ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নারী-পুরুষ সমতার নতুন বিশ্ব গড়ার অঙ্গীকার

প্রকাশিত: ০৯:৫৩, ৯ মার্চ ২০১৯

 নারী-পুরুষ সমতার নতুন বিশ্ব গড়ার অঙ্গীকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘সবাই মিলে ভাবো, নতুন কিছু করো নারী-পুরুষ সমতার নতুন বিশ্ব গড়ো’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে সারাদেশে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনহ সরকারী বেসরকারী সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। এসব অনুষ্ঠানে দেশে নারী মুক্তি উন্নতি অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করা হয়। ৮ মার্চ সারাবিশ্বেই পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও স্বাধীনতার আগে থেকেই নারী দিবস পালিত হয়ে আসছে। শুক্রবার নানা কর্মসূচীতে দিবসটি পালিত হয়। কর্মসূচীর মধ্যে ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা, ম্যারাথন, সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা। সারাবিশ্বেই এই নারী দিবস পালন হলেও এক সময় তা পরিচিত ছিল আন্তর্জাতিক কর্মজীবী নারী দিবস। বিশ্বের একেক প্রান্তে নারী দিবস উদযাপনের প্রধান লক্ষ্যও একেক রকমের। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদযাপনের মুখ্য বিষয়ে পরিণত হয়। আবার কোথাও মহিলাদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পায়। বাংলাদেশে নারী দিবস পালনেও এসব বিষয় উঠে এসেছে। প্রতিবছর সারাবিশ্বে দিবসটি পালন করা হলেও দিবসটি ঘিরে রয়েছে ইতিহাস। দিবসটি পালনের পেছনে লেখা রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ সালে মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নামে সুতা কারখানার নারী শ্রমিকরা। সেই মিছিলে চলে সরকারী বাহিনীর দমন পীড়ন। ১৯০৮ সালে নিউইয়র্কে সোস্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিক। জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের অন্যতম। ১৯০৯ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭ দেশ থেকে ১শ’ নারী প্রতিনিধি ওই সম্মেলনে যোগ দেয়। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতিবছর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয় ১৯১১ সাল থেকে নারীদের সমঅধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালন করা হবে। সেই থেকে দিবসটি পালনে এগিয়ে আসেন বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ নারী দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়। বাংলাদেশে স্বাধীনতা লাভের আগে থেকেই দিবসটি পালন করে আসছে। এরপর ১৯৭৫ সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনে স্বীকৃতি দেয়া হয়। দিবসটি পালনের জন্য জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়। শুক্রবার দিবসটি পালন উপলক্ষে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বেগম বদরুন্নেসা আহমেদ ট্রাস্ট নারী সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বেগম বদরুন্নেসা আহমেদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বেগম বদরুন্নেসা আহমেদ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজা খানম, বাংলা রেকর্ডসের চেয়ারম্যান ও সাবেক আইজি (প্রিজন) সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন, অধ্যাপক খন্দকার নজরুল হক প্রমুখ। অনুষ্ঠানে প্রথম নারী সংসদ উপনেতা এবং নারী বন ও পরিবেশমন্ত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপি, প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, প্রথম নারী স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এবং প্রথম নারী মেজর জেনারেল সুসানে গীতিকে সম্মাননা দেয়া হয়। সভায় বক্তারা বলেন, নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের যে লক্ষ্য সেই লক্ষ্যে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি। এখনও বহু পথ বাকি রয়েছে। তারা বলেন, দৃষ্টিভঙ্গি বদলের যে সংগ্রাম সেই সংগ্রাম করাই খুব জরুরী। জাতীয় কন্যাশিশু এ্যাডভোকেসি ফোরাম দিবসটি পালনে র‌্যালি, আলোচনা সভা, সম্মাননা প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ উপলক্ষে সকালে রমনা পার্কের অস্তাচল গেট থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন পর্যন্ত র‌্যালি হয়। র‌্যালি শেষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার রুমে আলোচনা সভা হয়। র‌্যালির উদ্বোধন ঘোষণা করেন জাতীয় কন্যাশিশু এ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম। অতিথি ছিলেন জাতীয় কন্যাশিশু এ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ও নির্বাহী পরিচালক শাহীন আক্তার ডলি প্রমুখ। অনুষ্ঠানে, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক এবং নিউজ টুয়েন্টিফোরের প্রধান বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুন্নীকে সম্মাননা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ‘নারীর কথা-১৪’ নামক একটি প্রকাশনা ও আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত পোস্টারের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি পৃথক কর্মসূচী গ্রহণ করে। জাতীয় প্রেসক্লাব বিকেলে ক্লাবের নারী সদস্যদের নিয়ে মতবিনিময় ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। ডিআরইউ’র কর্মসূচীর মধ্যে ছিল শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা।
×