ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চোখের জলে ভালবাসা প্রকাশ স্ত্রী-সন্তানের

সেই মঞ্চে স্বরূপে ‘সিআর সেভেন’

প্রকাশিত: ১২:০১, ১৪ মার্চ ২০১৯

 সেই মঞ্চে স্বরূপে ‘সিআর সেভেন’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ‘রাজা’ বলা হয় ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোকে। কিন্তু চলমান মৌসুমে কেমন যেন অচেনা লাগছিল পর্তুগীজ সুপারস্টারকে। নতুন ক্লাব জুভেন্টাসের জার্সিতে ইউরোপ সেরার মঞ্চে মলিন দেখাচ্ছিল তাকে! অবশেষে সেই মঞ্চেই স্বরূপে ফিরেছেন পাঁচবারের ফিফা সেরা তারকা। যখন তার দল জুভেন্টাসও গভীর জলে হাবুডুবু খাচ্ছিল। সেই অবস্থা থেকে একাই তুরিনের ওল্ড লেডিদের টেনে তুলেছেন ৩৪ বছর বয়সী এই মহানায়ক। মঙ্গলবার রাতে তার করা দুর্দান্ত রেকর্ডগড়া হ্যাটট্রিকে ভর করে সব শঙ্কা কাটিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট কেটেছে জুভেন্টাস। অবিশ্বাস্য কীর্তিটা সম্ভব হয়েছে রোনাল্ডোর অবিশ্বাস্য পারফর্মেন্সে ভর করে। তাইতো ফুটবলবিশ্ব এখন সিআর সেভেনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এ নিয়ে অষ্টমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লীগে হ্যাটট্রিক করেছেন রোনাল্ডো। এর আগে ২০১৬ সালের এপ্রিলে জার্মান ক্লাব উলফসবার্গের বিরুদ্ধে রিয়াল মাদ্রিদ প্রথম লেগে ২-০ গোলে পরাজিত হলেও ফিরতি লেগে রোনাল্ডোর হ্যাটট্রিকে লড়াইয়ে ফিরে এসেছিল। শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল গ্যালাক্টিকোরা। এবার জুভেন্টাসের জার্সিতে একই কীর্তি গড়লেন রোনাল্ডো। দেখার পালা, শেষ পর্যন্ত তার এখনকার দল ১৯৯৬ সালের পর চ্যাম্পিয়ন হতে পারে কি না। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনাল্ডো। তার গোলসংখ্যা ১২৪টি। এর মধ্যে এবার এখন পর্যন্ত করেছেন পরশু রাতের হ্যাটট্রিকসহ চার গোল। এ্যাটলেটিকো বরাবরই পছন্দের প্রতিপক্ষ রোনাল্ডোর। এর আগে রিয়ালের হয়ে খেলার সময় প্রায়শই দলটির বিরুদ্ধে খেলতে হতো। ম্যাচটির আগে তাদের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক ছিল তিনটি। আর গোল ২১টি। এই ম্যাচের পর এ্যাটলেটিকোর বিরুদ্ধে চারটি হ্যাটট্রিকসহ রোনাল্ডোর মোট গোলসংখ্যা ২৪টি। সঙ্গত কারণেই বেজায় খুশি পর্তুগাল অধিনায়ক। ম্যাচশেষে রোনাল্ডো বলেন, আমাদের দারুণ একটা রাত কাটাতেই হতো। আর এটা অসাধারণ একটা রাতই ছিল। শুধু আমার গোলের জন্য নয়, দলের জন্যও। সম্ভবত এ কারণেই জুভেন্টাস আমাকে দলে নিয়েছে। আমি শুধু নিজের কাজটা করেছি। আর এটা ছিল স্বপ্নের মতো একটা রাত। আমরা খুব গর্বিত। মহাকীর্তির পর রোনাল্ডোর প্রশংসায় ব্যস্ত আছেন শত্রু-মিত্র সবাই। সাবেক ইংলিশ ফুটবলার ও ক্লাব সতীর্থ রিও ফার্ডিনান্ড এককথায় বলে দিয়েছেন, রোনাল্ডো জীবিত এক ফুটবলঈশ্বর। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে একসময় রোনাল্ডোর সঙ্গে খেলা ফার্ডিনান্ড বলেন, রোনাল্ডো জীবিত এক ফুটবলঈশ্বর। ও যা করছে, এতো রীতিমতো ছেলেখেলা। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে আপনি যা যা রেকর্ড কল্পনা করতে পারেন, এর সবই ওর দখলে আছে। এমনকি সর্বোচ্চ হ্যাটট্রিকের রেকর্ডটাও এখন মেসির সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিয়েছে। আগের পাঁচ ম্যাচে সবধরনের প্রতিযোগিতাতেই এ্যাটলেটিকোকে কেউ গোল দিতে পারেনি। এমন জমাট পরিসংখ্যান নিয়েই ইতালিতে খেলতে এসেছিল দিয়াগো সিমিওনের দল। সিমিওনের বিশেষ পারদর্শিতাও আছে রোনাল্ডোকে আটকানোর ব্যাপারে। কিন্তু এবার আর পারেননি তিনি। ফার্ডিনান্ড তাই বলে দিলেন, রোনাল্ডোই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। ও বড় ম্যাচের জন্য এ ধরনের পারফর্মেন্স জমিয়ে রাখে। ম্যাচটি মাঠে বসে দেখেছেন রোনান্ডোর স্ত্রী জর্জিন রড্রিগুয়েজ ও তার সন্তানরা। বাবার কীর্তি দেখে ছেলে হাততালি দিয়েছে। স্ত্রী তো চোখের জল সামলাতে পারেননি। ম্যাচশেষে ইনস্টাগ্রামে বীর রোনাল্ডোর প্রশংসা করে রড্রিগুয়েজ লিখেছেন, ৩-০ গোলের জয়টি আদায় করে নেয়া। এই রাতের তিন গোল তোমার প্রাপ্য। তুমি যখন যে ক্লাবে খেল, ত্যাগের বিনিময়ে তুমি সাফল্য চাও। তুমি তোমার সতীর্থ, কোচ ও সমর্থকদের জন্য নায়কের মতো। ঈশ্বর জানেন, ঈশ্বর বিশ্বাস করেন ফুটবল বিশ্ব তোমার। আমরা তোমাকে খুব বেশি ভালবাসি।
×