ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের বিনিয়োগ চায় চীন

প্রকাশিত: ০৮:২২, ১৬ মার্চ ২০১৯

বাংলাদেশের বিনিয়োগ চায় চীন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ উৎপাদনশীল খাতে এবার বাংলাদেশের বিনিয়োগ চায় চীন। দেশটির প্রত্যাশা, চীনের বিদেশী বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণের নীতিমালার সুযোগ গ্রহণ করবে বাংলাদেশী উদ্যোক্তরা। উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানায় বিনিয়োগ করে সেই পণ্য বাংলাদেশে নিয়ে এসে বাজারজাতকরণের পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত জ্যাং জো। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আমদানিকৃত পণ্যের একটি বড় অংশ আসছে চীন থেকে। রয়েছে বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি, যা বাংলাদেশের অনুকূলে নয়। অপরদিকে, বাংলাদেশের বড় বড় প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ রয়েছে। চীনের ২০০শ’র বেশি উদ্যোক্তা এদেশের ছোট ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ করেছেন। শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ওসামা তাসীর এর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করতে এসে চীনা রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন। ওই সময় তিনি আরও বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সব সময় বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় অংশীদার চীন। এদেশের সরকারী প্রকল্পের পাশাপাশি বেসরকারীখাতে চীনের বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ রয়েছে। এমন কোন পণ্য নেই যা চীনে তৈরি হয় না। এছাড়া চীনের মতো এত কম দামে ভাল ও উন্নতমানের পণ্যসামগ্রী আর কোন দেশ সরবরাহও করতে পারছে না। এ কারণে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিবছর বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় বাংলাদেশের রফতানি বাড়ছে না চীনে। ফলে বানিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। তিনি বলেন, এই ঘাটতি দূর করতে হলে চীনে বিনিয়োগ করে প্রয়োজন। চাহিদা মতো পণ্য উৎপাদন করে সেই পণ্য এদেশে নিয়ে এসে বিক্রি করা হলে এদেশের মানুষ আরও কম দামে পণ্য সামগ্রী কিনতে পারবে। জ্যাং জো বলেন, সমুদ্র অর্থনীতি খাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। এ খাতের বিকাশে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন একান্ত অপরিহার্য হয়ে পড়ছে। সম্প্রতি চীন সরকার চীনে বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে নতুন বৈদেশিক বিনিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে চীন সরকার কর্তৃক গৃহিত ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড কার্যক্রমটি চলমান রয়েছে। এই রোড চালু হলে দ্রুত বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়বে। তিনি জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয়, সামনের দিনগুলোতে এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতের বৃহৎ প্রকল্পগুলোর উন্নয়ন ও বিনিয়োগে চীন বৃহত্তম অংশীদার। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের আমদানিকৃত পণ্যের সবচেয়ে বড় অংশ আসে চীন থেকে। এ কারণে চীনের সঙ্গে সবচেয়ে বড় বাণিজ্য ঘাটতি বাংলাদেশের। চীনের পর ভারত থেকে আমদানির বড় অংশ আনা হয়। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অফিসিয়াল বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১২ বিলিয়ন ডলার। এর বাইরেও আনঅফিসিয়ালী বড় অঙ্কের বাণিজ্য রয়েছে চীনের সঙ্গে। সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশ-চীনের বাৎসরিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশাবাদ ব্যক্ত করেন জানান, ২০২১ সালের মধ্যে দুদেশের মধ্যকার বাণিজ্যের পরিমাণ ১৮বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে। তিনি বলেন, তথ্য-প্রযুক্তি খাতে চীন সারা পৃথিবীতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এদেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতে আরও বেশি চীনের বিনিয়োগ প্রয়োজন। ডিসিসিআই সভাপতি জানান, বাংলাদেশ প্রতিবছর চীনে মৎস ও হিমায়িত মৎস, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, শাক-সবজি, টেক্সটাইল ফাইবার্স, পেপার ইয়ার্ন, ওভেন ফেব্রিক্স, ইলেকট্রিকাল মেশিনারিজ এবং আসবাবপত্র প্রভৃতি পণ্য রফতানি করে থাকে। চীন ও আশিয়ান অঞ্চলের দেশসমূহে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ‘লুক ইষ্ট’ নীতিমালা গ্রহণ করেছে। তিনি তৈরি পোশাক খাতের বহুমুখীকরণে চীনের বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবি জানান।
×