ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছেন মুশফিক

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ১৬ মার্চ ২০১৯

 নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছেন মুশফিক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ক্রাইস্টচার্চের হাগলি ওভাল মাঠের নিকটবর্তী মসজিদ আল নূরে বন্দুকধারীর হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকজনের হতাহতের ঘটনা ঘটে শুক্রবার জুম্মার নামাজের আগে। ঠিক সে সময়ই মসজিদে নামাজ পড়তে পৌঁছেছিলেন সফরকারী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ক্রিকেটাররা। কিন্তু স্থানীয় এক নারীর সতর্কবাণীতে মসজিদে না ঢুকে দৌড়ে মাঠে ফিরে আসেন মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আর তামিম ইকবালরা। সতীর্থ ক্রিকেটাররা নিরাপদ থাকায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ইনজুরির কারণে নিউজিল্যান্ডে যেতে না পারা টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সতীর্থদের যে মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজ আদায় করার কথা, শুক্রবার সেখানে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। একটুর জন্য বেঁচে গেছেন তামিম-মুশফিকরা। সুস্থ থাকলে হয়তো আজকে সাকিবও তাদের সঙ্গেই থাকতেন। অন্য সতীর্থদের মতো মর্মান্তিক কিছু মৃত্যু চিৎকার শুনতেন কাছ থেকে। তবে শেষ পর্যন্ত সতীর্থরা নিরাপদ থাকায় সাকিব টুইটারে তার প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, ‘ক্রাইস্টচার্চের সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। শুধু এটাই বলতে পারি, মহান আল্লাহপাকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তিনি আমার ভাই ও সতীর্থদের বাঁচিয়ে দিয়েছেন আজকে। আলহামদুলিল্লাহ।’ মানসিক ধাক্কা খেয়েছেন ক্রিকেটাররা ॥ ভিল্লাভারায়ন ক্রাইস্টচার্চের মসজিদ আল নূরে ভয়াবহ বন্দুক হামলায় বেশ কয়েকজন হতাহত হন। গুলি চলার সময়ই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিকাংশ সদস্য ওই মসজিদের সামনে ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত কোন ক্ষতির সম্মুখীন না হয়ে নিরাপদেই আছেন ক্রিকেটাররা। তাদের বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং কোচ মারিও ভিল্লাভারায়ন বলেছেন, ‘তারা সবাই তখন বাসে ছিল। যখন গুলি শুরু হয়েছিল তখনই বাসটি ওটার সামনে থেমেছিল। তারা বিশাল ধাক্কা খেয়েছে, কিন্তু সবাই বেশ ভাল আছে।’ পরে মারিও দলের এক ক্রিকেটারের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেন। সে প্রসঙ্গে ভিল্লাভারায়ন বলেন, ‘ঘটনার পর একজনের (দলের খেলোয়াড়) সঙ্গে কথা বলেছি। সে কিছু না দেখলেও গুলির শব্দ শুনেছে। কোচিং স্টাফ হোটেলে অবস্থান করছে। গুলির শব্দ শুনেই খেলোয়াড়রা দৌড়ে ফিরে আসে।’ নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছেন মুশফিক ক্রাইস্টচার্চে হাগলি ওভাল মাঠের খুব কাছে আল নূর নামের একটি মসজিদে শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা দেড়টার দিকে সন্ত্রাসী হামলা হয়। এ ভেন্যুতে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু হবে আজ। সে জন্য অনুশীলন শেষ করে ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। সেটি দেড়টায় শেষ হওয়ার পর মসজিদে জুম্মা পড়তে বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের আসার কথা ছিল। কিন্তু রিয়াদের সংবাদ সম্মেলন ১০ মিনিট দেরি হওয়াতেই হয়তো প্রাণে বেঁচে গেছেন ক্রিকেটাররা। তারা যখন মসজিদের সামনে পৌঁছেন তখন হামলা চলছিল। এরপরও টিম বাসের পাশাপাশি আরেকটি গাড়ি থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় এক মহিলা বেরিয়ে সতর্ক করেন বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের। সে জন্যই বেঁচে যান ক্রিকেটাররা। তাই নিজেদের মহাভাগ্যবান মনে করছেন মুশফিকুর রহীম। হামলার সতর্কবাণী শুনেই ক্রিকেটাররা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস থেকে নেমে মাঠের দিকে হাঁটতে শুরু করেন। সবার চোখে মুখে তখন আতঙ্ক। কারণ দূরত্বটা একেবারে কম নয়। সেটি কমাতে রাস্তা ছেড়ে সবাই নেমে পড়েন হাগলি পার্কে। পার্কের মধ্য দিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে সবাই মাঠে ফেরেন। মাঠে ফিরে সবাই ড্রেসিংরুমে ঢুকে একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। হাঁটতে হাঁটতে ক্রিকেটাররা বলছিলেন, অধিনায়ক রিয়াদের সংবাদ সম্মেলন একটু দেরিতে শেষ না হলেই সর্বনাশ হয়ে যেত। সংবাদ সম্মেলন শেষ করে যেতে যেতে ১টা ৪০ বেজে যায়। বাংলাদেশ দলের বাস আর পাঁচ মিনিট আগে মসজিদে পৌঁছে গেলে ক্রিকেটাররা সন্ত্রাসী হামলার সময় মসজিদের ভেতরেই থাকতেন। তাহলে কি হতে পারত, আর যা দেখেছেন- দুটি মিলিয়ে মুশফিক হাঁটতে হাঁটতেই অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন। এরপর ড্রেসিংরুমে ফিরে প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ অবস্থায় কাটান সবাই। পরে মুশফিক টুইট করেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে গুলি থেকে আল্লাহ আমাদের বাঁচিয়েছেন, আমরা ভীষণ ভাগ্যবান। আর কখনও এমন কিছু দেখতে চাই না। আমাদের জন্য দোয়া করুন।’ ভীতিকর অভিজ্ঞতা, বেঁচে গেছে গোটা দল ॥ তামিম ক্রাইস্টচার্চের মসজিদ আল নূরে বন্দুকধারী গুলি চালিয়ে যাচ্ছে জানার পরই বাস থেকে নেমে হাগলি পার্কে ঢুকে পড়েন বাংলাদেশী ক্রিকেটাররা। সে সময় অন্যদের সঙ্গে দৌড়াতে দৌড়াতে নির্ভরযোগ্য ওপেনার তামিম ইকবাল বলতে থাকেন, ‘যা দেখেছি, এরপর আমি আর এক মুহূর্ত এখানে থাকতে চাই না। এই টেস্ট খেলার প্রশ্নই আসে না। আমি দেশে ফিরে যাব।’ পরে ড্রেসিংরুমে দীর্ঘক্ষণ কাটানোর পার নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের (এনজেডসি) থেকে নিয়োজিত নিরাপত্তাকর্মীরা নিচ্ছিদ্র প্রহরায় ক্রিকেটারদের হোটেলে পৌঁছে দেন। এ বিষয়ে পরে টুইটারে তামিম লিখেছেন, ‘বন্দুকধারীদের গুলি থেকে বেঁচে গেছে গোটা দল। ভীতিকর অভিজ্ঞতা, আমাদের জন্য প্রার্থনা করুন।’ ঘটনা জানার পরই পাকিস্তানের সাবেক অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি যোগাযোগ করেন তামিমের সঙ্গে। এ বিষয়ে টুইটারে আফ্রিদি লিখেছেন, ‘তামিমের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। বাংলাদেশ দল ও কোচিং স্টাফরা সবাই নিরাপদে আছে জেনে স্বস্তি পাচ্ছি।’
×