ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গাদের কোথায় রাখা হবে তা বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয়

প্রকাশিত: ১০:১৮, ১৪ মার্চ ২০১৯

 রোহিঙ্গাদের কোথায় রাখা হবে তা বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয়

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে মাদক সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্সে’ নীতি গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি রাজধানী যানজট মুক্ত, সকল বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা দেশী-বিদেশী এনজিওগুলোর (বেসরকারী সংস্থা) কার্যক্রম কঠোর পর্যবেক্ষণ ও নজরদারির মধ্যে রাখতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বুধবার দুপুরে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভা কমিটির প্রথম বৈঠকের শুরুতে চকবাজার ট্র্যাজিডিতে মৃতদের স্মরণে ১ মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়। এরপর সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বিগত জাতীয় নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং সার্বিক কর্মকান্ডের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানানো হয়। আইজিপি দেশের চলমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সার্বিক আলোচনা করেন। তিনি বলেন, অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ৪ এপ্রিল মাদক নিয়ন্ত্রণে সীমান্তবর্তী ৩২টি জেলা সকল সংসদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। জঙ্গী নির্মূলে সাফল্য ভাল। তবে কারাগারে থাকা জঙ্গীরা জেলে কোন বন্দীকে যাতে জঙ্গীবাদে অনুপ্রাণিত না করতে পারে, সে লক্ষ্যে জেল কোড মেনে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। বৈঠকে রাজধানীর যানজটমুক্ত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই কাজে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দুই সিটি কর্পোরেশনকে যুক্ত করা হবে। রাজধানীর কোথাও কোন অবৈধ পার্কিং থাকবে না। ঢাকায় দেড়শ’র মতো বাসস্ট্যান্ড থাকলেও সেগুলো চিহ্নিত করা নেই। সকল বাসস্ট্যান্ড চিহ্নিত করতে হবে। নির্ধারিত স্থান ছাড়া কোথাও বাস দাঁড়াতে ও যাত্রী ওঠানামা করতে পারবে না। বৈঠকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকা-ে খুশি হয়ে তাদের ধন্যবাদ জানানো হয়। পাশাপাশি বনদস্যু দমনে র‌্যাবের বিশেষ ভূমিকা রাখায় তাদেরও ধন্যবাদ জানানো হয়। বৈঠকে জানানো হয়, মাদকের বিষয়ে কোন ছাড় নয়। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই মাদক যুব সমাজের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা এই মাদকের সঙ্গে জড়িত, তারা দেশ ও জাতির শত্রু। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সকল স্তরে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে। গডফদার থেকে সেবনকারী কেউই রেহাই পাবে না। বৈঠকে জানানো হয়, রোহিঙ্গারাও মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। ক্যাম্পে থাকলে রাতে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এদের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে মাদক আসছে বলে তথ্য রয়েছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। নিরাপত্তার বিষয়ে কোন ছাড় নয়। কঠোর হতে হবে। না হলে যারা দায়িত্বে থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বৈঠক শেষে আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, অনেক এনজিও রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করছে। কিন্তু দেখা গেছে যে, এখন পর্যন্ত এনজিওগুলো দেড়শ কোটি টাকার হোটেল ভাড়া দিয়েছে। ‘আসলে তারা বিদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য টাকা এনে কাজ করে। কিন্তু দেখা যায়, তাদের (রোহিঙ্গা) জন্য এর ২৫ শতাংশও খরচ হয় না। ৭৫ শতাংশ-ই খরচ হয়ে যায় যারা এগুলো তদারকি করে তাদের পেছনে। আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, অনেক এনজিও ইল-মোটিভ (খারাপ উদ্দেশ্য) নিয়ে কাজ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়িটি খতিয়ে দেখতে কঠোর নজরদারি ও পর্যবেক্ষণ করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য সব প্রক্রিয়া এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। যে কোন সময় তাদের সেখানে স্থানাস্তর কার্যক্রম শুরু হতে পারে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, তাদের (রোহিঙ্গা) কোথায় রাখা হবে সেটা বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয়, বিদেশীদের বিষয় নয়। মোজাম্মেল হক আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশ থেকে যে টাকা আসছে তা কিভাবে খরচ করা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোন কোন এনজিও অনিয়ম করছে তাদের নামসহ তালিকা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, তাদের স্থানান্তরের বিষয়ে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা তরান্বিত করতে কাজ চলছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, তাদের নিরাপত্তা দেয়া এদেশের দায়িত্ব। তাদের কোথায় রেখে নিরাপত্তা দেয়া হবে, রোহিঙ্গারা কোথায় থাকবে সেটা অন্য কোন দেশের বিষয় না, সেটা বাংলাদেশের বিষয়। আমাদের সরকার সাধ্যমতো চেষ্টা করছে বসবাসের উপযোগী কোন জায়গায় নেয়ার। ভাসানচরে যেখানে তাদের স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে সে জায়গা উপযোগী হয়েছে। যে কোন সময় তাদের স্থানান্তর শুরু হতে পারে। একদিনে তো আর নেয়া যাবে না। পর্যায়ক্রমে নিতে হবে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ইয়াবা যারা আনে আমরা চেষ্টা করছি তাদের দমন করা, ইয়াবা আনা বন্ধ করা।
×