ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তথ্য দ্রুত জানার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ

প্রকাশিত: ০৯:৫৩, ৯ মার্চ ২০১৯

তথ্য দ্রুত জানার  ক্ষেত্রে এগিয়ে  যাচ্ছে দেশ

সমুদ্র হক ॥ দ্রুততার পালায় এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। এখন শুধু মানুষের পেটের ক্ষুধা মেটানোই যথেষ্ট নয়। ‘তথ্য ক্ষুধা’ দিনে দিনে বেড়ে গেছে। কারও সঙ্গে দেখা হলে, ফোনে কথার শুরুতে প্রথমেই জানার আগ্রহ ‘কেমন আছেন’। তারপরই ‘কি খবর’। এই কি খবর হলো- সকল বা সার্বিক খবরাখবর। সাধারণ মানুষকে তথ্য জানানোর ক্ষেত্রে ২৫ হাজারের বেশি ওয়েবসাইট সংবলিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ ওয়েবপোর্টালের গর্বিত অধিকারী এখন বাংলাদেশ। তথ্য জানানোর অধিকারকে আরও শক্তিশালী করে জাতিসংঘ ঘোষিত সাসটেন্যাবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি,বাংলায় টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট) দ্রুততার সঙ্গে অর্জনে দেশ এগিয়ে চলেছে। এসডিজির ১৭টি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে ২০৩০ সালের মধ্যে। এই অভীষ্ট অর্জনে বড় ভূমিকা পালন করছে খবর জানার অধিকার। দেশের মানুষ যেমন তথ্য জানতে পারছে সরকারও তেমনই দেশের মানুষের কাছ থেকে উন্নয়নে কোথায় ঘাটতি, কোথায় ত্রুটি তা জেনে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারছে। মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন, সরকারী সংস্থা সাধারণের কাছ থেকে অভিযোগ নিয়ে এবং সমস্যা সমাধানে দ্রুত তথ্য দেয়ার একাধিক ফ্রি হটলাইন চালু করেছে। সরকারের এ্যাকসেস টু ইনফর্মেশন প্রকল্পের আওতায় দেশের ৪ হাজার ৫শ’ ৫০টি ইউনিয়নে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) স্থাপিত হয়েছে। যেখানে সাধারণ মানুষ যাবতীয় তথ্য সেবা পাচ্ছেন। মানব উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে আন্তঃজালের অভিগম্যতা, মোবাইল ফোনের অপরিহার্যতা দেশের মানুষকে যে সচেতন করে তুলেছে তার প্রমাণ মেলে প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর সংখ্যায়। বিটিআরসির সর্বশেষ রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৪ কোটি এবং আন্তঃজাল ব্যবহারকারী অন্তত ৯ কোটি, যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার বড় সাফল্য। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই তৃণমূলের তথ্য জানালা কর্মসূচীর আওতায় দেশের প্রতিটি ইউডিসি উদ্যোক্তা কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তারা নিজেদের এলাকার উন্নয়নের ছবি, খবরাখবর আপলোড করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে। তারাও এখন তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিনিধি। কোথায় কি ঘটছে, আত্মীয় -স্বজনরা কোন্ দেশে কেমন আণ্ডে কি করছে তা জানাতে পারছে। কোন এলাকার জনভোগান্তি, বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এবং এলাকার সার্বিক উন্নয়নের খবর সংগ্রহ করে দ্রুত পৌঁছে দিচ্ছে যোগাযোগ মাধ্যমে। গ্রাম এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের সাফল্যের কথা তুলে ধরে তৃণমূলের তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করছে এই কেন্দ্রগুলো। স্মার্ট ফোনে আন্তঃজাল সুবিধা থাকায় গ্রামের মানুষও এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে। প্রত্যন্ত গ্রামের যে কোন স্থান থেকেই এখন বিশ্বের যে কোন স্থানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাচ্ছে। এভাবে বিস্তৃতি পাচ্ছে সিটিজেন জার্নালিজম বা নাগরিক সাংবাদিকতা। দেশের মানুষ এখন নিজেদের জীবনপ্রবাহের খবরের সঙ্গে পাশের মানুষ, কাছের মানুষের খবরও জানতে চায়। এ থেকে উৎসারিত তথ্য ক্ষুধা মেটাতে তারা জানতে চায় দেশের তাবৎ খবর। রাজনীতিকরা কে কি বলছেন, কে কি করছেন, সরকার সার্বিক উন্নয়নে কতটা এগিয়ে যাচ্ছে, সরকারের উন্নয়নে কোথায় কি ঘাটতি তা জানার আগ্রহ নিয়ে তারা একে অপরের সঙ্গে নানা বিষয় ভাগাভাগি (শেয়ার) করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে এ্যাবিউজ হয় না তা নয়, তবে তা নিয়ন্ত্রণে আইন হয়েছে। গণতন্ত্রে অবাধ তথ্যপ্রবাহে সুতর্ক ও গঠনমূলক সমালোচনার মধ্যেই ভাল কিছু এবং অনেক সৃষ্টিশীল ধারণা বের হয়ে আসে। এসডিজি অর্জনে দারিদ্র্য মোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী উন্নয়ন, জেন্ডারে সমতা অর্জন, খাদ্য নিরাপত্তা, শিশু মৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু হার কমানো, সম্পদের টেকসই ব্যবহার, সুশাসন, শান্তিপূর্ণ অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণে তথ্য বড় ভূমিকা রাখছে। সাধারণ মানুষের মৌলিক স্বাধীনতা, চিন্তা, বিবেক, বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা একীভূত হয়েছে আন্তঃজালের সহজলভ্যতায় । পাশপাশি প্রতিটি ইউডিসিকে আউটসোর্সিং ও ই-কমার্সের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ পাচ্ছে তারা। যেখানে উদ্যোক্তরা নিজেদের উদ্যোগে কোন ওয়েবসাইটে গিয়ে রোজগারের বিষয়গুলো সংগ্রহ করে ঘরে বসেই অর্থ রোজগার করতে পারে। যারা শিক্ষিত তারা নিজেদের আপগ্রেড করে বিশ্ব বাতায়নের নতুন পথ খুঁজে নিতে পারছে। খোঁজখবর করে জানা যায়, সফটওয়্যার তৈরিতে বড় একটি আসন করে নিয়েছে দেশের তরুণরা। সফটওয়্যার তৈরির পর দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করতে পারছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এখন বাংলাদেশের সফটওয়্যার কিনছে।
×