ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রফতানি আয় আড়াই হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে

প্রকাশিত: ০৯:১৩, ৮ মার্চ ২০১৯

রফতানি আয় আড়াই হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের পণ্য রফতানিতে বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ২ হাজার ৭৫৬ কোটি ২৭ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ৯৮ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭.৮১ শতাংশ বেশি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বৃহস্পতিবার পণ্য রফতানি আয়ের যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, তৈরি পোশাক রফতানিতে ভাল প্রবৃদ্ধি হওয়ার কারণে সামগ্রিক পণ্য রফতানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে ২ হাজার ২৫ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি। একক মাস হিসেবে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৩৮ কোটি ৩২ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১০.১২ শতাংশ বেশি। ইপিবি’র প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সব ধরনের পণ্য রফতানিতে বৈদেশিক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৫৫৬ কোটি ৫ লাখ ডলার। এ সময়ে আয় এসেছে ২ হাজার ৭৫৬ কোটি ২৭ লাখ মার্কিন ডলার, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রফতানি আয় অর্জিত হয়েছিল ২ হাজার ৪৩৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের গত ৮ মাসে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১২ দশমিক ৯৮ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, একক মাস হিসেবে গত ডিসেম্বরে ৩৩৮ কোটি ৩২ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এটি গত বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে ১০ দশমকি ১২ শতাংশ বেশি। গত বছরের ডিসেম্বরে রফতানি হয়েছিল ৩০৭ কোটি ২১ লাখ ডলারের পণ্য। জানা যায়, দেশের রফতানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই খাত থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রফতানি আয় এসেছিল ২ হাজার ২৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে তৈরি পোশাক খাতে পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছে ২ হাজার ৩১২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের তুলনায় এ খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে ৮ মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় বেড়েছে ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এর মধ্যে নিটওয়্যার খাতের পণ্য রফতানিতে ১ হাজার ১৪৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার আয় হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেড়েছে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের তুলনায় গত ৮ মাসে নিটওয়্যার খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। অন্যদিকে ওভেন গার্মেন্ট পণ্য রফতানিতে ১ হাজার ১৬৩ কোটি ৩১ লাখ ডলার আয় হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে পোশাক শিল্পকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। আমরা এখন শতভাগ কমপ্লায়েন্স কারখানার দিকে হাঁটছি। প্রতি মাসেই রফতানি আয় বাড়ছে, বাড়ছে প্রবৃদ্ধি। কিন্তু এ খাতের কিছু সমস্যা বড় আকার ধারণ করছে। তিনি বলেন, ইউরোপের বাজারসহ অন্যান্য দেশের ক্রেতা এবং পণ্যের মূল্য ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। মজুরি, জ্বালানি, পরিবহন ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মজুরি বৃদ্ধির ফলে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় ১৭ দশমিক ১১ ভাগ বেড়েছে। এছাড়া প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে অস্তিত্ব এবং আমাদের সক্ষমতা টিকিয়ে রাখা এখন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে ৫৮ দশমিক ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে কৃষি পণ্য রফতানিতে। এ খাত থেকে আয় এসেছে ৬৪ কোটি ২৭ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি আয় বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ সময়ে আয় হয়েছে ৭ কোটি ৬৮ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি। গত ৮ মাসে হোম টেক্সটাইল খাতে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা দুটিই কমেছে। এ সময় আয় এসেছে ৫৬ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। গত ৮ মাসে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে। একই সঙ্গে অর্জিত হয়নি লক্ষ্যমাত্রা। এ সময়ে এ খাত থেকে আয় এসেছে ৫৬ কোটি ৫ লাখ ডলার। এছাড়া চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম হয়েছে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। প্রবৃদ্ধিও গত বছরের চেয়ে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ কম হয়েছে। এ সময়ে আয় হয়েছে ৬৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার।
×