ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত সড়কের কাজ শেষ হবে কবে?

প্রকাশিত: ০৯:১১, ১১ মার্চ ২০১৯

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত সড়কের কাজ শেষ হবে কবে?

নিজস্ব সংবাদদাতা, গফরগাঁও, ১০ মার্চ ॥ ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে ৫ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ আড়াই বছরেও ১৫ ভাগ কাজ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গফরগাঁওয়ের মাইজবাড়ি-নামালঙ্গাইর ভায়া উঠিয়া বাজার সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদার গত দুই বছর ধরে সড়কের মাটি খুঁড়ে বালি ফেলে রাখায় বর্ষা আসতে না আসতেই চরম ভোগান্তিতে পড়েন এ সড়কে যাতায়াতকারী যানবাহনসহ হাজার হাজার মানুষ। আর বর্ষায় সড়কটি হাঁটু পানি জমে কাদা জলে একাকার হয়ে পড়ে। এভাবেই গত আড়াই বছর ধরে নিধারুণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ওই সড়কে চলাচলকারী মানুষ। লঙ্গাইর গ্রামের মোফাজ্জল হোসেন, সাহাদত হোসেন মৃধা হুমায়ুন মিয়া বলেন, ২০১৬ সালের শেষের দিকে ঠিকাদার সড়কটি নির্মাণের জন্য মাটি খুঁড়ে রাখে। পরে এভাবেই বেশ কিছুদিন ফেলে রাখায় বৃষ্টিতে হাঁটু পানি জমে সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এমন কাদার কারণে সড়কটিতে হেঁটে চলাচলও দুষ্কর হয়ে পড়ে। কিছুদিন পর ঠিকাদার বালি ফেললেও তা যান চলাচলের অনুপযোগী থাকে। সড়কটি গত আড়াই বছর ধরে এলাকাবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। টানলঙ্গাইর গ্রামের আফাজ উদ্দিন, রজব আলী খান, আব্দুর রউফ ও লাল মিয়া মড়লের দাবি, পাকিস্তান আমলে এই সড়কটি নির্মিত হলেও কোন উন্নয়ন কাজ হয়নি। গত আড়াই বছর পূর্বে প্রধানমন্ত্রী সড়কটি পাকাকরণের বরাদ্দ দিলে এলাকাবাসীর মধ্যে আনন্দ দেখা দেয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ না করে সড়কে মাটি খুঁড়ে ফেলে রাখায় এখন আনন্দের পরিবর্তে এলাকাবাসীসহ এই সড়কে চলাচলকারী হাজারও মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক নির্মল কুমার বিশ্বাস জানান, সড়কটি পাকাকরণের জন্য ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে টেন্ডারের মাধ্যমে সড়ক নির্মাণের কাজ পান মেসার্স জামান কনস্ট্রাকশন। যার ওয়ার্কঅর্ডার নং (ড-১৬১), সড়কের আইডি নং (০৪৪৩)। চুক্তি অনুযায়ী সড়কটির নির্মাণ কাজ ২০১৭ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারের আবেদন ও ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) ইসমত কিবরিয়ার সুপারিশে সময় বৃদ্ধি করা হয়। বর্ধিত সময়েও ঠিকাদার সড়কটির মাত্র ১৩ ভাগ কাজ করতে সক্ষম হয়। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছর সড়কটি পরিদর্শন শেষে এলাকাবাসী দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ঠিকাদারের চুক্তি বাতিলের নির্দেশ দেয়া হয়। চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামান কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে করা চুক্তিটি বাতিল করেন। ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) ইসমত কিবরিয়া বলেন, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে ঠিকাদারের এই কাজটি বাতিল করা হয়। এর পর থেকে ঠিকাদার হোসাইন মোহাম্মদ শামছুজ্জামান ক্ষিপ্ত ছিলেন। এ ঘটনার জের ধরে ঠিকাদার তার সাঙ্গোপাঙ্গো নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার বিমানবন্দর রেলস্টেশনে গফরগাঁও উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) তফাজ্জল হোসেনকে মারধর করে। এ সময় ট্রেন যাত্রীরা এগিয়ে আসলে এ যাত্রায় প্রাণে রক্ষা পান তিনি। হামলায় তিনি মাথায় ও চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে গুরুতর আহত হন। এর পর থেকে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে ঠিকাদার হোসাইন মোহাম্মদ শামছুজ্জামান বলেন, উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার তোফাজ্জল বিভিন্ন সময় আমার কাছে টাকা দাবি করেন। আমার লোকজনকে সাইডে যেতে বাধা দেন। আমি যাতে সড়কের কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন করতে না পারি সেজন্য তিনি আমাকে নানাভাবে হয়রানি করেছেন। এ কারণেই যথা সময়ে কাজ করতে না পারায় চুক্তিটি কর্তৃপক্ষ বাতিল করে। ঠিকাদারের এসব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে উপজেলা প্রকৌশলী তফাজ্জল হোসেন বলেন, কাজটি শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে তাগিদ দিলে তিনি উল্টো আমাকে হুমকি দিতেন।
×