ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কোহিনুর আক্তার

ফেদেরারের ১০০

প্রকাশিত: ১১:৪৫, ৬ মার্চ ২০১৯

ফেদেরারের ১০০

১৯৯৮ সালে পেশাদার টেনিসে পা রাখেন রজার ফেদেরার। ১৮ বছর আগে মিলানে ক্যারিয়ারের প্রথম এটিপি শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি। সেই যে ট্রফি উঁচিয়ে ধরার গল্পের সূচনা...। চলছে এখনও। শনিবার জিতলেন ক্যারিয়ারের ১০০তম ট্রফি! হ্যাঁ, ক্যারিয়ারের প্রথম ট্রফি জয়ের ঠিক ৬,৬০০ দিন পর পূর্ণ করলেন শিরোপার সেঞ্চুরি। সবকিছু যেন ঠিক স্বপ্নের মতোই মনে হচ্ছে রজার ফেদেরারের কাছে। দুবাই টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক নাম্বার ওয়ান তারকা গ্রীসের স্টেফানোস সিসিপাসকে পরাজিত করেন। রজার ফেদেরার এদিন ৬-৪ এবং ৬-৪ গেমে খুব সহজেই পরাজিত করেন প্রতিপক্ষকে। অথচ, নতুন মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে এই স্টেফানোসের কাছে হেরেই ছিটকে পড়েছিলেন রজার ফেদেরার। দুবাই চ্যাম্পিয়নশিপে অবশ্য কোন ছাড় দেননি তিনি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফাইনালে গ্রিসের এই প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে হারাতে ফেদেরার সময় নেন মাত্র ৭০ মিনিট। ম্যাচ শেষে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ফেদেরার বলেন, ‘এই মুহূর্তে এটা ঠিক স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।’ ক্যারিয়ারের শততম ট্রফি। তাহলে দুবাইয়ের? এই টুর্নামেন্টের রেকর্ড অষ্টম শিরোপা জয়ের স্বাদ পেলেন সুইজারল্যান্ডের এই জীবন্ত কিংবদন্তি। অসামান্য এই কীর্তি গড়ে রজার ফেদেরার খুব খুশি। ম্যাচের শেষে তিনি বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত। দুবাইয়ে এটা আমার অষ্টম শিরোপা। তাই আনন্দের মাত্রাটা একটু বেশি। সেইসঙ্গে ক্যারিয়ারের ১০০তম একক শিরোপা।’ পুরুষ এককে যুক্তরাষ্ট্রের জিমি কনর্সের পর মাত্র দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করলেন ফেদেরার। ক্যারিয়ারে প্রথম পুরুষ খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড ১০৯টি শিরোপা জিতেছেন কনর্স। আর টেনিসের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ১৬৭টি শিরোপা জিতেছেন মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা। সুইস কিংবদন্তি মার্টিনা নাভ্রাতিলোভাকে স্পর্শ করাটা হয়তো ফেদেরারের জন্য কঠিন কাজ। তবে কর্নসকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন টেনিস বোদ্ধাদের অনেকেই। গ্রীসের তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় সিসিপাস। ইতোমধ্যেই নিজেকে মেলে ধরেছেন তিনি। প্রতিভাবান এই খেলোয়াড়কে পরাজিত করে স্বপ্নের পথচলায় অসাধারণ মাইলফলক ছোঁয়ার পর প্রতিপক্ষের প্রশংসা করেছেন ফেদেরার। তিনি বলেন, ‘জানি না আমি যখন প্রথম শিরোপা জিতেছিলাম তখন স্টেফানোস জন্মেছিল কি-না (১৯৯৮ সালের আগস্টে জন্ম এই গ্রিক তারকার)। সম্ভাব্য ভবিষ্যত তারকার বিপক্ষে খেলতে পারাটা দারুণ। কারণ আমি টিভিতে তাদের খেলা দেখব। পিট সাম্প্রাস ও আন্দ্রে আগাসির বিপক্ষে খেলাটা ছিল আনন্দের। আমি নিশ্চিত, স্টেফানোস অসাধারণ একটা ক্যারিয়ার গড়বে।’ বয়সে সাঁইত্রিশকেও ছাড়িয়ে গেছেন ফেদেরার। কিন্তু টেনিস কোর্টে এখনও অপ্রতিরোধ্য! দুবাই চ্যাম্পিয়নশিপের শুরু থেকেই অসাধারণ পারফর্মেন্স উপহার দিয়েছেন তিনি। এই টুর্নামেন্টের শিরোপা উঁচিয়ে ধরার সৌজন্যে র‌্যাঙ্কিংয়েও অগ্রগতি হয় ফেড এক্সপ্রেসের। সোমবার নতুন করে প্রকাশিত র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ চারে উঠে এসেছেন তিনি। র‌্যাঙ্কিংয়ে অগ্রগতি হয় ফাইনালে হেরে যাওয়া সিসিপাসেরও। এই মুহূর্তে র‌্যাঙ্কিংয়ের ১১ নম্বরে অবস্থান করছেন গ্রীক তারকা। প্রথমবারের মতো শীর্ষ দশে জায়গা করে নিবেন তিনি। স্টেফানোস সিসিপাসও তাই আনন্দিত। এদিকে মেক্সিকান ওপেনে বাজিমাত করে র‌্যাঙ্কিংয়ে অগ্রগতি হয়েছে নিক কির্গিওসেরও। