ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দোলায় স্মৃতি বৃদ্ধি

প্রকাশিত: ১২:০৫, ১৫ মার্চ ২০১৯

দোলায় স্মৃতি বৃদ্ধি

কচি শিশুদের যারা লালন পালন করেন তারা ভাল করেই জানেন ঘুম পাড়ানোর সময় তাদের কোলে নিয়ে দুলুনি দিলে কিংবা দোলনায় দোলা দিলে তারা সহজে ঘুমিয়ে পড়ে। এখন দু’দুটো নতুন গবেষণায় দেখা যায় দুলুনিতে ঘুম যে তাড়াতাড়ি আসে তাই শুধু নয়, এতে স্মৃতিশক্তিও বাড়ে। সম্প্রতি ‘কারেন্ট বায়োলজি’ পত্রিকায় প্রকাশিত দু’দুটো নতুন গবেষণার রিপোর্টে এ তথ্য জানা গেছে। একটি গবেষণা তরুণ প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে এবং অন্যটি ইঁদুরের ওপর চালানো হয়। দুটো গবেষণাতেই ঘুমের সময় দোলা বা দুলুনির ব্যাপক উপকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। একটা হচ্ছে ভাল ঘুম হওয়া, অন্যটা হচ্ছে স্মৃতিশক্তি প্রখর হওয়া। লরেন্স নেয়ার নামে এক গবেষক বলেন, রাতে ভাল ঘুম হওয়া বলতে বোঝায় তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া এবং সারারাত ঘুমিয়ে কাটানো। তিনি জানান, ‘আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা যাদের এমনিতেই ভাল ঘুম হয় তারা দুলুনিতে আরও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছেন এবং আরও দীর্ঘসময় গভীর ঘুমে কাটিয়েছেন। রাতে খুব কমই তাদের ঘুম ভেঙ্গেছে। তা থেকে প্রমাণ হয় দুলুনি ঘুমের জন্য ভাল।’ বায়ার ও তার সহকর্মীরা এর আগে দেখিয়েছেন যে ৪৫ মিনিটের ছোট ঘুমে একটানা দোলা খেলে লোকে আরও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে এবং গাঢ় ঘুম হয়। নতুন এক গবেষণায় বেয়ার দেখতে চেয়েছেন ঘুমের ওপর এবং সারারাত ঘুম চলাকালে মস্তিষ্ক তরঙ্গের ওপর দোলার প্রভাব কতখানি ও কিভাবে পড়ে। তারা এ জন্য ১৮ জন স্বাস্থ্যবান প্রাপ্ত বয়স্ক তরুণকে বেছে নেন যাতে করে ল্যাবে তাদের ঘুমের অবস্থাটা পর্যবেক্ষণ করা যায়। প্রথম রাতটা তাদের এমনিতে ল্যাবে ঘুমাতে দেয়া হয়। এরপর তারা আরও দুটো রাত সেখানে ঘুমায়। একটি রাতে তারা মৃদু দোল খাওয়া বিছানায় ঘুমায় এবং অন্য রাতটা ঘুমায় একই ধরনের বিছানায় যেটাতে কোন দোল দেয়ার ব্যবস্থা ছিল না। প্রাপ্ত উপাত্তে দেখা যায় দোল খাওয়া অবস্থায় তারা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমন্ত অবস্থায় তারা আরও বেশি সময় ঘুমের এমন স্তরে ছিল যেখানে চোখের নড়াচড়া দ্রুত হয়নি, ঘুমটা আরও বেশি গাঢ় ছিল এবং ঘুম ভেঙ্গেছে কম। এরপর গবেষকরা জানার চেষ্টা করেছেন কিভাবে ভাল ঘুম স্মৃতিকে প্রভাবিত করে। এর জন্য সমীক্ষায় অংশ নেয়া তরুণদের জোড়া শব্দ পড়তে দেয়া হয়। পরদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর একবার এবং সন্ধ্যায় আরেকবার সেই শব্দাবলী তাদের স্মরণ করতে বলা হয়। তারা কতটা সঠিকভাবে সেই শব্দাবলী স্মরণ করতে পেরেছে গবেষকরা তা পরিমাপ করে দেখেন। তারা লক্ষ্য করেন যারা দোল খাওয়া বিছানায় ঘুমিয়েছে তারা সকালের পরীক্ষায় ভাল করেছে। পরবর্তী আরও গবেষণায় দেখা যায় যে টানা দোলুনিতে মস্তিষ্কের থালামোকর্টিকাল নেটওয়ার্ক নিউরনের ক্রিয়াকলাপের ক্ষেত্রে সময়গত সামঞ্জস্য বিধান হয় যা ঘুম এবং স্মৃতির সংহতি লাভ উভয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দ্বিতীয় গবেষণাটি চালানো হয় ইঁদুরের ওপর। এক্ষেত্রে ঘুমানোর সময় ইঁদুরের খাঁচাগুলো বিশেষ কৌশলে দোলানোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে মানুষের ক্ষেত্রে যেভাবে দোলানো হয়েছে তার চেয়ে চারগুণ বেশি ফ্রিকোয়েন্সি বা পৌনপুনিকতায় দোলানো হয়। তাতে দেখা যায় যে দুলুনিতে ইঁদুরদের ঘুমিয়ে পড়তে কম সময় লেগেছে এবং তারা বেশি সময় ধরে ঘুমিয়েছে। অবশ্য অধিকতর গভীর ঘুম ইঁদুরের ক্ষেত্রে হয়েছে কিনা তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গবেষকদের ধারণা, ঘুমের ওপর দুলুনির প্রভাবটা ভেস্টিবুলার সিস্টেমের ছন্দময় উদ্দীপনার সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত। যে সব মানুষ ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রাজনিত সমস্যা, বিষণ্ণতায় ভুগছে কিংবা যে সব বুড়ো মানুষের ঘুম কম হয়, স্মৃতিবিভ্রম হয় এ দুটি গবেষণা তাদের চিকিৎসার নতুন পথ খুলে দিতে সহায়ক হবে। সূত্র : সায়েন্স ডেইলি
×