ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে আশ্বাসই মিলেছে

কয়েক পেশার নাগরিকদের ১০ বছরের ভিসা দেবে আমিরাত

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ৯ মার্চ ২০১৯

 কয়েক পেশার নাগরিকদের  ১০ বছরের ভিসা দেবে আমিরাত

ফিরোজ মান্না ॥ সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশের কয়েকটি পেশার নাগরিকদের ৫ থেকে ১০ বছর মেয়াদী ভিসা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বছরের নবেম্বরে এমন একটি সিদ্ধান্ত দেশটির মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। দেশটিতে বাংলাদেশের যে কোন বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা, মেধাবী শিক্ষার্থী ও গবেষকদের এই ভিসা দেয়া হবে। তাদের জনগোষ্ঠীর জ্ঞান-বিজ্ঞান, গবেষণা, ব্যক্তি উদ্যোগ ও বিনিয়োগকারীদের পেশাগত উৎকর্ষতার জন্য দীর্ঘমেয়াদের ভিসা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ইতোমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘দ্য ফেডারেল অথরিটি ফর আইডেন্টিটি এ্যান্ড সিটিজেনশিপের (এফএআইসি) উদ্যোগে এই ভিসা দেয়ার কাজও শুরু করা হয়েছে। তবে দেশটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ কর্মী নিয়োগে আশ্বাস ছাড়া আর কোন সিদ্ধান্ত জানায়নি। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের নবেম্বরে বিনিয়োগকারীদের দশ বছরের আবাসন ভিসা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির মন্ত্রিসভা। ওই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতেই বিনিয়োগকারীসহ চিকিৎসা, বিজ্ঞান, গবেষণা ও কারিগরি ক্ষেত্রে বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন এবং শিল্প-সংস্কৃতির প্রতিভাবান ব্যক্তিদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ভিসার অনুমোদন দিয়েছে। শুধু বিশেষভাবে প্রতিভাবান ওইসব ব্যক্তি নয় তাদের পরিবারও দীর্ঘমেয়াদী এ ভিসার আওতাভুক্ত হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুকূল ব্যবসায়িক, প্রাতিষ্ঠানিক ও বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনী পরিবশে তৈরি করতেই দেশটির কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিছু কিছু ভিসাও তারা দিচ্ছে বলে খবর মিলেছে। সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘমেয়াদী ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। সরকারের দেয়া সে সব শর্ত পূরণ করতে পারলেই বিনিয়োগকারী, চিকিৎসা, বিজ্ঞান, গবেষণা ও কারিগরি ক্ষেত্রে বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন এবং শিল্প-সংস্কৃতির প্রতিভাবান ব্যক্তিরা দেশটির দীর্ঘমেয়াদী ভিসা সুবিধা পাবেন। বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে মূলধন ৫ মিলিয়ন দিরহাম বিনিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে ওই বিনিয়োগকারীর পরিবারের সদস্যসহ পাঁচ বছরের ভিসা পাবেন। এছাড়া যেসব বিনিয়োগকারীর মূলধন ১০ মিলিয়ন দিরহাম বা ততোধিক তারা পরিবারসহ ১০ বছরের ভিসা সুবিধা পাবেন। বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন মেধাবী চিকিৎসক, গবেষক, বিজ্ঞানী কিংবা উদ্ভাবকদের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের বেঁধে দেয়া নয়টি শর্তের মধ্যে যে কোন দু’টি অবশ্যই পূরণ করতে হবে। এছাড়া শিল্প ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের শর্তসাপেক্ষে ১০ বছর পর্যন্ত ভিসা দেবে। দেশটিতে শতভাগ মালিকানাধীন বিদেশী কোম্পানি, বিনিয়োগকারী, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও উদ্যোক্তাদের জন্য ১০ বছরের ভিসা দেয়ার বিষয়টিও ইতিবাচক বলে জানানো হয়েছে। এছাড়াও উচ্চশিক্ষার জন্য আগ্রহীদের জন্যেও এই ভিসা দেয়া হতে পারে। যদিও ২০১২ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার। দীর্ঘদিন পরে আরব আমিরাত এমন সিদ্ধান্ত নেয়ায় সাধারণ কর্মীদের মধ্যেও আশা জেগেছে। তারাও মনে করছেন আমিরাতের বাজারটি ধীরে ধীরে খুলবে। দেশটিতে অবস্থানকারীরা বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন। আবর আমিরাত প্রবাসী বাংলাদেশী মোঃ শাহীন টেলিফোনে জানিয়েছেন, পাঁচ থেকে দশ বছরের ভিসা দেয়ার মাধ্যমে দেশটিতে বসবাসের সহজ সুযোগ যারা পাবেন তাদের দ্বারা আরব আমিরাতই বেশি লাভবান হবে। ২০১৮ সালের নবেম্বর মাসে পাস হওয়া এই ভিসা সংক্রান্ত আইনে প্রথমে ব্যবসায়ীদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব ব্যক্তি দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্যে ভূমিকা রাখবেন। এদের মধ্যে ব্যবসায় শতভাগ বিনিয়োগ করা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে দশ বছরের ভিসা প্রদানের নিয়ম করা হয়। প্রচলিত ধারায় আরব আমিরাতে ক্ষুদ্র বা মাঝারি ধরনের ব্যবসাতে কোন প্রবাসী শতভাগ বিনিয়োগ রাখতে পারেন না। এদের কোন না কোনভাবে স্থানীয় ব্যক্তি বা স্পন্সরদের মাধ্যমে ব্যবসার লাইসেন্স নিতে হবে। কেবল ‘দুবাই ফ্রি জোনে’ এককভাবে ব্যবসায় বিনিয়োগ করা যাবে। অন্যদিকে, আমিরাতে অধ্যয়নে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের পাঁচ থেকে দশ বছরের ভিসার আওতায় রাখার খবরও প্রবাসীদের আলোচনায় স্থান পাচ্ছে। এই ভিসার আওতায় সাধারণ শিক্ষার্থী নয় বরং আমিরাতে উচ্চশিক্ষার জন্যে আসা শিক্ষার্থীরাই সুযোগ পাবে। এক্ষেত্রে যেসব শিক্ষার্থীদের দীর্ঘমেয়াদী কোর্স রয়েছে তারাই বেশি সুবিধা পাবেন।
×