স্ক্যানারের নিচে ছবি
দুষ্প্রাপ্য ঐতিহাসিক বস্তু বা শিল্পকর্মের গোপন রহস্য উদ্ঘাটন করছে নতুন ধরনের এক স্ক্যানার যন্ত্র। গ্রাফিন নামের বিশেষ উপাদানের দৌলতেই এমনটা সম্ভব হচ্ছে। স্পেনের ওভিয়েদো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়াররা এই স্ক্যানার তৈরি করেছেন। টেলিযোগাযোগ ইঞ্জিনিয়ার সামুয়েল ভের ওয়েইয়ে বলেন, ‘গ্রাফিন তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়, খুব সহজেই নিম্ন মাত্রার তরঙ্গদৈর্ঘ্য থেকে উচ্চমাত্রার তরঙ্গদৈর্ঘ্য সৃষ্টি করতে পারে। গ্রাফিন আমাদের শিল্পকর্মের গভীরে উঁকি দিয়ে তাতে ব্যবহৃত উপাদানের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করতে পারে।’ ই-গ্রাফিন স্ক্যানারের সাহায্যে পাওয়া ছবির সঙ্গে ইমেজ প্রসেসিং প্রযুক্তি ও থ্রিডি হাই পারফরমেন্স স্ক্যানিং-এর সমন্বয়ে ত্রিমাত্রিক বস্তু সৃষ্টি করা হয়। ফলে সহজেই তার গোপন রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা চালানো যায়।
কম্পিউটার বিজ্ঞানী ইয়ানিক ফ্রানকেন বলেন, ‘এখানে শিল্পকর্মের আসল রং দেখা যাচ্ছে। ভারচুয়াল পদ্ধতিতে তা আলোকিত করা হয়েছে এবং ক্যামেরার সাহায্যে রেকর্ড করা হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন স্ক্যানগুলো সমন্বয় করাই সবচেয়ে বড় প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ। স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ক্যানগুলো পরস্পরের ওপর ঠিকমতো বসাতে হবে। শূন্য দশমিক ২ মিলিমিটারের বেশি ত্রুটি থাকলে রংগুলি বিকৃতভাবে ফুটে উঠবে।’
হাল্কা ও সস্তা সমাধানসূত্র
দ্বিমাত্রিক চিত্র ও ত্রিমাত্রিক শিল্পকর্ম বিশ্লেষণ করতে এক ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্পের আওতায় বিজ্ঞানীরা এই স্ক্যানার ডিজাইন করেছেন। শিল্প সংরক্ষণ ও পুনর্গঠনের কাজে যে ধরনের বহুমুখী গুণাগুণের প্রয়োজন, গবেষকদের মতে এই স্ক্যানারের মধ্যে সেই ক্ষমতা রয়েছে। প্রকল্পের সমন্বয়ক খাবিয়ের গুতিয়েরেস মেয়ানা বলেন, ‘বর্তমানে শিল্পকর্ম বিশ্লেষণ করতে যে সব স্ক্যানার ব্যবহার করা হয়, সেগুলো খুব ব্যয়বহুল। আমাদের প্রযুক্তি সে তুলনায় অনেক সস্তার। ফলে আরও ছোট ও হালকা এই স্ক্যানার সহজে মিউজিয়াম বা গবেষণাগারে নিয়ে গিয়ে কাজে লাগানো যাবে।’
এই যন্ত্র পরীক্ষার জন্য আস্তুরিয়াস মিউজিয়াম অফ ফাইন আর্টসের সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞরা গবেষকদের ক্যানভাস সরবরাহ করেছেন। স্ক্যানারের মাধ্যমে মিউজিয়ামের সংগ্রহে রাখা মূল্যবান ঐতিহাসিক শিল্পকর্ম বিশ্লেষণ করেও চমকপ্রদ ফল পাওয়া গেছে। সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ মার্তা ফ্লোরেস ইগুয়াল মনে করেন, ‘আমরা বার্নিশের গভীরতা ও রঙের স্তর আবিষ্কার করতে পারি। মূল চিত্রের নিচে প্রাথমিক কোন চিত্র ছিল কিনা, কোন উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে, সে সবও দেখতে পারি। পেইন্টিংয়ের মধ্যে বার্নিশ, বাইন্ডার ও পিগমেন্টের মতো যে সব উপাদান রয়েছে, স্ক্যানার তাও শনাক্ত করতে পারে কিনা, আমরা তা জানার চেষ্টা করছি।’
স্মার্টফোনের প্রয়োগ
গ্রাফিন স্ক্যানারের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে স্মার্টফোনের জন্য একটি অগমেন্টেড রিয়ালিটি অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। তার সাহায্যে মিউজিয়ামের দর্শকরা আরও গভীর স্তরে প্রবেশ করতে পারবেন বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। খাবিয়ের গুতিয়েরেস মেয়ানা বলেন, ‘এই এ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারী পেইন্টিং-এর ভেতরের স্তর দেখতে পারবেন। যেমন এই চিত্রে রঙের স্তরের নিচে রহস্যজনক সংখ্যা ৩৪’ চোখে পড়েছে। একটি আচ্ছাদন আসলে সবুজ রঙের ছিল বলেও আমরা জানতে পেরেছি।’ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে গ্রাফিন স্ক্যানার ও তার প্রয়োগ বাজারে আসতে চলেছে বলে গবেষকরা আশা করছেন।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: