ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্বজনদের কাছে তালিকা হস্তান্তর

ক্রাইস্টচার্চ হামলায় নিহত ও নিখোঁজ যারা

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ১৮ মার্চ ২০১৯

ক্রাইস্টচার্চ হামলায় নিহত ও নিখোঁজ যারা

নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদে শুক্রবারের হামলায় ৫০ জন নিহত হয়েছে। পুলিশ জানায়, তারা নিহতদের স্বজনদের কাছে একটি তালিকা হস্তান্তর করেছে যা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ বলেছেন, মৃতদেহ এখনও হস্তান্তর করা হয়নি। কারণ, কর্মকর্তারা প্রত্যেক আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়ার পর মৃতদেহ হস্তান্তর করা হবে। তবে এটা নিশ্চিত যে, তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থেকে আসা এবং তাদের অনেকেই শরণার্থী ছিলেন, যারা ভেবেছিলেন নিউজিল্যান্ডে তাদের একটি নিরাপদ আশ্রয় মিলেছে। কয়েকজন সম্পর্কে তুলে ধরা হলো যারা মৃত কিংবা নিখোঁজ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে। মুসাদ ইব্রাহীম, বয়স ৩ ॥ ডিনস এভিনিউ মসজিদে হামলার পর থেকে মুসাদকে আর দেখা যায়নি। সে তার ভাই আবদিসহ বাবার সঙ্গে বেরিয়েছিল, তারা দুজন পালিয়ে বাঁচতে পেরেছে। পরিবারটি বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছে। কিন্তু তার কোন খবর পাওয়া যায়নি। দাউদ নবী, বয়স ৭১ ॥ হতাহতদের মধ্যে সর্বপ্রথম যাকে শনাক্ত করা হয়েছে তিনি দাউদ নবী। তার জন্ম আফগানিস্তানে। ১৯৮০ সালে সোভিয়েত আগ্রাসন থেকে পালাতে পরিবার নিয়ে নিউজিল্যান্ডে চলে আসেন। তিনি পেশায় একজন প্রকৌশলী ছিলেন। স্থানীয় আফগান এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। হামলাকারী যখন বন্দুক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন দাউদ নবী মসজিদের অন্যদের রক্ষা করতে নিজে সামনে এগিয়ে গিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাইয়াদ মিলানে, বয়স ১৪ ॥ বড় হয়ে ফুটবলার হতে চেয়েছিল কিশোর সাইয়াদ মিলানে। শুক্রবার আল নূর মসজিদে মায়ের সঙ্গে ছিল সে। তার বাবা নিউজিল্যান্ডের সংবাদমাধ্যমকে শনিবার বলেছেন, ‘সে মারা গেছে কি-না এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনও আমরা কিছু শুনিনি, তবে আমি জানি সে চলে গেছে কারণ তাকে দেখা গেছে।’ নাঈম রশিদ, বয়স ৫০ ॥ নাঈম রশিদ পাকিস্তানের এ্যাবোটাবাদ থেকে আসা। তিনি ক্রাইস্টচার্চের একজন শিক্ষক ছিলেন। আল নূর মসজিদে হামলার ভিডিওতে একটি অংশে দেখা গেছে, আল-নূর মসজিদে গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগে নাঈম রশিদ হামলাকারীকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন। তিনি গুরুতর আহত হয়েছিলেন। হাসপাতালে নেয়া হলে তার মৃত্যু হয়। তালহা রশিদ, বয়স ২১ ॥ তালহা ছিলেন রশিদের বড় ছেলে। যখন পরিবারটি নিউজিল্যান্ডে চলে আসে তখন তালহার বয়স ১১ বছর। স্বজন ও বন্ধুদের কাছে জানা গেছে, তালহা সম্প্রতি নতুন একটি চাকরি পেয়েছিল এবং শীঘ্রই তার বিয়ে করার কথা ছিল। রশিদের আহত আরেক ছেলে চিকিৎসাধীন। ফারহাজ আহসান, বয়স ৩০ ॥ ভারতীয় নাগরিক ফারহাজ আহসান হায়দরাবাদ থেকে ১০ বছর আগে নিউজিল্যান্ডে আসেন এবং ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন। তার দুটি শিশু সন্তান রয়েছে। তার মেয়ের বয়স তিন বছর আর ছেলের বয়স মাত্র ছয়মাস। হুসনে আরা, বয়স ৪২ বছর ॥ বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হুসনে আরা আল নূর মসজিদে যখন বন্দুকের গুলির শব্দ শুনতে পান সে সময় তিনি মেয়েদের জন্য নির্ধারিত অংশে ছিলেন। তার স্বামী ফরিদ উদ্দিন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ায় হুইল চেয়ার ব্যবহার করতেন এবং তিনি ছিলেন পুরুষদের কক্ষে। বন্দুকের গুলির শব্দ শুনে তিনি তার স্বামীর খোঁজে ছুটে যান কিন্তু নিজেই গুলিবিদ্ধ হন এবং মারা যান। তার স্বামী বেঁচে আছেন বলে জানা গেছে। ড. আব্দুস সামাদ ॥ আল নূর মসজিদে হামলায় নিহত আরেক বাংলাদেশী হলেন কৃষিবিদ ড. আব্দুস সামাদ। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আব্দুস সামাদ ক্রাইস্টচার্চের লিংকন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করছিলেন। খালেদ মুস্তাফা ॥ সিরিয়ান সলিডারিটি নিউজিল্যান্ড গ্রুপ জানায়, আল নূর মসজিদে হামলায় খালেদ মুস্তাফা মারা গেছেন। মুস্তাফা সিরিয়া যুদ্ধের পর আসা শরণার্থী ছিলেন এবং নিরাপদ স্বর্গ বিবেচনা করে ২০১৮ সালে নিউজিল্যান্ডে যান। তার কিশোর ছেলেদের একজন এখনও নিখোঁজ। আরেক পুত্র মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে এবং শরীরে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। আমজাদ হামিদ, বয়স ৫৭ ॥ পেশায় চিকিৎসক আমজাদ হামিদ প্রতি শুক্রবার আল নূর মসজিদে নামাজ আদায় করতেন। হামলার ঘটনার পর থেকে তার কোন খোঁজ নেই। তিনি মারা গেছেন বলে তার পরিবার আশঙ্কা করছে। ২৩ বছর আগে পরিবারসহ তিনি নিউজিল্যান্ড যান। আফগান নাগরিক, যার নাম ও বয়স অজানা ॥ নিউজিল্যান্ডের আফগান এ্যাসোসিয়েশন জানায়, দ্বিতীয় আরেকজন আফগানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। তার নাম ও বয়স জানা যায়নি। হুসাইন আল-উমারি, বয়স ৩৫ ॥ প্রতি শুক্রবার হুসাইন আল-উমারি আল নূর মসজিদে একবার যাবেনই। তার বাবা-মা জান্না ইযাত এবং হাযিম আল-উমারি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১৯৯০-এর দশকে নিউজিল্যান্ডে আসেন। হামলার পর থেকে ছেলের কোন খবর পাচ্ছেন না বাবা-মা। লাইলিক আব্দুল হামিদ, বয়স অজ্ঞাত ॥ তিনি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ নামেও পরিচিত। এই হামলায় প্রথম কোন ইন্দোনেশীয় ব্যক্তি হিসেবে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। যে দুটি মসজিদে হামলা হয়েছে সেখানে আরও সাতজন ইন্দোনেশীয় ছিলেন। আরও চারজন পাকিস্তানী, বয়স অজ্ঞাত ॥ পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। তাদের নাম- সোহায়েল শাহীদ, সাইদ জাহানদাদ আলী, সাইদ আরীব আহমেদ এবং মাহবুব হারুন। তাদের বয়স জানা যায়নি। আরও তিনজন নিখোঁজ, তবে এখনও তাদের শনাক্ত করা যায়নি। চারজন মিসরীয় ॥ মিসরের জনশক্তি ও অভিবাসন মন্ত্রণালয় চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। তাদের নাম মুনির সুলেমান, আহমেদ জামাল উদ্দিন আবদেল ঘানি, আশরাফ আল- মোরসি এবং আশরাফ আর-মাসরি। জর্দানের চারজন ॥ জর্দানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের চার নাগরিকের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে। তবে কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি। আরও পাঁচজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিখোঁজ হিসেবে যাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে তার মধ্যে জর্দান, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ফিজি এবং সৌদি আরবের নাগরিক রয়েছেন। সোমালিয়ার কমপক্ষে চারজন হামলায় নিহত হয়েছে। যে মসজিদ দুটিতে হামলা চালানো হয়েছিল তার একটি আল নূর যৌথভাবে পরিচালনার দায়িত্বে সোমালিয়া রয়েছে। পাঁচজন ভারতীয় ॥ ক্রাইস্টচার্চে নিহতদের মধ্যে পাঁচজন ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন। রবিবার নিউজিল্যান্ডের ভারতীয় হাইকমিশন তাদের পাঁচজন নাগরিক নিহতের খবর নিশ্চিত করে। নিহতরা হলেন মাহেবুব খোকার, রমিজ ভোরা, আসিফ ভোরা, আনসি আলীবাবা ও ওজাইর কাদির। -বিবিসি অনলাইন
×