ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওয়ানডেতে খাজার পুনর্জন্ম

প্রকাশিত: ১২:০৩, ১৪ মার্চ ২০১৯

 ওয়ানডেতে খাজার পুনর্জন্ম

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ স্টিভেন স্মিথ-ডেভিড ওয়ার্নারের নিষেধাজ্ঞা কি তাহলে অস্ট্রেলিয়ার জন্য শাপেবর হয়ে এলো? তুখোড় দুই তারকার অনুপস্থিতিতে দলটি যে আরও এক তুখোড় উইলোবাজকে পেয়ে গেছে। যে উসমান খাজাকে ভাবা হতো টেস্ট ব্যাটসম্যান সেই তিনি ভারত সফরে এক ওয়ানডে সিরিজে হাঁকালেন দুটি সেঞ্চুরি। রাঁচিতে শুক্রবার ক্যারিয়ারের ২৪তম ম্যাচে এসে পেয়েছিলেন প্রথম তিন অঙ্কের দেখা। বুধবার দিল্লীতে সিরিজ নির্ধারণী পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে ফের সেঞ্চুরি। সিরিজে খাজার ইনিংসগুলো দেখুন- ৫০, ৩৮, ১০৪, ৯১ ও ১০০! বিশ্বকাপ সামনে রেখে কি মোক্ষম সময়েই না জ্বলে উঠেছেন। দুটি সেঞ্চুরি ও দুটি হাফ সেঞ্চুরি। ৭৬.৬০ গড়ে রান ৩৮৩। ৪১ টেস্টের বিপরীতে ২৬ ওয়ানডে খেলা ৩২ বছর বয়সী পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলীয় ওপেনারের এই সফরে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে কার্যত পুনর্জন্মই হলো। বুধবার ফিরোজ শাহ কোটলায় অঘোষিত ফাইনাল ম্যাচেও খাজা ছিলেন অনবদ্য। এদিন উদ্বোধনীতে এ্যারন ফিঞ্চের সঙ্গে ৭৬ রানের জুটি গড়েন। ২৭ রানে অধিনায়ক ফিঞ্চ আউট হলেও ব্যাটিংতাণ্ডব অব্যাহত রাখেন খাজা। এরপর পিটার হ্যান্ডসকম্বকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে গড়েন ৯৯ রানের জুটি। এই জুটিতে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ভুবনেশ্বর কুমারের বলে কোহলির হাতে ক্যাচ তুলে দেন। তার আগে ১০৬ বলে ১০টি চার ও দুটি ছক্কায় ঠিক ১০০ রান করেন খাজা। ভারতের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে অসাধারণ ব্যাটিং করেন অস্ট্রেলীয় এই ওপেনার। প্রথম ওয়ানডেতে করেন ৫০ রান। দ্বিতীয় ম্যাচে ৩৮। অবশ্য এই দুই ম্যাচে তার দল অস্ট্রেলিয়া হেরে যায়। সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে করেন অভিষেক সেঞ্চুরি (১০৪)। তার শতরানের ইনিংসে ভর করে দলও জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। ঠিক পরের ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেও ৯ রানের জন্য সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়েন। ৯০ রান করে আউট হলেও টার্নার-হ্যান্ডসকম্ব তা-বে সেদিনও জয় পায় সফরকারীরা। ২-২এ সমতা এনে সিরিজ জামিয়ে তোলে অস্ট্রেলিয়া। শুক্রবার রাঁচির ঝাড়খণ্ড রাজ্যে ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের অভিষেক সেঞ্চুরিটি করেন খাজা। রবীন্দ্র জাদের করা বলটিকে ফাইন লেগে ঠেলে দিয়ে সিঙ্গেল নেয়ার মধ্য দিয়ে ১০৬ বলে শতরানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক, ওই বছর মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে (৩, ৮ ও ৩) মাত্র ১৪ রান করতে সক্ষম হন। প্রত্যাশিত পারফর্মেন্স করতে না পারায় দল থেকে বাদ পড়ে যান। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। ৬ ম্যাচে (৫০, ৪৪, ২৭, ২, ৫৯, ৯৮) করেন ২৮০ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরির সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি। মাত্র ২ রানের জন্য শতরানের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করতে ব্যর্থ হন। জাতীয় দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকা খাজা ভারতের বিপক্ষে করলেন দুর্দান্ত ব্যাটিং। সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডেতে হেরে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার সামনে সমীকরণ ছিল হারলেই ট্রফি হাতছাড়া। এমন কঠিন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে তৃতীয় ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন অস্ট্রেলীয় দুই ওপেনার এ্যারন ফিঞ্চ ও উসমান খাজা। উদ্বোধনীতে সেদিন ১৯৩ রানের জুটি গড়েন। মাত্র ৭ রানের জন্য সেঞ্চুরির দেখা পাননি ফিঞ্চ। তার বিদায়ের পর সেঞ্চুরি তুলে নেন খাজা। তবে সেদিন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটিকেও লম্বা করতে পারেননি। মোহাম্মদ সামির বলে মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকা জাসপ্রিত বুমরাহর হাতে ক্যাচ তুলে দেয়ার আগে ১১৩ বলে ১১টি চার ও একটি ছক্কার সাহায্যে ১০৪ রান করে ফেরেন খাজা। টেস্ট ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৮টি সেঞ্চুরিতে ২ হাজার ৭৬৫ রান করা উসমানের যেন সত্যি ওয়ানডতে পুনর্জন্ম হলো। বিশ্বকাপ সামনে রেখে অস্ট্রেলিয়াও কী তাহলে ওপেনিংয়ে ওয়ার্নারের যোগ্য সঙ্গী পেয়ে গেল? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। সিরিজে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, পিটার হ্যান্ডসকম্ব, আর চতুর্থ ম্যাচের দুরন্ত টার্নার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের জন্য হতে পারে আশীর্বাদ।
×