ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৭.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ১০:৫০, ৭ মার্চ ২০১৯

৭.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ

শাহজাহান ॥ বিশ্বের বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সৌদি আরবের এ্যারামকো কোম্পানি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে প্রায় সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। বাংলাদেশী মুদ্রায় এই বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় (প্রতি মার্কিন ডলার ৮৫ টাকা ধরে) ৬৪ হাজার কোটি টাকা। অশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন ও মজুদ ও পেট্রো কেমিক্যাল খাতে বিনিয়োগ করবে বিশ্বের শীর্ষ এই প্রতিষ্ঠানটি। সৌদি সরকারের একাধিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশটির বেসরকারী খাতের আরও ১১টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আসছে। এ উপলক্ষে বুধবার রাত ১১টায় হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান সৌদি আরবের ৩৪ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলটি। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে প্রতিনিধিদলটি রাজধানীর ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলে সরকারী-বেসরকারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে মিলিত হবেন। এরপর বিকেলে প্রতিনিধিদলটি রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবেন। সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান মনোনীত ৩৪ সদস্যের এ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিবেন দেশটির অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মেদ আল তোয়াইজরি এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক মন্ত্রী ড. মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবি। এছাড়া সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট ও পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট-বিষয়ক উচ্চ-পর্যায়ের কর্মকর্তারাও রয়েছেন প্রতিনিধিদলে। জানা গেছে, সৌদি আরবের আল ফানার কোম্পানি ফেনীতে ১০০ মেগাওয়াট সোলার বিদ্যুত খাতে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। এছাড়া এই প্রতিষ্ঠানটি ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন হাইব্রিড সোলার আইপিপি খাতে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া বিদ্যুতের ট্রান্সমিশন লাইন সংস্কার, নতুন নতুন পাওয়ার স্টেশন প্রতিষ্ঠা ও সাব-স্টেশন করতে আরও ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ইলেকট্রিক্যাল পণ্যসামগ্রী উৎপাদন ও সাব-স্টেশন করতে ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সৌদি আরবের কোম্পানি ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশনস। সৌদি কোম্পানিটি এদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একটি সিমেন্ট কারখানা স্থাপন ও আরেকটি কারখানার আধুনিকায়নে বিনিয়োগ করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। সৌদি-বাংলাদেশ মৈত্রী সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি নতুন কারখানা করতে ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশনস ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) মধ্যে ইতোমধ্যে একটি কৌশলগত অংশীদারি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়া সৌদি আরবের আল রাজী কোম্পানি হোটেল ও ট্যুরিজম খাতে মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। পর্যটন খাতে বিনিয়োগ করবে সৌদি আরবের সৌদি আরবের আল হোকাইর। এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে ১০০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে চায়। আলবাওয়ানী বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে ২০০-৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। দেশটির ডাফা কোম্পানি এদেশের টেক্সটাইল খাতে ১০০-২০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আসছে। এছাড়া রিয়াদ ক্যাবলস দেশের ক্যাবলস খাতে ৫০-৭০ মিলিয়ন, সৌদি সিরামিকস স্যানিটারি ওয়্যার খাতে ২০-৩০ মিলিয়ন, এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাত ও বেকারি শিল্পে আলফালেক ৩০-৫০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব করবে। এছাড়া আলমামী ট্রেডিং ইস্ট রিয়াদ, এইচএমজিটি সৌদি আরব লি. আল রাজী, রিয়াদ মেট্রোপলিটন চেম্বার ও সৌদির ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো আরও সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে আসছে। জানা গেছে, সৌদি আরর বাংলাদেশের ২৫টি প্রকল্পে অন্তত আট থেকে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। মূলত কৃষিভিত্তিক শিল্প, খাদ্য ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, বস্ত্র ও পোশাক, চামড়া, পেট্রো-রাসায়নিক, প্রকৌশল ও সেবা খাতে সৌদি বিনিয়োগ আসছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, সৌদি আরব কয়েকটি খাতে বিনিয়োগ করতে চায়। তারা বাংলাদেশে বড় ধরনের একটি বিনিয়োগ নিয়ে আসছে। জানা গেছে, বাংলাদেশে তেল পরিশোধনাগার নির্মাণের জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে সৌদি আরব। এর আগে গত বছরের অক্টোবর মাসে সৌদি আরব সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সফরের সময় তিনি সৌদি সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। এছাড়া সৌদি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী পৃথক একটি বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। সেই বৈঠকে বাংলাদেশে সৌদি আরবের বিনিয়োগ চাওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীরা এখন বাংলাদেশমুখী হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে সৌদি প্রতিনিধিদলের এ সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডার পরিচালক মোঃ আরিফুল হক ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, গত বছরের ১৭-১৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরকালে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগের বিষয়ে সৌদি সরকারের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। এর ধারাক্রমে এবারে সৌদি আরবের বাণিজ্য ও বিনিয়োগমন্ত্রী এবং অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমন্ত্রী এবং সৌদি আরবের পিআইএফ ও এসডিএফের প্রতিনিধিগণ বাংলাদেশ সফর করছেন। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় খাতের বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন ও বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। সৌদি বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়াবলী বিডা কর্তৃক মনিটরিং করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) আশা ॥ সৌদি আরবের বিনিয়োগকারী প্রতিনিধিদলের কাছ থেকে অন্তত ১৬ প্রকল্পে দেড় থেকে দুই হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডা। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মোঃ আমিনুল ইসলাম ও সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন। বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিডার কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে যেসব প্রকল্প নিয়ে কথা চলছে, তার মধ্যে কয়েকটির ক্ষেত্রে চুক্তি সই হবে। কয়েকটির ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারক সই হবে। কয়েকটি প্রকল্পে বিনিয়োগের বিষয়ে প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। পাশাপাশি তাদেরও আগ্রহের কয়েকটি ক্ষেত্র রয়েছে। তিনি বলেন, এসব প্রকল্পে মোট দেড় থেকে দুই হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ আশা করা যায়। তবে পরিমাণ এখনই বলা সম্ভব নয়। অন্যদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তুতকৃত কার্যবিবরণীতে ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারের সৌদি বিনিয়োগের একটি সম্ভাব্য তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি সৌদি এ্যারাবিয়ান অয়েল (এ্যারামকো) বাংলাদেশে একটি তেল শোধনাগার ও তেলভিত্তিক পণ্য উৎপাদনে প্রায় সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
×