমানের ক্ষেতে ভুট্টা পরিপক্বতা এসেছে। একইভাবে সারির পর সারি কৃষকদের আবাদকৃত ভুট্টার ক্ষেত সবুজবর্ণ থেকে সোনালী বর্ণে রূপান্তরিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদীর চর এলাকায় কৃষকরা যে যেখানে একটু জায়গা পেয়েছে সেখানেই ভুট্টার আবাদ করেছেন। ফুলছড়ি উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিভক্ত ৬টি ইউনিয়নের বেশির ভাগ কৃষক তাদের জমিতে এবার ভুট্টা চাষ করেছেন। এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের জিগাবাড়ী, আলগার চর, পাগলার চর, হরিচন্ডি, বুলবুলির চর, কিশামতধলী, তিনথোপা, ফজলুপুর ইউনিয়নের উত্তর খাটিয়ামারী, দক্ষিণ খাটিয়ামারী, পশ্চিম খাটিয়ামারী, তালতোলা, নিশ্চিন্তপুর, কাবিলপুর, ফুলছড়ি ইউনিয়নের বাজে ফুলছড়ি, কালুরপাড়া, গাবগাছি, টেংরাকান্দি, খোলাবাড়ী, দেলুয়াবাড়ীসহ কঞ্চিপাড়া, উড়িয়া, গজারিয়া ইউনিয়নের কিছু এলাকার অনেক জমিতে ভুট্টার ফলন খুবই ভাল হয়েছে। এসব এলাকার কৃষকরা জানান, ভুট্টা চাষে সেচ কম লাগে, সারের ব্যবহারও কম। কিছুদিনের মধ্যেই ভুট্টা মাড়াই করা হবে। ভুট্টা আবাদ ভাল হলেও একটা আশঙ্কা কৃষকদের মনে বাসা বেঁধেছে- তা হচ্ছে বাজারে সঠিক মূল্য পাওয়া যাবে কিনা। এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের বুলবুলির চর গ্রামের কৃষক হামিদুল ইসলাম জানান, অন্য ফসলের চেয়ে খরচ কম হওয়ায় জমিতে ভুট্টা চাষ করি। যা আশা করছিলাম আবাদ সে রকমই হইছে। এতে খুব খুশি। তার মতে, প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদে খরচ পড়ে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। উৎপাদন হয় প্রায় ৩৫-৪০ মণ ভুট্টা। খরচ বাদে লাভ থাকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এসএম মিজানুর রহমান বলেন, কৃষিবিভাগ থেকে চাষীদের যখন যে পরামর্শ চেয়েছে তা দেয়া হয়েছে। ফসলের রোগ, পোকা মাকড় দমনে চাষীদের গ্রুপ ভিত্তিক সচেতনতা সভা করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি অফিসের দেয়া তথ্যানুযায়ী ভুট্টার বীজ বপন, পরিচর্যা করায় চাষীরা এবার ভুট্টা চাষে লাভবান হবে বলে আশা করছেন তিনি। ফুলছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, উপজেলার চরাঞ্চলে প্রচুর ভুট্টা আবাদ হয়েছে। কৃষকদের পাশাপাশি আমরাও এতে খুব খুশি। কৃষকদের জন্য এবার প্রণোদনা ছিল। সরকার থেকে তাদের বিনামূল্যে বীজ ও সার দিয়েছে। চাষযোগ্য জমিতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উপযুক্ত পরামর্শ দেয়ার ফলে সঠিক সময়ে বীজ বপন করায় এবং নিবিড় পরিচর্যার কারণে এবার ভুট্টা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তিনি জানান, গমের মতো ভুট্টা বাজারে বিক্রি ছাড়াও এর বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। হাইব্রিড ভুট্টা গমের মতো আটা করে খাওয়া যায়। ভুট্টার কচি গাছ গো খাদ্য এবং হাঁস-মুরগি খামারের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। শুকনা গাছ জ্বালানি হিসেবে কাজে লাগানো যায়।
×