ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একাই হত্যাকান্ড চালায় ট্যারেন্ট

প্রকাশিত: ০৯:০১, ১৮ মার্চ ২০১৯

একাই হত্যাকান্ড চালায় ট্যারেন্ট

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের দুটি মসজিদে শুক্রবারের ওই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ একজনই ঘটিয়েছে বলে দেশটির পুলিশ জানিয়েছে। ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলীয় নাগরিক স্বঘোষিত শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট এই হামলার দৃশ্য সরাসরি ফেসবুকে প্রচার করে। নিউজিল্যান্ড পুলিশের ভাষ্য, অস্ট্রেলিয়ার ট্যারেন্ট একাই দুটি হামলা চালিয়েছে। হামলার ঘটনায় অন্য যাদের আটক করা হয়, তাদের সম্পৃক্ততা নেই বলে ধারণা করছে পুলিশ। নিউজিল্যান্ডের পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ বলেন, ব্রেন্টন ট্যারেন্ট একাই দুটি হামলা চালিয়েছে। ব্রেন্টন ছাড়া আটক তিনজনের হামলার সঙ্গে কোনপ্রকার সম্পৃক্ততা নেই বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এটা পুলিশের চূড়ান্ত মতামত নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। মাইক বুশ আরও বলেন, আমরা শুক্রবার জরুরী টেলিফোন পাওয়ার ৬ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাই। মাইক বুশ জানান, আল নূর ও লিনউড মসজিদে হামলায় হতাহত হওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ দ্রুত কাজ করছে। এটা খুবই সংবেদনশীল প্রক্রিয়া। সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিষয়েও আমাদের সতর্ক থাকতে হচ্ছে। শুক্রবারের ওই নৃশংস হত্যাকান্ডের কয়েক মিনিট আগে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের দফতরে ট্যারেন্ট একটি ইশতেহার প্রেরণ করে। জেসিন্ডা আরডার্নও এই ধরনের নথি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, ওই নথিতে হামলার স্থান এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ ছিল না। শুধু জেসিন্ডা আরডার্ন নন শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের আধা-সামরিক বাহিনীর ৩০টির বেশি ঠিকানায় এই ইশতেহার ই-মেল করে ঘাতক ট্যারেন্ট। -খবর বিবিসি ও গার্ডিয়ান অনলাইনের। তবে ট্যারেন্টের পাঠানো ওই ই-মেল বার্তায় হামলার স্থান এবং এ বিষয়ে কোন বিস্তারিত তথ্য ছিল না। প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা বলেন, অন্য ৩০ জনের মতো আমার কাছেও ই-মেলটি আসে। এর নয় মিনিটের মাথায় ঘটনাটি ঘটে যায়। এর দুই মিনিটের মাথায় আমি আমার অফিস কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি আধা-সামরিক বাহিনীকে অবহিত করতে বলি। তবে ওই ই-মেলে বিস্তারিত তথ্য থাকলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেয়া যেত। তিনি আরও বলেন, আমি ই-মেলটি পড়েছিলাম। এরপর হামলার মাত্র কয়েক মিনিট আগে আমি এটি গণমাধ্যম ও আধা-সামরিক পর্যটন অফিসে পাঠাই। শুধুমাত্র আদর্শগত কারণে হামলাটি করা হয়েছে যা অবশ্যই বেদনাদায়ক। জেসিন্ডা আরডার্ন বলেন, ঘাতক ট্যারেন্টের বিচার শেষে তাকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়ে দেয়ার জন্য আমাকে বলা হয়েছে। আমি এ বিষয়ে কোন হস্তক্ষেপ চাই না। নিউজিল্যান্ডের নিজস্ব আইনে ট্যারেন্টের বিচার হবে। হত্যাকান্ডের দৃশ্য সরাসরি ফেসবুকে প্রচার বিষয়ে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ধরনের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার নিয়েও কথা বলা হবে। আমি ইতোমধ্যে ফেসবুকের প্রধান অপারেটিং অফিসার শেরিল শ্যান্ডবার্গের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কারণ নিউজিল্যান্ডের এই ঘটনা অবশ্যই আমাদের দেশের জন্য সুখকর নয়। আর এই ধরনের ঘটনা বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও ঘটতে পারে। তাই যখন এই ধরনের ঘটনা ঘটে গেছে এর এখনই বিচার করতে হবে। জেসিন্ডা আরডার্ন শুক্রবারের হামলায় ওয়েলিংটনের লিনউড এলাকার কিলবার্নি মসজিদ পরিদর্শন করেন। এ সময় নিহতদের দাফন বাবদ ১০ হাজার ডলার অনুদানের ঘোষণা দেন। শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চ শহরের দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে দেশটির অস্ত্র আইনকে আরও কঠোর করার ঘোষণ দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আরডার্ন। ওই নারকীয় হত্যাযজ্ঞে অন্তত ৫০ জন নিরপরাধ প্রাণ হারায়। বহু লোক আহত হয়। হতাহতের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। ঘাতক ট্যারেন্টকে শনিবার আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তিনি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে। তার মধ্যে কোন অনুতাপ দেখা যায়নি। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের নাম উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। আরও কয়েকটি অভিযোগ আনার প্রস্তুতি চলছে। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে ৩ বছরের শিশু থেকে ৭৭ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত। হামলায় এদের কেউই রেহাই পায়নি। নিহতদের মধ্যে অন্তত চারজন নারী রয়েছে। নিহতদের পরিবারের সদসদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী একথা জানা গেছে। কর্তৃপক্ষ এখনও নিহতদের সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করেনি। হামলার ঘটনায় আরও একটি লাশ মেলার পর নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ জন। ময়নাতদন্ত ও পরিচয় শনাক্ত করার কাজ শেষে রবিবারই মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর শুরু হওয়ার কথা।
×