ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ডোমেইন ফি না দেয়ায় বছরে ৫০ শতাংশ ওয়েবসাইট বন্ধ হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ৯ মার্চ ২০১৯

 ডোমেইন ফি না দেয়ায় বছরে ৫০ শতাংশ ওয়েবসাইট বন্ধ হচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন ফি জমা না দেয়ায় প্রতিবছর প্রায় ৫০ শতাংশ ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। খোদ সরকারেরও কয়েকটি দফতরের ডোমেইন ফি বাকি পড়েছে। জাতিসংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আইকানে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এ জন্য প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট ফি জমা দেয়ার বিধান রয়েছে। ডোমেইন না থাকলে দেশের ওয়েবসাইটগুলো ওয়েব সার্চ বন্ধ হয়ে যায়। সূত্র জানায়, তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে ওয়েবসাইট বদলে দিয়েছে সারাবিশ্ব। ওয়েবসাইটের ব্যাপক ব্যবহার এখন শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য আর তথ্য দেয়া-নেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ওয়েবসাইট সারাবিশে¡র মানুষকে এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত করেছে। জ্ঞান বিনিময় থেকে শুরু করে তাৎক্ষণিক সব খবরাখবর পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু ওয়েবসাইট ও ডোমেইন হোস্টিং জরিপ প্রতিষ্ঠান ওয়েবহোস্টিংয়ের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ওয়েবসাইট চালু হওয়ার পর ডোমেইন নবায়ন করা হয়নি। ফলে প্রতি বছরেই বিভিন্ন ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এসব ওয়েবসাইটে প্রতি সপ্তাহে কী পরিমাণ নতুন ডোমেইন তৈরি হলো আর কী পরিমাণ বন্ধ হয়ে গেল তার পরিসংখ্যান দেয়া হয়। এছাড়াও ডোমেইন ও হোস্টিংবিষয়ক খুঁটিনাটি অনেক তথ্য-উপাত্ত না জানায় অনেক ওয়েবসাইট বন্ধ হচ্ছে। দেশে ওয়েবসাইট ওয়েব পোর্টাল বা ওয়েব সলিউশনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই সেক্টরে দক্ষ জনবল গড়ে উঠতে শুরু করেছে। বর্তমানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ওয়েবসাইটের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট চলে আসার সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যবহারও ব্যাপক হারে বাড়ছে। অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার ফল অনলাইন অথবা ওয়েবসাইটে প্রকাশ হচ্ছে। গ্রামের কোন ছাত্রছাত্রী মুহূর্তের মধ্যে তার রেজাল্ট জানতে পারছে। ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে সঠিক বা রেজিস্টার্ড কোম্পানি থেকে ডোমেইন না কেনার কারণে। বেশিরভাগ ডোমেইন নবায়ন না হওয়ার পেছনে একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে গ্রাহক ডোমেইন নেম রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে সঠিক কোম্পানি সিলেকশন করতে পারে না। ডোমেইন নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে না নেয়ায় ওই কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরই নিজের ডোমেইন/ওয়েবসাইটটি বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিষ্ঠিত কোন কোম্পানি থেকে না নিয়ে পার্সোনাল ডোমেইন কিনলে এ ধরনের সমস্যা বেশি হতে পারে। অন্য একটি কারণেও ডোমেইন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তা হলো প্রথম বছরের পর দ্বিতীয় বছর ফি ইচ্ছে মতো বাড়িয়ে দেয়া হয়। এই বাড়তি টাকা না দেয়ায় ডোমেইন বন্ধ হয়ে যায়। অনেকেই বর্তমানে এ ধরনের সমস্যার শিকার হচ্ছেন। প্রথম বছর কম টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করলেও পরের বছর দ্বিগুণ বা তিনগুণ চার্জ দাবি করা হয়। ফলে ভোক্তা আর নবায়নে আগ্রহী হয় না। আরও এক কারণে ওয়েবসাইট বন্ধ হতে পারে। তা হলো ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ব্যবসায়িক লাভবান না হলে, তখন গ্রাহক নবায়নে আগ্রহী হয় না। তখনই ওই ওয়েবসাইটটি বন্ধ হয়ে যায়। অথচ একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজেকে এবং নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ওয়েবসাইট কোম্পানি ও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কাজ পরবর্তী লেনদেন ঠিকমতো না হওয়ার ফলেও অনেক ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যায়। এক ওয়েবসাইট ব্যবহারকারী ৪ বছর আগে থেকে ওয়েবসাইট ব্যবহার করছেন। কিন্তু তিনি ওয়েবসাইট রেজিস্টার্ড কোম্পানি থেকে ডোমেইন ও হোস্টিংয়ের পাসওয়ার্ড এবং কন্ট্রোল প্যানেল পায়নি। এটা না পাওয়ায় কারণে তার ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে গেছে। কম্পিউটার বিষয়ক পত্রিকা কম্পিউটার জগতে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এ ধরনের সমস্যা সমাধানে অথবা অভিযোগ দায়েরের কোন ধরনের সিস্টেম নেই। তবে বেসিসের সদস্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটলে সমাধানে সহযোগিতা করবে বেসিস। এদিকে, ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন ও ওয়েব হোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে সবসময় প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি পছন্দ করা দরকার। ডোমেইন ভালভাবে চেক করে ও এর প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিক দলিলপত্র করে নিতে হবে। যেখানে উভয়পক্ষের সব ধরনের সার্ভিস সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলা না থাকলে রেজিস্ট্রেশন না করাই ভাল। প্রয়োজনীয় সার্চ ইঞ্জিনগুলোয় তথ্য যাতে খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়, সে জন্য প্রয়োজনীয় প্রোগ্রামিং করতে হবে। এখানে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, ভোক্তাকে কখনও ডোমেইন নেম দিয়ে সার্চ দেয়া যাবে না। বর্তমানে ওয়েব সলিউশনে কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট কোন নীতিমালা না থাকায় অনেকে প্রতারিত হচ্ছে। ফলে প্রতারক কোম্পানি বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করারও জায়গা নেই। এ জায়গা তৈরির বিষয়টি ভাবনার মধ্যে রয়েছে বলে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে।
×