ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মানসিক চাপ প্রতিরোধে

প্রকাশিত: ১২:০৫, ১৫ মার্চ ২০১৯

মানসিক চাপ প্রতিরোধে

দৈনন্দিন জীবনযাত্রার যাঁতাকল থেকে মুক্তি পেতে কে না চায়! মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস নামের এক পদ্ধতির মাধ্যমে মানসিক চাপ কমিয়ে বেশ কিছু উপকার পাওয়া যায় বলে এর প্রবক্তারা দাবি করেন। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের মধ্যে অনেকের জীবনই ব্যস্ততায় ভরা। পর পর কাজ স্থির করা থাকে। দৈনন্দিন জীবনে এমন চাপ কাকে বলে, টোবিয়াস হাড়ে হাড়ে তা জানেন। চাকরি ও দুই শিশু সন্তান সামলাতে গিয়ে তিনি নিজেকে নিঃশেষিত মনে করতেন। তিনি বলেন, ‘তখন অবশ্যই বুঝতে পেরেছিলাম, যে কিছু একটা পরিবর্তন আনতে হবে। আমার পক্ষে আগামী কয়েক বছর এভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। পরিবর্তনের জোরালো ইচ্ছা জেগেছিল। টোবায়াস তখন জীবনযাত্রার গতি কমানোর চেষ্টা শুরু করলেন। এ বিষয়ে খোঁজখবর করতে গিয়ে ‘মনোযোগ’ নামের এক পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি জানতে পারেন। এভাবে নাকি স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমানো সম্ভব। এই পদ্ধতিতে স্ট্রেস কাটাতে চিরায়ত ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ও যোগাসনের সমন্বয় করা হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে মার্টিনা ফ্রিৎস এই পদ্ধতি শেখাতে কোর্সের আয়োজন করে আসছেন। তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে মনোযোগের অর্থ নির্দিষ্ট এক ধরনের অস্তিত্ব। মনেপ্রাণে এই মুহূর্তে এখানেই থাকতে হবে। অন্য কোন বিষয়ে ভাবলে চলবে না। আমাদের চিন্তাভাবনা সাধারণত অতীত বা বর্তমানে বিরাজ করে। ফলে এই মুহূর্তে এবং এখানে যা ঘটছে, প্রায়ই আমরা তা ভুলে যাই।’ আট সপ্তাহের কোর্সে টোবিয়াস নিঃশ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম ও এমন সব কায়দা শিখেছেন, যা দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করা যায়। মনোবিজ্ঞানীরাও তাঁদের চিকিৎসায় এই ‘মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস’ প্রয়োগ করেন। ১০ বছর ধরে জার্মানির মাইনৎস শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে গবেষণা চলছে। মনোবিজ্ঞানী সান্ড্রা শ্যোনেফেল্ডার তাঁর গবেষণায় ‘মাইন্ডফুলনেস প্র্যাকটিস’-এর প্রভাব চাক্ষুষ করে তোলার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, ‘একদিকে বলা যায় মনোযোগের ব্যায়ামের মাধ্যমে স্ট্রেসের মাত্রা সত্যি কমানো সম্ভব। কর্টিসলের মতো স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়। তা ছাড়া বহুকাল ধরে ‘মাইন্ডফুলনেস’ চর্চা করলে মস্তিষ্কের কাঠামোয়ও একটি পরিবর্তন দেখা যায়। ওয়ার্কিং মেমারি, যার সাহায্যে আমরা তথ্য মনে রাখি ও বিশ্লেষণ করি, তার উন্নতি ঘটে। এমনকি এর ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি বা তা বেড়ে যেতে পারে।’ বয়স এ ক্ষেত্রে কোন অন্তরায় নয়। সব বয়সের মানুষই স্ট্রেস থেকে মুক্তি চান। মাইন্ডফুলনেস বিশেষজ্ঞ হিসেবে মার্টিনা ফ্রিৎস মনে করেন, ‘অনেক মানুষ মনে করেন, যে তাঁরা জীবনে চাপের মুখে রয়েছেন, তাঁদের চালনা করা হচ্ছে। মনে হয়, তাঁদের আর কোন নিজস্ব সত্তা নেই, শুধু মানুষ হিসেবে সচল থাকতে হয়। তাঁরা নিজেদের সমাজের চাকা হিসেবে দেখেন। নিজেদের জীবনের রাশ হাতে নেবার স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।’ এই মুহূর্তে ফিরে আসা, নিজের শরীরের প্রতি মনোযোগ ফিরিয়ে আনা, সচেতনভাবে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া জরুরী। দৈনন্দিন জীবনে বাসন ধোয়া অথবা দাঁত মাজার সময়েও এমনটা করা সম্ভব। ভবিষ্যতের কথা না ভেবে শুধু এখনকার অনুভূতিগুলোর প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। কঠিন পরিস্থিতি প্রতিরোধ করতে অথবা স্ট্রেস কমাতে দৈনন্দিন জীবনের গড্ডলিকা প্রবাহ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মার্টিনা ফ্রিৎস বলেন, ‘আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যা কিছু ঘনঘন ঘটে, তাকে অটোপাইলট বলা যায়। আমরা ঘুম থেকে উঠি, সকালে একই কাজ সারি। স্নান করি, জামাকাপড় পরি, তারপর কাজে বের হই। আমাদের নিজস্ব ছন্দ রয়েছে। অনেকে প্রবল যানজট পার হয়ে গন্তব্যে পৌঁছান। তারপর আবেগের ওঠানামাও রয়েছে। কেউ গালিগালাজ করেন। অনেক কিছুই বার বার ঘটতে থাকে। মানুষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই চক্রে আটকে পড়ে।’ মাইন্ডফুলনেসপ্যায়াম করেন। সেই মুহূর্তে সেখানেই থাকেন তিনি।
×