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের ৭২ নম্বরে থেকে সপ্তাহের সূচনা করেছিলেন এই অস্ট্রেলিয়ান। যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে তার সবচেয়ে বাজে অবস্থান। তবে মেক্সিকান ওপেন জয়ের পর র‌্যাঙ্কিংয়ে দ্বিগুণ অগ্রগতি হয়েছে তার। মেক্সিকান ওপেনের শিরোপা জয়ের সৌজন্যে বর্তমানে র‌্যাঙ্কিংয়ের ৩১ নম্বরে ওঠে এসেছেন এই অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়। তাতে দারুণ খুশি বিশ্ব টেনিসের বহুল বিতর্কিত এই অস্ট্রেলিয়ান তারকা। তবে রজার ফেদেরারের উত্থান হয়েছিল উইম্বলডন থেকে। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার মার্ক ফিলিপোসিসকে পরাজিত করে ক্যারিয়ারের প্রথম উইম্বলডনের পাশাপাশি প্রথম গ্র্যান্ডসøাম শিরোপা জয়েরও স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি। এর আগে কোন মেজর টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালের বেশি খেলতে পারেননি। ওই বছরের শুরুতে সাবেক কোচ পিটার কার্টার দক্ষিণ আফ্রিকায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ায় শিরোপাটি কোচকেই উৎস্বর্গ করেছিলেন ফেদেরার। ২০০৪ সালে যুক্তরাস্ট্রের এ্যান্ডি রডিককে পরাজিত করে উইম্বলডনের শিরোপা ধরে রাখেন তিনি। এর মাধ্যমে ঘাসের কোর্টে নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান এই সুইস তারকা। ২০০৫ সালে আবারও এ্যান্ডি রডিককে পরাজিত করে শিরোপা জেতেন ফেড এক্সপ্রেস। সেইসঙ্গে পিট সাম্প্রাস ও বিওন বর্গের পরে তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে পরপর তিনটি উইম্বলডনের শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখান তিনি। আর টানা দ্বিতীয়বারের মতো এ্যান্ডি রডিককে ফাইনালে পরাস্ত হতে হয়। ২০০৬ সালে স্প্যানিশ তারকা রাফায়েল নাদালকে পরাজিত করে শিরোপা জেতেন ফেদেরার। সেই সঙ্গে ক্যারিয়ারের অষ্টম গ্র্যান্ডসøাম শিরোপা জয় করেন তিনি। ২০০৭ সালে আবারও রাফায়েল নাদালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন সুইস তারকা। তিন ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের দীর্ঘ লড়াইয়ের পর নাদালকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো পরাজিত করে শিরোপা জয় করেন ফেদেরার। সেইসঙ্গে টানা পাঁচটি উইম্বলডনের শিরোপা জয় করে রেকর্ডবুকে বিওন বর্গের পাশে নাম লেখান তিনি। ২০০৯ সালে আবারও এ্যান্ডি রডিকের বিপক্ষে জিতে চ্যাম্পিয়ন হন ফেদেরার। ক্যারিয়ারের ১৫তম গ্র্যান্ডসøাম শিরোপা নিশ্চিতের পাশাপাশি পিট সাম্প্রাস ও উইলিয়াম রেনশের পরে তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ষষ্ঠ উইম্বলডনের শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখান তিনি। ২০১২ সালে ব্রিটিশ তারকা এ্যান্ডি মারেকে পরাজিত শিরোপা জয়ের উচ্ছ্বাসে ভাসেন সুইস তারকা। এবার ক্রোয়েশিয়ার মারিন চিলিচকে পরাজিত করে রেকর্ড অষ্টম উইম্বলডন শিরোপার জিতে প্রমাণ করলেন কেন তিনি ফেদেরার! গত বছর জিতলেন ক্যারিয়ারের ২০তম গ্র্যান্ডস্লাম! পুরুষ এককে ২০টি গ্র্যান্ডস্লাম, ভাবনা নয়-বাস্তবেই তা করে দেখিয়েছেন এই ফেদেরার। ২০০২ সালে ইউএস ওপেনে ১৪টি গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের পিট সাম্প্রাস বিদায় নিলে টেনিস দুনিয়া ভেবেছিল এটাই শেষ। কেউই হয়তো সাম্প্রাসের রেকর্ড আর ভাঙতে পারবেন না। সেই পিট সাম্প্রাসও ফেদেরার ২০তম গ্র্যান্ডস্লাম জয়ে অবাক। ফেদেরার যুগের শেষ কোথায়? ২০টি গ্র্যান্ডস্ল্যাম তো হলো, এবার কি থামবেন ফেদেরার? এমন প্রশ্নে হাসিমুখেই জবাব দেন ফেদেরার, ‘ভালোই তো লাগছে। এখনও বেশ ভালই খেলছি। ফিটনেস ভাল জায়গায় আছে। তাই ভালই লাগছে।’
×