ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টি ইসলাম তারিক

মোহামেডান-রিয়াল ভাই ভাই!

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ৬ মার্চ ২০১৯

মোহামেডান-রিয়াল ভাই ভাই!

জনপ্রিয়তায় বাংলাদেশের ফুটবলের সেরা দুই ক্লাবের একটি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই ক্লাবের একটি স্পেনের রিয়াল মাদ্রিদ। অবাক করা বিষয়, এই দুই ক্লাবেরই এখন করুণ সময় যাচ্ছে। রিয়াল মাদ্রিদ বর্তমানে হ্যাটট্রিক ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়ন। সবশেষ তিন বছরই চ্যাম্পিয়ন্স লীগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। কিন্তু চলমান মৌসুমে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো দলছুট হওয়ার পর সব আসরেই খাবি খাচ্ছে গ্যালাক্টিকোরা। অন্যদিকে মোহামেডান গত প্রায় এক দশক থেকেই কোনরকমে টিকে আছে। কোটি কোটি সমর্থকপুষ্ট ক্লাবটি নামতে নামতে এখন তলানিতে অবস্থান করছে। বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের দুই ঐতিহ্যবাহী দল হচ্ছে আবাহনী লিমিটেড এবং মোহামেডান স্পোর্টিং। সত্তর দশকের মাঝমাঝি থেকে একবিংশ শতাব্দীর শুরুর আগ পর্যন্ত দু’দল সমানতালে সাফল্য পেয়েছে লীগসহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টে। কিন্তু এরপর থেকেই সাংগঠনিক অদক্ষতায় দুর্বল হয়ে সাফল্যখরায় ভুগতে থাকে মোহামেডান, আর তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী একের পর এক চোখ ধাঁধানো সাফল্য কুড়িয়ে নিতে থাকে। এখন আর ১৯ বারের লীগ শিরোপাধারী মোহামেডান জায়ান্ট নয়, বরং ‘জায়ান্ট কিলার’! ২০১৬ প্রিমিয়ার লীগে সাদা-কালোরা অল্পের জন্য অবনমিত হয়নি। সেবার তা ১২ দলের মধ্যে দশম হয়ে কোনমতে ‘প্রাণ’ রক্ষা করেছিল। চলমান লীগেও তারা যেভাবে খেলছে, তাতে করে এবারও তারা রেলিগেশনের শঙ্কায় আছে। তাদের অবস্থাটা এখন এতটাই করুণ, এখন আর তারা হারলে তাতে কোন চমক থাকে না। বরং তারা জিতলে বা ড্র করলে-পয়েন্ট পেলে সেটাই হয় বড় চমক! তবে গত সোমবার নবাগত-দুর্বল নোফেলই বরং মোহামেডানকে ১-০ গোলে হারিয়ে চমক দেখিয়েছে। নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে হোম ম্যাচে হেরে হারের লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়ে মোহামেডান। ম্যাচের ৮৬ মিনিটে পেনাল্টি থেকে জয়সূচক গোলটি করেন গিনির ফরোয়ার্ড ইসমাইল বাঙ্গুরা (১-০)। নিজেদের নবম ম্যাচে এটা মোহামেডানের ষষ্ঠ হার। মাত্র ৫ পয়েন্ট নিয়ে ১৩ দলের মধ্যে তাদের অবস্থান একাদশ। পক্ষান্তরে সমান ম্যাচে এটা নোফেলের দ্বিতীয় জয়। আট পয়েন্ট নিয়ে আগের নবম স্থানেই থেকে গেল তারা। অন্যদিকে হারতে হারতে রীতিমতো কাহিল দশা রিয়াল মাদ্রিদের। তাও আবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সিলোনার কাছে। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে মর্যাদার এল ক্লাসিকোতে টানা দ্বিতীয়বার হেরেছে গ্যালাক্টিকোরা। ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে স্প্যানিশ কোপা ডেল’রে ফুটবলের সেমিফাইনালে ৩-০ গোলে হেরে বিদায় নেয় হ্যাটট্রিক ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। এরপর ২ মার্চ রাতে আরেকটি এল ক্লাসিকোতেও হারের তেতো স্বাদ পেয়েছে সান্টিয়াগো সোলারির দল। স্প্যানিশ লা লিগার এই ম্যাচে বার্সার কাছে এবারের হার ১-০ গোলে। অবাক করা বিষয়, দুটি ম্যাচই রিয়াল হেরেছে নিজেদের মাঠ সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে। শুধু তাই নয় গত ১৫ বছরে প্রথমবারের মতো রিয়াল ঘরের মাঠে টানা তিন ম্যাচে পরাজিত হলো। এই নিয়ে দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে বার্সিলোনা গত ৮৭ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিয়ালকে টপকে ৯৬ বার জয়ের রেকর্ড গড়েছে। রিয়াল জিতেছে ৯৫ বার। অর্থাৎ ১৯৩২ সালের পর এই প্রথম রিয়ালকে পেছনে ফেলেছে বার্সা। চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে দু’দলের চারবারের মুখোমুখিতে তিনটিতেই জিতেছেন মেসি, সুয়ারেজরা। একটিতেও জয় নেই রামোস, বেনজেমাদের। অপর ম্যাচটি ড্র হয়। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে গত দেড় দশকে বার্সিলোনার সাফল্য ঈর্ষণীয়। ২০০৩ সালের আগ পর্যন্ত সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে ৭৪ ম্যাচ খেলে মাত্র ১৩টি জিতেছিল ন্যুক্যাম্পের দলটি। আর ২০০৪ সাল থেকে রিয়ালের মাঠে ২৫ ম্যাচ খেলেই ১৩টি জিতেছে বার্সা। এর ১১টিই এসেছে গত এক দশকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিনটি জয় হলো ২০০৯ সালে ৬-২, ২০১৫ সালে ৪-০ এবং ২০১৮ সালে ৩-০ গোলে জয়। দারুণ জয়ে শিরোপা ধরে রাখার পথে আরেকধাপ এগিয়ে গেছে বার্সা। ২৬ ম্যাচ শেষে ৬০ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে তারা। এক ম্যাচ কম খেলা এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ৫০ পয়েন্ট নিয়ে আছে তালিকার দুইয়ে। ৪৮ পয়েন্ট নিয়ে তিনে অবস্থান করছে পথ হারানো রিয়াল। গত বছরের নবেম্বরে সান্টিয়াগো সোলারি যখন রিয়ালের কোচের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তখন বার্সিলোনার থেকে তাদের পয়েন্টের ব্যবধান ছিল সাত। কিন্তু এরপর ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণে পয়েন্টের পার্থক্য আরও বেড়েছে। বর্তমানে বার্সার চেয়ে ১২ পয়েন্ট পিছিয়ে রিয়াল। এই অবস্থায় লা লিগার শিরোপা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন প্রায় শেষ হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে কোপা ডেল’রে থেকেও বিদায় নিয়েছে। এখন রিয়ালের সামনে মৌসুমে একমাত্র শিরোপা জয়ের সুযোগ হিসেবে আছে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ। উত্তেজনার এই ম্যাচে রিয়াল অধিনায়ক সার্জিও রামোস ও বার্সা অধিনায়ক লিওনেল মেসির মধ্যে বেশ বাকবিত-া হয়েছে। প্রথমার্ধের শেষদিকের ঘটনা। রামোস ইচ্ছে করেই তার বাঁ হাতটা দিয়ে আঘাত করেন মেসির মুখে। বার্সা অধিনায়ক তাতে মাটিতে পড়ে যান। ততক্ষণে প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার বাঁশি রেফারির। আঘাতটা বেশ জোরেই লেগেছিল বোধ হয়। ঠা-া মেজাজের মেসি রাগ হয়ে উঠে আসেন রামোসের দিকে। রামোসও দুঃখ প্রকাশ করেননি। উল্টো মাথা সামনে বাড়িয়ে দেন। দুজনের কপালে কপালে ঠুকোঠুকি শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দৌড়ে আসেন রেফারি আলেজান্দ্রো হার্নান্দেজ। ম্যাচ শেষে বার্সিলোনা কোচ আর্নেস্টো ভালভার্ডে বলেন, আমরা শুধু নিজেদের সেরাটা খেলতে চেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার লক্ষ্যও ছিল। যাতে আমরা পুরোপুরি সফল হয়েছি। রিয়াল কোচ সোলারি বলেন, কখনও কখনও কিছু বিষয় নিজেদের পক্ষে যায়, কিছু আবার একেবারেই যায় না। এল ক্লাসিকোর এই দুই ম্যাচে আমাদের সঙ্গে তাই হয়েছে।
×