ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মানসিকভাবে শক্ত থাকার কথাই বলছেন রিয়াদ

প্রকাশিত: ১২:০২, ১৪ মার্চ ২০১৯

  মানসিকভাবে শক্ত থাকার কথাই বলছেন রিয়াদ

মিথুন আশরাফ ॥ নিউজিল্যান্ড সফরে কি কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে বাংলাদেশ দল। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হার হয়ে গেছে। এক ম্যাচ হাতে থাকতেই সিরিজ হার হয়েছে। সেই সিরিজ হারও হয়ে গেছে আবার টানা দুই টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টেতো সোয়া দুইদিনেই খেলা শেষ হয়ে গেছে। এর মধ্যে সোয়া একদিন ব্যাটিং করতে পেরেছেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। কি করুণ দশা হয়েছে। এমন অবস্থায় ক্রাইস্টচার্চে শনিবার ভোর চারটায় শুরু হতে যাওয়া তৃতীয় টেস্টে ভারপ্রাপ্ত টেস্ট অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ মানসিকভাবে শক্ত থাকার কথাই বলেছেন। হ্যামিল্টনে প্রথম টেস্টে ইনিংস ও ৫২ রানে হারের পর ওয়েলিংটনে দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস ও ১২ রানে হারে বাংলাদেশ। ওয়েলিংটনে প্রথম দুইদিন বৃষ্টিতে খেলাই হয়নি। টসও হয়নি। পাঁচদিনের মধ্যে হাতে থাকা তিনদিন খেলা হয়। এর মধ্যে সোয়া দুইদিনেই খেলা শেষ হয়। সোয়া দুইদিনের মধ্যে সাত সেশন (একদিনে তিন সেশন) হয়। বাংলাদেশ চার সেশনও পুরো ব্যাটিং করতে পারেনি। নিউজিল্যান্ড তিন সেশন ব্যাটিং করেই কাজের কাজ করে ফেলেছে। দুই টেস্টেই এক ইনিংস করে খেলতে হয়েছে নিউজিল্যান্ডকে। ২০০১ সালেও প্রথমবার নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে এমন বেহাল দশাই হয়েছে। ১৭ বছর পরও তাই হলো। এমন অবস্থায় মানসিকভাবে কিভাবে চাঙ্গা থাকবেন ক্রিকেটাররা? আত্মবিশ্বাসেওতো ঘাটতি থাকার কথা। রিয়াদ কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েও মানসিকভাবে শক্ত থাকার কথা বলছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘১৭ বছরে... আমাদের ক্রিকেটারদের মানসিকতা ও স্কিলের অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে এই ধরনের কন্ডিশনে আরও ভাল করতে হলে মানসিকভাবে আরেকটু শক্ত হতে হবে। এছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।’ সত্যিই তাই। যেভাবে নিউজিল্যান্ড পেসাররা উইকেটের সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ভোগাচ্ছেন তাতে মানসিক ভিত মজবুত না থাকলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা কঠিন। তাইতো রিয়াদ জানান, ‘প্রথম টেস্টে খেলা শুরুর আগেই আমি বলেছিলাম, আমাদের ইতিবাচক থাকতে হবে। ম্যাচের আগেই যদি ভাবতে থাকেন যে সুইং হবে, সিম হবে, বাউন্স হবে, আউট হয়ে যেতে পারি, তাহলে ওখানেই আপনি হেরে যাবেন। ইতিবাচক থাকলে অন্তত ভাল পারফর্ম করার সুযোগ বেশি থাকে।’ তামিম ইকবাল ও সাদমান ইসলাম টানা তিন ইনিংসে ৫০ উর্ধ জুটি গড়েছেন। তামিমতো দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে সাহস দেখিয়ে ব্যাটিং করতে হয়। তামিম-সাদমানের কথা উল্লেখ করে রিয়াদ বলেন, ‘তামিম ও সাদমান আমাদের খুব ভাল শুরু এনে দিয়েছিল। এরপর (নেইল) ওয়াগনার যখন তার শট বল থিওরি প্রয়োগ করতে শুরু করল, কিছুক্ষণ ভাল খেলার পর আমরা হাল ছেড়ে দিয়েছি। আরেকটু লম্বা সময় গাটস (সাহস) নিয়ে খেলা উচিত ছিল। আমাদের পেস আক্রমণে তিনজন নতুন বোলার। ওদের দায় দিয়ে লাভ নেই। দোষ ব্যাটসম্যানদেরই বেশি। আড়াইদিনে দুইবার অলআউট হওয়া খুবই হতাশার।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘দ্বিধা থেকে আমরা ভুল করছি। সংশয় নিয়ে শট খেলছি। পুরো আস্থা রাখছি না নিজের ওপর। মারব নাকি মারব না, এই ধরনের উইকেটে এই ভাবনা চলবে না। শট খেলতে চাইলে দ্বিধাহীনভাবে খেলতে হবে, ঠেকাতে চাইলে সেটিও। উপায় বের করতেই হবে। কারণ পরের টেস্টেও তারা বাউন্সার করবে। ক্রাইস্টচার্চে উইকেট গতিময়। ব্যাটসম্যানদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।’ নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ দল যতই খারাপ করুক, আরও ভাল করার যে সামর্থ্য আছে তা ভাল করেই জানা রিয়াদের। তাইতো বলেছেন, ‘আমার বার্তা ছিল ইতিবাচক থাকার, একই বার্তা সামনেও থাকবে। হয়তো শুনতে হাস্যকর শোনাবে, কিন্তু আমাদের যে দল আছে তাতে আমরা আরও ভাল করার সামর্থ্য রাখি। স্রেফ আমাদের ব্যক্তিগতভাবে চিন্তা করতে হবে যে নিজের স্কিল দিয়ে কিভাবে দলে অবদান রাখতে পারি।’ বাংলাদেশ দল আসলে শুরুতেই দুর্বল হয়ে পড়েছিল। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে দল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলছে। এখানে সাকিব আল হাসানের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার যদি না থাকেন তাহলে দল দুর্বল হওয়ারই কথা। সাকিবের সঙ্গে আবার ছিলেন না মুশফিকুর রহীমও। সেরা অলরাউন্ডার ও মিডলঅর্ডারের সেরা ব্যাটসম্যান না থাকলে একটি দলতো দুর্বল হয়েই পড়বে। তা হয়েছেও। কিন্তু তাই বলে এমন অবস্থা হবে। সোয়া দুইদিনে কাত হবে বাংলাদেশ। এখনও কি এমন দল বাংলাদেশ। রিয়াদ জানান, ‘আমাদের কোন মানসিক বাধা (মেন্টাল ব্লক) ছিল না। আমরা ভাল করতে পারছি না সেটা ভিন্ন কথা। আসার আগে কথা হয়েছিল, যেহেতু সময় হাতে নেই যেন মানসিকভাবে তৈরি হতে পারি। আমি আশাবাদী শেষ টেস্টটা ভাল করতে পারব।’ বোঝা হয়ে গেছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভাল করতে হলে ব্যাটসম্যানদেরই হাল ধরতে হবে। তা না হলে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে কুলিয়ে ওঠা কঠিন। রিয়াদও তাই মনে করছেন, ‘আমাদের ব্যাটসম্যানদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। অনভিজ্ঞ বোলিং আক্রমণ, তিনটা নতুন পেসার, ওদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। ব্যাটসম্যানদের দোষই বেশি। বিশ্বাস করি যে আমাদের ব্যাটসম্যানদেরও স্কিল আছে ওদের কৌশল সামলানোর।’ এখন ব্যাটসম্যানরা ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে নিজেদের মেলে ধরতে পারলেই হয়। মানসিকভাবে শক্ত থেকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এখন ভাল কিছু আদায় করে নেয়া গেলেই হয়।
×