ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাইপ লাইন নির্মাণের আগেই এলএনজি আমদানির তথ্য মিথ্যা

প্রকাশিত: ১০:১৮, ১৪ মার্চ ২০১৯

  পাইপ লাইন নির্মাণের আগেই এলএনজি আমদানির তথ্য মিথ্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাইপ লাইন নির্মাণ শেষের আগেই আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির তথ্যকে মিথ্যা ঘোষণা বলছেন বিশেষজ্ঞ এবং ভোক্তারা। বুধবার বাখরাবাদ এবং জালালাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির মূল্য সমন্বয়ের শুনানিতে ভোক্তারা বলেন, এলএনজি সঞ্চালনের পাইপ লাইনই যেখানে নেই সেখানে কিভাবে অতিরিক্ত এলএনজি দেয়ার কথা বলছে পেট্রোবাংলা। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের মূল্যায়ন প্রতিবেদন বলছে আগামী সেপ্টেম্বরের আগে মহেশখালী থেকে আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির পাইপ লাইন তৈরির কাজ শেষ হবে না। এখন মহেশখালী থেকে আনোয়ার পর্যন্ত ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের যে পাইপ লাইন রয়েছে তাতে ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত এলএনজি আনা সম্ভব। তাহলে কেন এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি ধরে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি হবে ভোক্তা এবং বিশেষজ্ঞরা এমন প্রশ্ন তোলেন। শুরুতে মহেশখালীর জিরো পয়েন্ট থেকে প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহের জন্য ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ৯১ কিলোমিটার পাইপ লাইন তৈরি করে জিটিসিএল। এই এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যোগ করতে আনোয়ারা ফৌজদারহাট পর্যন্ত আরও ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের ৩০ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু তখন ভবিষ্যতে অতিরিক্ত গ্যাস আসলে কি করা হবে সেই চিন্তা করা হয়নি। এতে করে সরকার আরও একটি ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ ক্ষমতার এলএএনজি টার্মিনালের অনুমোদন দেয়া হলে ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের মহেশখালী-আনোয়ারা আরও একটি ৭৯ কিলোমিটার সমান্তরাল পাইপ লাইন নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়। জিটিসিএলের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, আমরা মনে করছি মধ্য এপ্রিলে আমাদের পাইপ লাইনের কাজ শেষ হবে। কোন কারণে তা না হলেও মে মাসেই পাইপ লাইনের কাজ শেষ হবে। আর আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আসলে আমরা বিকল্প উপায় হিসেবে জিরোপয়েন্ট থেকে জিটিসিএলের গ্যাস স্টেশন পর্যন্ত সরবরাহের জন্য ইন্টারকানেশন একটি ছোট পাইপ লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে মূল পাইপ ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের আনোয়ার ফৌজদারহা পাইপ লাইনের সঞ্চালন ক্ষমতা ৬৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে সমান্তরাল লাইনের নির্মাণ কাজ শেষ না হলে পুরো গ্যাস নেয়া সম্ভব হবে না। তবে বিইআরসি সমান্তরাল পাইপ লাইন নির্মাণে জিটিসিএলের সময়সীমাকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করছে না। বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিবেদন বলছে আগামী সেপ্টেম্বরের আগে পাইপ লাইন নির্মাণ শেষ হবে না। বাংলাদেশ হাউস এ্যান্ড ফ্ল্যাট ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোঃ হেলাল উদ্দিন বলেন, আমাদের গ্যাসের দাম বেড়েই চলেছে কিন্তু আমরা নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ পাচ্ছি কি না তার খোঁজ নেয়া হচ্ছে না। মানুষ যেখানে গ্যাস পায় না সেখানে আবার গ্যাসের দাম বাড়বে কেন। তিনি বলেন, অর্থ ছাড়া বিতরণ কোম্পানিতে কোন সেবা পাওয়া যায় না। আগে বিদ্যুতেও এই রকম ছিল। এখন সেখানে দুর্নীতি কমেছে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিতেও দুর্নীতিকে একটা সীমার মধ্যে আনার আহ্বান জানান তিনি। সিএনজি ফিলিং এ্যান্ড কনভার্শন ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর বলেন, অন্য কোন জ্বালানিকে প্রণোদনা দেয়ার জন্য সিএনজির দাম বৃদ্ধি সমীচীন হবে না। এটি হলে শুধু সিএনজি খাতের ক্ষতি হবে না পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে। শুনানিতে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফি বলেন, বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের অর্থ অন্যদের ঋণ দিয়েছে। যা বেআইনী উল্লেখ করেন তিনি। সুফি বলেন বিতরণ কোম্পানিগুলো এলএনজি আমদানি কেন যৌক্তিক তার ব্যাখ্যা দিচ্ছে। কিন্তু এটা তারা করতে পারে না। তিনি বলেন থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আসবে বলা হচ্ছে। কিন্তু পাইপ লাইনের কাজই শেষ হয়নি। তিনি মনে করেন সর্বোচ্চ ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ দেখিয়ে দাম বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এর বেশি হলে তা অন্যায় হবে। কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আবাসিকে মিটার না দিয়ে গ্যাস খাতকে দুর্নীতির মধ্যে রাখা হচ্ছে। মিটার যুক্ত গ্রাহকের ৩০০/৪০০ টাকা বিল আসে। মিটার বিহীনরা দিচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম এবং জেনারেল ম্যানেজার (অর্থ) নারায়ণ চন্দ পাল বক্তব্য দেন। শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছ থেকে গ্যাসের বর্ধিত দাম নেয়া হলেই সমস্যা হবে এমনিতে আমাদের কোন সমস্যা হচ্ছে না। শুনানিতে পেট্রোবাংলার পরিচালক এবং তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলিত দায়িত্ব) মোস্তফা কালাম বলেন, কোম্পানিগুলো তার শেয়ার হোল্ডারদের ৩৬ ভাগ লভ্যাংশ দেবে এটা আমাদের কাছে যুক্তিসঙ্গত না হলেও কোম্পানি আইন অনুযায়ী দিতেই হয়। কোম্পানির বোর্ড এটা ঠিক করে দেয়। তিনি বলেন আমরা তিতাসে প্রিপেইড মিটার দেয়ার জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছি। সকাল এবং বিকেল দুই দফা শুনানিতেই সভাপতিত্ব করেন কমিশন চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম। এ সময় কমিশনের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
×