ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাতিল হচ্ছে ইএক্সপি ফরম

পণ্য রফতানি পদ্ধতি সহজ হচ্ছে

প্রকাশিত: ১১:০২, ৬ মার্চ ২০১৯

পণ্য রফতানি পদ্ধতি সহজ হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ইএক্সপি ফরম আর নয়। নতুন পদ্ধতিতে এখন ঘরে বসে ফরম পূরণ করতে পারবেন রফতানিকারকরা। তবে নতুন পদ্ধতির নাম কী হবে সে বিষয়টি এখনও ঠিক হয়নি। রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিং কমাতে রফতানিকারকদের চাপে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে রফতানিকারকরা বলছেন, ব্যবসা সহজীকরণের জন্য যেসব তথ্য-উপাত্ত দিতে হয় সেগুলো কমানোর জন্যও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যবসায়ীসহ তিন পক্ষের মধ্যে এ বিষয়ে কয়েক দফায় মিটিং হয়েছে। রফতানির ক্ষেত্রে ইএক্সপি ফরম বাতিল হচ্ছে এ বিষয়ে তিনপক্ষই সম্মত হয়েছে। তবে নতুন পদ্ধতি কেমন হবে সে বিষয়ে একটি মডেল দাঁড় করাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী জুলাই মাস থেকে নতুন পদ্ধতিতে রফতানি হবে বলে জানা গেছে। তখন রফতানির ক্ষেত্রে ইএক্সপি ফরম পূরণ করতে হবে না। ইএক্সপি ফরম পূরণের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা কাগজের ফরম (হার্ডকপি) পূরণ করে নিয়ে আসার পর রফতানিকারক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে রফতানি-সংক্রান্ত ঘোষণা দেয়। এখন সেখানে রফতানিকারক সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েব পোর্টালে নির্দিষ্ট ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে রফতানি-সংক্রান্ত ঘোষণা দেবে। এরপর রফতানি পণ্য জাহাজীকরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে সংশোধন করার সুযোগও থাকবে। এখন কোন কিছু সংশোধন করতে হলে তাতে অনেক সময়ক্ষেপণ হয়। তবে পণ্য জাহাজীকরণ হয়ে যাওয়ার পর কোন ধরনের সংশোধন করার সুযোগ পাবেন না রফতানিকারকরা। সাধারণত, বাংলাদেশ থেকে যেকোন পণ্য বেসরকারীভাবে বিদেশে রফতানির ক্ষেত্রে ইএক্সপি ফরম পূরণ করা বাধ্যতামূলক। গ্রাহকের পক্ষ হয়ে সংশ্লিষ্ট অথোরাইজড ডিলার (এডি) ব্যাংক ওই ফরমের মাধ্যমে পণ্য রফতানির ঘোষণা দেয়। এদিকে রফতানিকারকদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ যে, রফতানি প্রক্রিয়ায় এখন ১৪ ধরনের নথি দিতে হয়। যা ব্যবসায়ীদের জন্য কোনভাবেই সুখকর নয়। অন্যদিকে এটি রফতানিতে দীর্ঘসূত্রিতারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে গতমাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘ইজি অব ডুয়িং বিজনেস’-এর ‘ট্রেডিং এ্যাক্রোস বর্ডার’ সূচকে কাস্টমস ও বন্দরের দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন শীর্ষক এক সভায় ব্যবসায়ীরা নথির সংখ্যা কমানোর দাবি করেন। ওই সভায় দাবি অনুযায়ী ইএক্সপি ফরম বাতিলের উদ্যোগ নেয়া হয়। ইএক্সপি ফরম বাতিল করতে তাদের বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন নিয়ন্ত্রণ নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে। এজন্য আগামী মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), রফতানি উন্নয়নব্যুরো (ইপিবি), এফবিসিসিআই, এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ইএবি), বিজিএমইএ ও বিকেএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে ইজি অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬তম। ভারত এটাতে ৭৭তম অবস্থানে আছে। আর সিঙ্গাপুর রয়েছে ২য় অবস্থানে। তবে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনই সিঙ্গাপুরের সঙ্গে তুলনা করেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে যে বাধাগুলো আছে তা পর্যায়ক্রমে না সরিয়ে একবারে সমাধান করতে গেলে লাভের পরিবর্তে উল্টো ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনলাইন মনিটরিংয়ের কারণে এখন সব ধরনের আমদানি ও রফতানির ওপর নজর রাখতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা বৈদেশিক মুদ্রা আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে কোন ধরনের অনিয়ম করতে পারে না। আবার পণ্য রফতানির ১২০ দিনের মধ্যে অর্থ দেশে না আসলে সরকার ঘোষিত রফতানি প্রণোদনাও পান না ব্যবসায়ীরা। ফলে রফতানির ক্ষেত্রে ইএক্সপি ফরম পূরণে আপত্তি করেন তারা। তবে নতুন মডেলও যেহেতু অনলাইনের আওতায় থাকবে সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা আগের চেয়ে খুব বেশি লাভবান হবেন না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এ বিষয়ে এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ইএবি) এর প্রেসিডেন্ট আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, এখন রফতানির ক্ষেত্রে শুক্র শনি মেনে ব্যাংকে গিয়ে ইএক্সপি ফরম পূরণ করতে হয়। নতুন পদ্ধতি চালু হলে রফতানিকারকদের জন্য তা অনেক সহজ হবে। ইএক্সপি ফরম বাতিল করা বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পৃথিবীর সব জায়গায় আমদানি-রফতানির মাধ্যমে অর্থ পাচারের একটি প্রবণতা আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনলাইন মনিটরিংয়ের কারণে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী সেটা করতে পারছেন না। তাই ইএক্সপি বাতিল করার জন্য দাবি করছে তারা। ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল, ইএক্সপি ফরম বাতিল করে কেবল বিল অব এক্সপোর্ট দিয়েই রফতানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব। তবে মূল বিষয় হচ্ছে বিল অব এক্সপোর্ট এমন একটি নথি যেটাতে কাস্টমস কর্তৃক রফতানি-সংক্রান্ত একটি ঘোষণা থাকে। যেখানে রফতানি-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য থাকলেও কবে নাগাদ পণ্য জাহাজীকরণ করা হবে এবং এর মূল্য কবে নাগাদ আসবে তার উল্লেখ থাকে না। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক কেবলই বিল অব এক্সপোর্টের মাধ্যমে দেশে রফতানি মূল্য প্রত্যাবাসিত হলো কি না, তা তদারকি করতে পারবে না।
×