ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ার পাটকলগুলোর উৎপাদিত পণ্য বিদেশেও রফতানি হচ্ছে

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ৭ মার্চ ২০১৯

বগুড়ার পাটকলগুলোর উৎপাদিত পণ্য বিদেশেও রফতানি হচ্ছে

সমুদ্র হক ॥ আদমজী পাটকলের পরিত্যক্ত তাঁত ও যন্ত্রাংশ এবং স্থানীয় ফাউন্ড্রির তৈরি যন্ত্রপাতি দিয়েই বগুড়ায় গত ১৭ বছরে গড়ে উঠেছে বেসরকারী খাতের ১৭টি পাটকল। এগুলোর ধরন ছোট। বলা হয় মিনি পাটকল। তবে উৎপাদিত পাটজাত পণ্য বিশেষ করে বস্তা, চট রফতানি হচ্ছে বিশে^র কয়েকটি দেশে। পাটকল কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় এই পাটকলগুলো চলছে ধীর গতিতে। উৎপাদনে বেশি দূর এগোতে পারছে না। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে দেশের ঐতিহ্যের আদমজী পাটকল বন্ধ করা হয় ২০০২ সালে। যুক্তি দেখানো হয় লোকসানের। তারপর আদমজী পাটকলের পরিত্যক্ত তাঁত ও যন্ত্রপাতি নিলামে বিক্রি হয়। কিনে নেয় দেশের বিভিন্ন এলাকার শিল্প উদ্যোক্তাগণ। বগুড়ার কয়েকজন শিল্পমালিক ও শিল্প উদ্যোক্তা আদমজীর পরিত্যক্ত তাঁত ও যন্ত্রপাতি কিনে পাটকল স্থাপনের পর উৎপাদন শুরু করে। পরে আরও তাঁত ও যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়। কিছু যন্ত্র আমদানি করা হয় ভারত ও চীন থেকে। আবার বগুড়ার উন্নত ফাউন্ড্রি শিল্প থেকেও আদমজীর যন্ত্রপাতির মতো যন্ত্র তৈরি করে নেয়া হয়। দেখা যায় দেশীয় উৎপাদিত যন্ত্র আমদানি করা যন্ত্রপাতির চেয়ে কোন অংশে কম নয়। কোনটি বিদেশী যন্ত্রের চেয়ে উন্নত ও টেকসই। এভাবে একের দেখাদেখি অন্য শিল্প উদ্যোক্তা মিনি পাটকল স্থাপন করে। বগুড়া সদর উপজেলার আকাশতারা, ধরমপুর, মানিকচক, ঠেংগামারা, নুনগোলা এলাকায় ছয়টি পাটকল ছাড়াও শাজাহানপুর, শেরপুর, কাহালু, শিবগঞ্জ ও গাবতলী উপজেলায় ১১টি পাটকল স্থাপিত হয়। শাজাহানপুরের মোহিনী নাবিল জুট মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মুন্নাফ জানান, আদমজীর কয়েকটি তাঁত কিনে মিল স্থাপন করেন। পরে আদমজীর যন্ত্রের আদলে বগুড়ার ফাউন্ড্রি থেকে কিছু তাঁত বানিয়ে নিয়ে সংযোজন করেন। কাহালুর বগুড়া ভা-ার পাটকল কর্তৃপক্ষ জানালেন আদমজীর তাঁত ও যন্ত্রপাতি দিয়ে উৎপাদন শুরু করা হয়। পরে ভারত থেকে তাঁত ও যন্ত্রপাতি এনে পাটকলকে সম্প্রসারিত করা হয়। তাদের পাটকলে নারী ও পুরুষ মিলে ৮শ’ শ্রমিক কাজ করছে। আফরিন পাটকল কর্তৃপক্ষ বললেন, তাদের মিলে প্রতি মাসে ১৩ টন পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। গাবতলীর শাহ সুলতান পাটকল কর্তৃপক্ষ জানান, তাদের মিলে ৮ ঘণ্টা করে তিন শিফটে ৫শ’ শ্রমিক কাজ করছে। প্রতি মাসে এক হাজার বস্তা ও তিন হাজার মণ সুতলি উৎপাদিত হচ্ছে। বগুড়ার পাটকলগুলোতে গড়ে ১০ টন করে সুতলি, চট ও বস্তা উৎপাদিত হচ্ছে। প্রায় ১০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। পাটকলে মাসে অন্তত ৪শ’ মণ করে পাট দরকার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, পাটকল স্থাপিত হওয়ায় পাটের চাহিদা বেড়েছে। একই কারণে পাটের আবাদ ও উৎপাদনও বেড়েছে। কৃষক পাটের ভাল দাম পাচ্ছে। মিল কর্তৃপক্ষ কৃষকদের কাছে থেকে সরাসরি পাট কিনছে। বগুড়া চেম্বারের সভাপতি মাসুদার রহমান মিলন বললেন, বেসরকারী খাতের এই পাটকল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ক’জন মালিক বললেন, উৎপাদিত পণ্য ভারত, জাপান, জার্মানি, মালোয়েশিয়া, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে রফতানি হচ্ছে। দেশগুলোর আমদানি আদেশ পাওয়ার পর শর্তানুযায়ী পাট পণ্য রফতানি হয়। পাট পণ্যের ব্যবহার আরও বাড়ানো এবং বগুড়ার পাটকলগুলোতে গ্যাস সুবিধা দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। শ্রমিকরা বলছেন, তাদের পারিশ্রমিক কম দেয়া হয়।
×