ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবাদী ডাক্তার মনীষা চক্রবর্তী

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ১৬ মার্চ ২০১৯

প্রতিবাদী ডাক্তার মনীষা চক্রবর্তী

সাহসী ও প্রতিবাদী এক নারীর নাম মনীষা চক্রবর্তী (২৯)। নারীর প্রতি সহিংসতা, সবধরনের নিপীড়ন ও বৈষম্যের লড়াই করে যাচ্ছেন ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী। শুধু নারীদের অধিকার আদায়ই নয়; তনু হত্যার প্রতিবাদে বরিশালে ছাত্র ধর্মঘটসহ ধারাবাহিক আন্দোলন, সারাদেশে সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব, নারী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন ও শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে তিনি সব সময়ই রাজপথে ছিলেন সোচ্চার ও অগ্রণী ভূমিকায়। মেডিক্যালে লেখাপড়া শেষ করে ৩৪তম বিসিএসে স্বাস্থ্য ক্যাডারে সহকারী সার্জন পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন মনীষা চক্রবর্তী। যার হাতে থাকার কথা ছিল-স্টেথোস্কোপ সার্জারির যন্ত্রপাতি। যার থাকার কথা ছিল হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে জনগণের সেবায়। সেই মনীষা চক্রবর্তী আজ রাজপথে-রাজনীতির মাঠে। সরকারী চাকরিতে যোগ না দিয়ে তিনি বিনা পয়সায় গরিব মানুষদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। নারী, শিশু ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে আন্দোলনে থাকেন। এ কারণে বরিশালের শ্রমিকদের কাছে তিনি বেশ জনপ্রিয়। শ্রমিক ও বস্তিবাসীর কাছে তিনি ‘দিদি’ নামে পরিচিত। আবার কারও কাছে তিনি পরিচিত গরিবের ডাক্তার নামে। ডাঃ মনীষা চক্রবর্তীর জন্ম বরিশাল নগরীর শ্রীনাথ চ্যাটার্জী লেনের পৈত্রিক বাড়িতে। নগরীতেই তার বেড়ে ওঠা। তার বাবা আইনজীবী তপন কুমার চক্রবর্তী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা। মা রিনা চক্রবর্তী গৃহিণী। তিন বোনের মধ্যে ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী সর্বকনিষ্ঠ। মনীষা চক্রবর্তী দাদা বিশিষ্ট আইনজীবী সুধীর কুমার চক্রবর্তীকে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় স্থানীয় রাজাকার বাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করে। অসংখ্য প্রগতিশীল মানুষদের সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠা ডাঃ মনীষার ছোটবেলা অতিবাহিত হয় ফুপা লেখক ও নিঃসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মার সংস্পর্শে। এইচএসসি পাসের পর মনীষা চক্রবর্তী ভর্তি হন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজে। ওই কলেজে পড়ার সময় তিনি যুক্ত হন বাসদের রাজনীতিতে। তিনি বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বরিশালের সদস্য সচিব। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে তিনি এমবিবিএস পাস করেন। ৩৪তম বিসিএসে স্বাস্থ্য ক্যাডারে সহকারী সার্জন পদে নিয়োগ পেলেও ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী সরকারী চাকরিতে যোগ না দিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা, সব ধরনের নিপীড়ন ও বৈষম্য, নারী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন এবং শ্রমজীবী মেহনতী মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। রাজনীতিতে নয় বছরের পথচলায় নানা চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়েছে ডাঃ মনীষা চক্রবর্তীকে। বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে রাজপথে নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করা নারী সংখ্যা খুব বেশি নেই। একজন নারী হয়ে রাজপথে আন্দোলন, সংগ্রাম, হরতালে পিকেটিং অনেকেই ভাল চোখে দেখেনি। প্রথম প্রথম নারী নেতা বলে অনেকেই ব্যঙ্গ করত। হাসি-তামাশাও করেছে অনেকে কিন্তু লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন মনীষা। কারও সমালোচনাকে তিনি পাত্তা দেননি। প্রতিবাদী কর্মকা-ের কারণে হামলা, মামলা ও কারাভোগও করতে হয়েছে ডাঃ মনীষা চক্রবর্তীকে। বরিশাল নগরী থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা উচ্ছেদের প্রতিবাদে গত বছরের ১৯ এপ্রিল শ্রমিকরা শহরে মিছিল বের করেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন মনীষাও। -খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল থেকে
×