ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১৪৫ ইয়াবা কারবারি ও জলদস্যুর মামলা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া চলছে

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ৯ মার্চ ২০১৯

১৪৫ ইয়াবা কারবারি ও  জলদস্যুর মামলা  প্রত্যাহার প্রক্রিয়া চলছে

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সরকার কক্সবাজারের টেকনাফ ও মহেশখালীর যেসব ইয়াবা কারবারি এবং জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশের পক্ষে ইতোমধ্যে আত্মসমর্পণকারী ১০২ ইয়াবা কারবারি ও মহেশখালীর ৪৩ জলদস্যুর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে। বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন। তবে চলতি মাসের শেষার্ধে জলদস্যুদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করার আদেশ আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা গেছে। উল্লেখ্য, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে টেকনাফে লিস্টেড ১০২ ইয়াবা কারবারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজির উপস্থিতিতে সেখানকার স্থানীয় একটি বিদ্যালয় মাঠে ইয়াবা এবং অস্ত্রসমেত আত্মসমর্পণ করে। এর আগে গত বছরের ২০ অক্টোবর মহেশখালীতে ৬ বাহিনী প্রধানসহ ৪৩ জলদস্যু ৯৪ অস্ত্র ও সাড়ে সাত সহ¯্রাধিক রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করে। পৃথক এ দুটি ঘটনায় আত্মসমর্পণের দিনই ১০২ ইয়াবা কারবারির বিরুদ্ধে দুটি ও জলদস্যুদের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা দায়ের করা হয়। ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ইয়াবা মাদক আইনে এবং জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলাগুলো দায়ের হয়। সূত্র মতে, এটি ছিল আইনী প্রক্রিয়া। আত্মসমর্পণের আগে তাদেরকে সকল ধরনের হয়রানি থেকে মুক্ত হতে এবং আইনী সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী মহেশখালীর আত্মসমর্পণকারী ৪৩ জলদস্যু ইতোমধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন প্রার্থনা করেছে এবং অজামিনযোগ্য মামলা হওয়ায় তাদের জামিন প্রার্থনা নাকচ হয়েছে। অনুরূপভাবে ১০২ ইয়াবা কারবারির পক্ষে প্রায় অর্ধশত জামিন প্রার্থনা করেছে এবং তা নাচক হয়েছে। ফলে আত্মসমর্পণকারী এসব ইয়াবা কারবারি ও জলদস্যু বর্তমানে জেলে রয়েছে। যেহেতু তারা অতীতে বিপদগামী হয়েছিল এবং সুযোগ পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার লক্ষ্যেই আত্মসমর্পণ করেছে ও সরকার এদের পুনর্বাসন করার ঘোষণাও দিয়েছে, সে লক্ষ্যে আইনী প্রক্রিয়া বর্তমানে চলমান। সূত্র জানিয়েছে, অস্ত্র ও ইয়াবা মাদক আইনের মামলা থেকে এসব ইয়াবা কারবারি ও জলদস্যুদের রেহাই দিতে ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলা পুলিশ দফতর থেকে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে আবেদন পৌঁছানো হয়েছে। যা বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন। তবে এটা নিশ্চিত যে, প্রক্রিয়া কিছুটা ধীরগতির হলেও এদেরকে মামলা থেকে রেহাই দেয়ার সিদ্ধান্ত আগেই দেয়া হয়েছে। এদিকে, ইয়াবা কারবারি ও জলদস্যুদের জেলমুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রক্রিয়াটি ধীরগতির হওয়ায় এ পথে থাকা আগ্রহী অন্যরা থমকে আছে। বিষয়টি স্পষ্ট হলে আরও কিছু লিস্টেড ইয়াবা চোরাকারবারি ও জলদস্যু আত্মসমর্পণের সুযোগ নেয়ার আশায় রয়েছে। সূত্র আরও জানিয়েছে, আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে যারা অবৈধ প্রক্রিয়ায় সম্পদের পাহাড় গড়েছে সে ব্যাপারে দুদক, এনবিআর ও সিআইডিকে আইনী প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজও চলছে। প্রসঙ্গত, মহেশখালীতে ৪৩ জলদস্যু আত্মসমর্পণ করলেও আরও কিছু জলদস্যু এর আওতার বাইরে রয়েছে। অনুরূপভাবে ১০৫১ লিস্টেড ইয়াবা কারবারির মধ্যে মাত্র ১০২ জন আত্মসমর্পণ করেছে। আত্মসমর্পণকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আরও প্রায় ৫শ’ জনের তালিকা করেছে। ফলে লিস্টেড ইয়াবা কারবারির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫৫১ জনে। এদের কেউ এখনও আইনের কাছে যেমন ধরা দেয়নি, তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোও এদের আইনের আওতায় আনতে পারেনি। এদের অধিকাংশ গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। তবে টেকনাফের কেউ কেউ মাঝে মাঝে প্রকাশ্যে এসে থাকে বলেও জানা গেছে।
×